পরিষেবা খাতের শ্রমিকদের সংগঠিত ও ধর্মঘট করার অধিকার সংকোচন প্রচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে স্কপ
স্টাফ রিপোর্টার: সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়া কিংবা অত্যাবশ্যক পরিষেবার নামে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার, ধর্মঘট করার গণতান্ত্রিক অধিকার সংকোচন প্রচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছেন শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ- স্কপ। গতকাল ৬ অক্টোবর ২০২১, বুধবার, বিকাল ৪ টায়, কর্ণেল তাহের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ- স্কপ কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভা থেকে এই নিন্দা জানানো হয়।
স্কপ যুগ্ম সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন এর সভাপতিত্বে এবং স্কপের অপর যুগ্ম সমন্বয়ক কামরুল আহসান এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, রাজেকুজ্জামান রতন, সাইফুজ্জামান বাদশা, আলাউদ্দিন মিয়া, চৌধুরী আশিকুল আলম, নঈমুল আহসান জুয়েল, শামীম আরা, শাকিল আক্তার চৌধুরী, আহসান হাবিব বুলবুল, আব্দুল ওয়াহেদ, পুলক রঞ্জন ধর, ফিরোজ হোসাইন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীন ভাবে সংগঠিত হওয়া, নেতৃত্ব নির্বাচন ও দরকষাকষির অধিকার আই.এল.ও কনভেনশন, বাংলাদেশের সংবিধান বা প্রচলিত শ্রম আইন স্বীকৃত শ্রমিকদের অর্জীত গণতান্ত্রিক অধিকার। শ্রম শক্তি সরবরাহের ধারাবাহিকতা রক্ষা, স্থিতিশিল শিল্প সম্পর্ক, সামাজিক দায়িত্ব ও সমাজের ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশ প্রভৃতির গুরুত্ব অনুধাবন করানো এবং সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে শ্রমিকরা স্বাধীনভাবে সংগঠন গড়ে তোলা ও দরকষাকষির অধিকারের স্বীকৃতি আদায় করেছে। ফলে এটা প্রমাণিত যে, শ্রমিকদের প্রতিবাদের কন্ঠকে রুদ্ধ করে, তাদের অসহায়ত্বের মধ্যে ফেলে সস্তায় শ্রম লুট করার বন্দোবস্ত করার মাধ্যমে অল্পকিছু মানুষকে সম্পদশালী করা যায় কিন্তু শিল্পের স্থিতিশিল বিকাশ বা সমাজের মানবিক বিকাশ অসম্ভব।
নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা সংক্রমনের দুঃসময়ে শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদনের চাকা সচল রেখে দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ধরে রেখেছে। আর মালিকরা করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মজুরি কর্তন, বেশি বেতনের শ্রমিকদের ছাঁটাই করে কম বেতনে শ্রমিক নিয়োগ, মাতৃত্বকালিন সুবিধা কিংবা চাকরির অবসানকালিন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা প্রভৃতি বহু কৌশলে জবরদস্তি চালিয়ে সস্তায় শ্রম লুটের উৎসব চালিয়েছে। আর রাষ্ট্রিয় সংস্থাগুলি নিষ্ক্রিয় থেকে মালিকদের এই অনৈতিক কর্মকান্ডে উৎসহ যুগিয়েছে। মালিকদের যথেচ্ছা শ্রম শোষণকে বাধাহিন করতেই রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, তৈরী পোষাক শিল্পের শ্রমিকদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের একটি জোট আই.বি.সি সম্প্রতি চট্টগ্রামে সভা করতে গেলে পুলিশ পূর্ব অনুমতির অজুহাতে একাধিকবার তাদের সভাস্থলে বাধা দেয় যা শ্রমিকদের স্বাধীনভাবে সংগঠিত হওয়ার অধিকারের চর্চার ওপর সুস্পষ্ট হস্তক্ষেপ। অন্যদিকে গত ৪ অক্টোবর মন্ত্রীসভার বৈঠকে “অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন,২০২১” এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই আইনে সরকারকে তথ্যপ্রযুক্তিসহ সকল ধরনের ডিজিটাল সেবা, যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, বন্দর পরিচালনা, ডিজিটাল আর্থিক সেবাসহ বিভিন্ন সেবা কার্যক্রমকে “অত্যাবশকীয়” ঘোষণার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং “অত্যাবশকীয়” কালে শ্রমিক-কর্মচারীদের ধর্মঘট করার অধিকার হরণ করে ধর্মঘট আহবান কে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচনায় কারাদন্ডের ও চাকুরিচ্যুতির বিধান রাখা হয়েছে।
মালিকদের নিরুঙ্কুশ স্বার্থ রক্ষায় শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির কোন আন্দোলন কে দমন করতে এই আইনের অপব্যবহার হতে পারে এই আশংকা ব্যাক্ত করে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রচলিত শ্রম আইনের ১ (৪) ধারায় শ্রম আইন কার্যকর হবেনা এইরুপ শিল্প-সেবা-প্রতিষ্ঠানের তালিকা, ২১১ (৪) ধারায় সরকারের ধর্মঘট নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা, ২২৬ ধারায় শ্রম আদালত কর্তৃক ধর্মঘট নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা এবং ২৯৪ ধারায় বেআইনি ধর্মঘটের কারণে শাস্তির সুনির্দিষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও “অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন,২০২১” প্রণয়নের প্রয়োজন হচ্ছে কেন? শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অপচেষ্টা বন্ধের আহবান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় জবরদস্তি চালানোর কোন প্রচেষ্টা শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ মেনে নেবে না।
Muchas gracias. ?Como puedo iniciar sesion?