রাজনীতিসাহিত্য ও দর্শন

ব্রিটিশ থেকে বাংলাদেশ অবধি সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী লড়াইয়ের আপোসহীন নেতা মাস্টার ঈমাণ আলী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে বঙ্গদেশ তথা ভারতবর্ষ যখন উত্তাল তেমনি একটি সময়ে ১৯৩০ সালের ১ আগস্ট যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার কালীগঞ্জ থানার মল্লিকপুর গ্রামে ইমান আলী এক কবিরাজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাস্টার  ঈমাণ  আলী । তাঁর বাবা ছিলেন কবিরাজ ওয়ারেশ আলী, মা আছিয়া খাতুন। ৭ ভাইয়ের মধ্যে ইমান আলী ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ। ভাইদের মধ্যে মেঝ ভাই ছিলেন কবিরাজ খেলাফত হোসেন, অগ্রজ বেলায়েত হোসেন বৃটিশ বিরোধী রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন। তিনি তৎকালীন বৃটিশ ভারতে মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠন মুসলিম ছাত্রলীগের যশোর জেলার প্রতিষ্ঠাতা ছাত্র-নেতাদের অন্যতম ছিলেন। ইমান আলী নিজ গ্রামের মল্লিকপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ শেষে যশোর শহরে কবিরাজ খেলাফত হোসেনের বাসায় অবস্থান করে যশোর জিলা স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
তৎকালীন বঙ্গদেশের রাজধানী কলকাতার সাথে যশোরের যোগাযোগ ছিল গভীর। রাজধানী থেকে রাজনীতি তথা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ পূর্ববঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে যশোর শহর মধ্যবর্তী কেন্দ্র হিসাবে ভূমিকা পালন করে। তৎকালীন সময়ে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল রেলওয়ে। যশোরের সাথে কলকাতার রেল যোগাযোগ ছাড়াও সড়ক যোগাযোগ ছিল। এই সুবাদে যশোরে কংগ্রেস, মুসলিম লীগ এবং কমিউনিষ্ট পার্টির সংগঠনের তৎপরতা ছিল। খড়কীর পীর আবুল খায়েরের জেষ্ঠ্য পুত্র যশোর জিলা স্কুলের প্রাক্তন মেধাবী ছাত্র আবদুল হক নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের বঙ্গীয় প্রাদেশিক শাখার সভাপতি ও তার সংগঠনের প্রভাব, অগ্রজ বেলায়েত হোসেন ও তার সংগঠন মুসলিম ছাত্রলীগের প্রভাব সর্বোপরি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের জোয়ার এবং বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ইমান আলী বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। এ সময়ে স্কুল জীবনে ৭ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ইংরেজ সাহেবদের বিরুদ্ধাচারণ করায় বৃটিশ সরকারের পুলিশ দ্বারা নিগৃহীত ও নির্যাতিত হন। বৃটিশের এই দমন নীতি ইমান আলীকে সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ শক্তিকে উচ্ছেদের সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করে ও শক্তি যোগায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ও দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে নয়া উপনিবেশিক ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টির প্রক্রিয়ার সময় তিনি যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন। তে-ভাগা আন্দোলনের উত্তাল সময় যশোর (বনগাঁ) কে কেন্দ্র করে ২৪ পরগনা, নদীয়া (বৃহত্তর কুষ্টিয়াসহ), খুলনা এবং সংলগ্ন এলাকাতে কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বে বর্গা চাষীদের তে-ভাগা প্রতিষ্ঠার দাবীতে সর্বাত্মক আন্দোলন বিস্তৃতি লাভ করে। এ অবস্থায় ইমান আলী কৃষক আন্দোলন ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রভাবে প্রভাবিত হন। ’৫০ এর দর্শকের শুরুতে পাকিস্তান সিভিল সাপ্লাই বিভাগে সাব-ইন্সপেক্টর পদে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু ১৯৫২ সালে তিনি আর এ দায়িত্বে থাকতে পারেন না। এই চাকুরী হারানোর পরপরই একই বছরে তিনি পাবলিসিটি অফিসার হিসাবে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। কৃষক ও জনদরদী স্বাধীনচেতা ইমান আলী প্রগতিশীল রাজনৈতিক মনোভাব এবং সরকারী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালনে স্ব-বিরোধীতা তাঁর কর্মজীবনকে বাঁধাগ্রস্থ করে। নবীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং এর বিপরীতে কমিউনিষ্ট আন্দোলনের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় কমিউনিষ্ট বিরোধী পাকিস্তান সরকারের সর্বাত্মক তৎপরতায় ইমান আলীর মতো নবীণ সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং অভিযোগ এনে ১৯৫৪ সালে এই চাকুরী থেকে তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। সময়টা ছিল যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময়, এই নির্বাচনে কারাবন্দি কমরেড আবদুল হক কমিউনিষ্ট পার্টির একমাত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সমর্থ হয়।
ইমান আলী কর্মজীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারী চাকুরীর চেষ্টা না করে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে আত্ম-নিয়োগ করেন। গৃহশিক্ষকতা দিয়ে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। প্রথমে তিনি কারবালা এবং পরে খড়কী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এ সময় তিনি প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকুরী সরকারীকরণের আন্দোলনে অগ্রণী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অবশেষে ১৯৭০ সালে মাহমুদুর রহমান হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করে অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক হিসাবে ১৯৯০ সালের ৮ই আগস্ট শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
সরকারী চাকুরী ত্যাগের পর শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি গণমানুষের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এদেশের প্রগতিশীল কৃষক আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা হিসাবে তিনি ১৯৬০ এর দশকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাকে অগ্রসর করার ক্ষেত্রে উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের এবং সংশোধনবাদের (মস্কোপন্থী) বিরুদ্ধে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ধারাকে অগ্রসর করার প্রেক্ষিতে কমরেড আবদুল হকের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতি এবং মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাথে সংগঠিত থেকে ভূমিকা গ্রহণ করেন। এ প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সামরিক শাসক স্বৈরাচারী আয়ুব খান সরকার এবং তার প্রভু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম অগ্রসর করতে যেয়ে ১৯৬৯ সালে কেশবপুরে জনসভায় সম্প্রদায়িক শক্তি জমায়াতে ইসলামীর আক্রমণের শিকার হন।
১৯৬৯ এর গণআন্দোলনে যশোরে তার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তিনি যশোরের মাটিতে থেকে বিপ্লবী ও গণতান্ত্রিক শক্তির লড়াই ও যুদ্ধকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সৃষ্টির পর আওয়ামীলীগ ও শেখ মুজিবের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতি এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা হিসাবে শিক্ষকদের দাবী দাওয়া এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে অগ্রসর করতে ভূমিকা রাখেন। এ প্রেক্ষিতে হাইস্কুল শিক্ষকদের দাবী আদায়ের আন্দোলনে ১৯৭৫ সালে গ্রেফতার হয়ে ১ বছর কারাভোগ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পরিকল্পনায় সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ মুজিব পরিবারকে স্ববংশে হত্যা করে মার্কিনের দালাল প্রথমে খন্দকার মোস্তাকের এবং পরে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে স্বৈরাচারী সরকার আমলে বিশ্বাসঘাতক মশিউর রহমান চক্রের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে রক্ষা করা এবং ১৯৭০ সালে স্থগিত হয়ে যাওয়া পূর্ব-পাকিস্তান কৃষক সমিতি পুনরাবির্ভাব হিসাবে কৃষক সংগ্রাম সমিতি গঠনে জনাব মাহমুদুল হক মনি পীরের সাথে উদ্যোগী-অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৯ সালে ১৭ই ডিসেম্বর কৃষকনেতা মাহমুদুল হক মনি পীরের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ১৯৮০ সালের ২৪ ও ২৫ জানুয়ারী কৃষক সংগ্রাম সমিতির কালীগঞ্জ সম্মেলনে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সমন্বয়কারী নির্বাচিত হন। এ সময়ে সংশোধনবাদী তিন বিশ্ব তত্ত্বের প্রভাবে নুরুল হুদা কাদের বক্স-বিমল বিশ্বাস গং এদেশের প্রগতিশীল বিপ্লবী গণতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তিকে স্বমূলে উৎপাটিত করার আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত তিন বিশ্ব তত্ত্বের পক্ষাবলম্বন করলে এর বিরুদ্ধে বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তি ও ধারাকে রক্ষা এবং অগ্রসর করার সংগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে মাষ্টার ইমান আলী কৃষক সংগ্রাম সমিতিকে এগিয়ে নিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করেন। এ প্রেক্ষিতে ১৯৮১ সালে ৪ঠা এপ্রিল যশোরের রাজঘাটে শ্রমিক অঞ্চলে শ্রমিক শ্রেণীর অভূতপূর্ব সহযোগিতায় কৃষক সংগ্রাম সমিতির ২য় সম্মেলনে সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে ব্যর্থ করে অগ্রসর হওয়ার জন্য নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হন। এরপর ১৯৮৪ সালে বগুড়াতে, ১৯৮৭ সালে ঝিনাইদাহে, ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের পটিয়ায়, ১৯৯১ সালের ঢাকাতে যথাক্রমে অনুষ্ঠিত ৩য়, ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ সম্মেলন সমূহে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে কৃষক সংগঠন ও আন্দোলন সংগ্রাম করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
এ সময়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মরণফাঁদ ওয়াপদা বাঁধের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ডহুরীর কৃষক অভ্যূত্থান, সুফলাকাটি খাল খনন, বিল খুকশী, বিল ডাকাতিয়া ইত্যাদি কৃষক আন্দোলনসহ সর্বাত্মক কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা নেন। কৃষক আন্দোলনের পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন অগ্রসর করার ক্ষেত্রে তাঁর থাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। স্বৈরাচার বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন অগ্রসর করার ক্ষেত্রে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্রদের সমন্বিত প্রচেষ্টাকে মূর্ত সাংগঠনিক রূপ দেওয়ার জন্য ১৯৮৮ সালে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তোলায় তিনি অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৯০-৯১ এর বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক ও জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে যে প্রতিবিপ্লবী ঝড় সৃষ্টি করা হয়। সে সময়ে কৃষক সংগ্রাম সমিতির সভাপতি মোহাম্মাদ লোকমান কৃষক আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার জন্য কমঃ স্ট্যালিনের বিরোধীতার নামে বস্তা পচা ট্রটস্কিবাদী বক্তব্য তুলে ধরেন। এতে সামিল হন সাধারণ সম্পাদক জনাব মোছাব্বর আলী। লোকমান-মোছাব্বরের এই অপতৎপরতাকে ব্যর্থ করে কৃষক সংগ্রাম সমিতির অগ্রযাত্রায় বলিষ্ঠ ভূমিকা নেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এ প্রেক্ষিতে লোকমান-মোছাব্বর কে বহিস্কার করে মাষ্টার ইমান আলীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। ১৯৯৩ সালে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সম্মেলনে মাষ্টার ইমান আলী কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃষক সংগঠন কৃষক সংগ্রাম সমিতির ১৯৯৭ সালে যশোরে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সম্মেলন এবং ২০০১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় কাউন্সিলে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্বে অব্যাহত থেকে ২০০৩ সাল থেকে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় দায়িত্বে বহাল থেকে আমৃত্যু কৃষক সংগঠন ও আন্দোলনে নিয়োজিত থাকেন। কৃষক সংগ্রাম সমিতির শীর্ষ নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময়ে কৃষকের জাতীয় ইস্যু এবং বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ইস্যু সমন্বিত করে সর্বাত্মক কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা কার্যকরী করার ক্ষেত্রে কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতৃত্বে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রাজপথ-রেলপথ অবরোধের কর্মসূচী এবং শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনের সমন্বয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এ প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রতিবিপ্লবী সন্ত্রাস চাপিয়ে দিয়ে বিপ্ল¬বীসহ গণতন্ত্রিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের খুন, গুম, হত্যার লিলাক্ষেত্রে পরিণত করে। সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল সরকারের প্রতিবিপ্লবী ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অন্যতম লক্ষ্য থাকে কৃষক আন্দোলন ও তার নেতৃত্বদানকারী কৃষক সংগ্রাম সমিতি। ৮ম জাতীয় সম্মেলনে কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রে গড়ে ওঠা সামগ্রিক ও সর্বাত্মক আন্দোলনকে বেগবান করার কর্মসূচীকে ব্যর্থ করার সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল সরকারের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলার বিষয়টি সামনে থাকে। এ সময়ে মানিক লাল-রহমত সানা গং সরকার, এনজিও ও প্রতিক্রিয়াশীলদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিবিপ্লবী সন্ত্রাসী গ্যাং মৃনালের সাথে সমন্বিত হয়ে নয়া-সামন্তবাদের বক্তব্য আনার অপচেষ্টা চালায় তা মোকাবেলা করাসহ প্রতিবিপ্লবী সন্ত্রাস বিরোধী সংগ্রাম পরিচালনা করার প্রক্রিয়ায় তিনি অব্যাহত ভূমিকা রাখেন।
মাষ্টার ইমান আলীর ছাত্র জীবন থেকে শুরু হওয়া দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে অগ্রসর করার ক্ষেত্রে অবিচল থেকে ধারাবাহিক দৃঢ় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী জনতার দাবী ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবিচল থেকে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। রাজনৈতিক জীবনে সুবিধাবাদ ও আপোষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলা করার বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। শ্রমিক-কৃষক মেহনতী জনতার অকৃত্রিম বন্ধু এবং কৃষক-জনতার এই আপোষহীন নেতা আমৃত্যু ভাববাদের বিরুদ্ধে বস্তুবাদী মতাদর্শকে আঁকড়ে ধরে নিজ জীবনসহ সামগ্রিকভাবে তা প্রতিষ্ঠায় অবিচল ছিলেন।
২৬ মে ২০২১ বুধবার  প্রয়াত এই কৃষক নেতার   ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন করবে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি। সংগঠনের সাবেক সভাপতি হিসেবে  প্রয়াতের মৃত্যুবার্ষিকীতে ঐদিন সকাল ৯টায় ঝিনাইদহ জেলা কালীগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামে তাঁর সমাধীস্থলে পুষ্পমাল্য অর্পন, নিরবতা পালন ও শপথ পাঠ পূর্বক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া দেশব্যাপি স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলায় জেলায় কর্মসূচি পালিত হবে।

One thought on “ব্রিটিশ থেকে বাংলাদেশ অবধি সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী লড়াইয়ের আপোসহীন নেতা মাস্টার ঈমাণ আলী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *