নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যু কমছে না
শীতকাল এলেই শুরু হয় নিউমোনিয়ার প্রকোপ। ৬০ থেকে ৬৫ বছরের বেশি বয়স হলে অথবা ০৪ বছরের কমবয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় বেশি। ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে এই রোগ হয়। অল্প থেকে ক্রমশ গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে নিউমোনিয়া। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ আইসিডিডিআর,বি-র এক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে নিউমোনিয়ায় বছরে মারা যাচ্ছে প্রায় ২৪ হাজার শিশু। প্রতি ঘণ্টায় আনুমানিক দুই থেকে তিনটি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ২৪ শতাংশই হয় নিউমোনিয়ায়।
শিশু হাসপাতালের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, অক্টোবর থেকে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুরা হাসপাতালে আসছে। নভেম্বর শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশ বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানি, সর্দি-জ¦র ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে আসছেন অভিভাবকরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে শুধু বহির্বিভাগেই নয়, জরুরি বিভাগেও নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪শ থেকে ৫শ রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসছেন, যা কিছুদিন আগেও ছিল অর্ধেক। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে জীবাণুর দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধি হয় বলে এই সময়ে নিউমোনিয়ার প্রকোপে বেশি মানুষ আক্রান্ত হন।
নিউমোনিয়া মূলত তিন ধরনের। কমিউনিটি অ্যাকুয়ার্ড নিউমোনিয়া (ক্যাপ), হসপিটাল অ্যাকুয়ার্ড নিউমোনিয়া (হ্যাপ) আর ভেন্টিলেটর অ্যাকুয়ার্ড নিউমোনিয়া (ভ্যাপ)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিওপিডি, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, হাঁপানি ও অ্যালার্জির ধাত আছে যে শিশুদের, তাদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় বেশি। নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হল জ্বর। তার সঙ্গে কাশি। পাশাপাশি, শ্বাসকষ্টও থাকে। সংক্রমণ যত বাড়ে, শ্বাসকষ্টও বাড়তে থাকে। বুকে ব্যথা হতে পারে। তবে বুকের ব্যথার এই ধরন একটু আলাদা। সাধারণত, গভীর শ্বাস নেওয়ার সময়ে এই বুকের ব্যথা হবে। ফুসফুসের প্রদাহের কারণে এই ব্যথা হয়। এ ছাড়া, মাথায় যন্ত্রণা, ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়া, খাওয়ায় অনীহা, সারাক্ষণ বমি বমি ভাবও আনুষঙ্গিক লক্ষণের মধ্যে পড়ে। নিউমোনিয়ার প্রথম দিকে সাধারণ জ্বর, সর্দি এবং সঙ্গে কাশির উপসর্গই দেখা যায়। তবে কিছু দিন পর থেকেই এই উপসর্গগুলির প্রকোপ বাড়তে থাকে। দেখা যায়, জ্বর কিছুতেই কমছে না। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। কাশিও একই ভাবে বাড়ছে। বুকের ব্যথাও থাকছে।
শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রতি হাজারে প্রায় সাত দশমিক চার শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে নিউমোনিয়ায়। প্রতি বছর আনুমানিক ছয় লাখ ৭৭ হাজার শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে নতুন রোগী আনুমানিক ৪০ লাখ। গবেষণা তথ্য তুলে ধরে ড. চিশতী বলেন, বাংলাদেশের শিশুদের নিউমোনিয়ার কারণ বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে একটু আলাদা। ২০১৯ এবং ২০২১ সালে আইসিডিডিআর,বি-র গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী, গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে। শৈশবকালীন নিউমোনিয়ার নতুন কারণ হিসেবে এর আবির্ভাব হচ্ছে। এ ছাড়া শৈশবকালীন অপুষ্টি, যা নিউমোনিয়ার ঝুঁকি ১৫ গুণ বাড়িয়ে দেয়। অপুষ্টি এখনো একটি গুরুতর সমস্যা, যেখানে ৮ শতাংশ শিশু উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের।
তিনি বলেন, ঘরের ভেতরে বাতাসের গুণগত মান ভালো হলে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়। হাত ধোয়ার কারণে রোগী কমে ২১ শতাংশ। শিশুর জন্মের প্রথম ছয়মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি ১৫ শতাংশ কমে যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পালস অক্সিমিটারের প্রাপ্যতা নিউমোনিয়া রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। নিউমোনিয়ার কারণ ও আক্রান্তের পর করণীয় বিষয়ে বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, নিউমোনিয়া ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ। শুরুতে কাশি হয়, যা সাধারণত ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর থেকে শ্বাসকষ্ট এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে অল্পবয়সী, প্রবীণ এবং যাদের হৃদপি- বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে তাদের গুরুতর নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এসব ব্যক্তির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শ্বাসের গতি থেকে বোঝা যায় নিউমোনিয়া কি না। শিশুর জ¦র থাকে। নেতিয়ে যায়, খেতে পারে না। কাশতে কাশতে বমি হয়। এসব লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে শিশুর নিউমোনিয়া হতে পারে। তখন দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিউমোনিয়ায় যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি তত কমে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, পাঁচ বছরের নীচে ১৫ শতাংশ শিশুর মৃত্যুর কারণই হল নিউমোনিয়া। গত তিন বছরে এই অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
নিউমোনিয়া ফুসফুসেরই জটিল অসুখ। ফুসফুসে জল জমেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে দূষণও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ফলে সামান্য সর্দি-কাশি সারতেও সময় লাগছে অনেক দিন। চিকিৎসকরা বলছেন, আমাদের দেশে ৩০ লক্ষ শিশুর নিউমোনিয়া সিভিয়ার অর্থাৎ মারাত্মক ধরনের। প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে ৫ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ফুসফুসের এই অসুখে শিশু মৃত্যুর হার কমানোর জন্যই ভ্যাকসিনের প্রয়োজন এখন সবচেয়ে বেশি।
এফএনএস
dapoxetine for premature At that time children will become hoary headed, every pregnant female will have a miscarriage, and one will see mankind as drunken, yet they will not be drunken, but dreadful will be the Wrath of Allah