ভারপ্রাপ্ত সুপারের অপসারণ দাবি;হচ্ছে না বার্ষিক পরীক্ষা
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: চলতি মাসের ২৪ তারিখ হতে ত্রিশালের সকল মাদরাসায় বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলেও ভারপ্রাপ্ত সুপারের অপসারণের দাবিতে অফিস ও শ্রেণিকক্ষে ঝুলছে তালা। ফলে শুরু হয়নি এখনো পরীক্ষা। গত আট দিন যাবত এ অচলাবস্থা থাকলেও প্রশাসন কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল নওপাড়া দাখিল মাদরাসায়।
প্রায় দুই বছর আগে উপজেলার সাখুয়া ইউনিয়নের নওপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব পান শিক্ষক মোহাম্মদ সুজাত আলী। নিয়মিত মাদ্রাসায় না আসা, দায়িত্বশীলতার সাথে কোন খোঁজ খবর না রাখা, নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, প্রতিষ্ঠানের কোন সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহন না করাসহ নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। ওই সুপারের বিরুদ্ধে অসহণীয় গরমের মধ্যে ক্লাস রুমে ফ্যান ব্যবহার করতে না দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
সব নানা অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত সুপার মোহাম্মদ সুজাত আলীর অপসারণ দাবি করে ১৮ই নভেম্বর সোমবার মাদ্রাসার অফিস ও শ্রেণিকক্ষে তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এর দেড়মাস আগেও এমন ঘটনা ঘটেছিল মাদ্রাসাটিতে। সোমবার (২৫নভেম্বর) সকালে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত সুপার মোহাম্মদ সুজাত আলীর অপসারণ দাবিতে শ্লোগান দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলাকালে বাহিরে বসে আছেন শিক্ষকরা।
স্থানীয় এলাকাবাসি জানান, মাদরাসা ভারপ্রাপ্ত সুপার নিয়মিত মাদ্রাসায় আসেন না, মাদ্রাসার কোন খোঁজ খবর নেন না, মাদ্রাসায় নিয়মিত ক্লাস হয় না, প্রতিষ্ঠানের কোন সমস্যা সমাধান করেন না এবং নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিনি।
শিক্ষার্থী অভিভাবক আনোয়ার হোসেন বলেন, অনেকদিন যাবত ভারপ্রাপ্ত সুপার নিয়ে সমস্যা চলছে। এখন সকল প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে, কিন্তু আমাদের এই নওপাড়া দাখিল মাদ্রাসায় আট দিন যাবত তালা ঝুলানো।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বর্ণা আক্তারের ভাষ্য, মাদ্রাসার কোন খোঁজ খবর রাখেন না সুপার, তিনি নিয়মিত মাদ্রাসায় আসেন না। রুটিন দেয়া হয় পরীক্ষার আগের দিন। শিক্ষার্থীরা যখন মন চায় ক্লাসে আসে, আবার যখন মন চায় ক্লাস থেকে চলে যায়, তিনি কিছুই বলেন না। এমন দায়িত্বহীন ভারপ্রাপ্ত সুপারকে অপসারণ করতে হবে।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সোনিয়া আক্তার বলেন, তিনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। মাদ্রাসায় শিক্ষার কোন সঠিক পরিবেশ নেই। ক্লাস রুমগুলোতে নেই কোন ফ্যান। ফ্যানের কথা বললে, তিনি আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। আমাদের এ ভোগান্তি যেন নতুনদের ঘাড়ে না চাপে, তাই আন্দোলনের মাধ্যমে তার অপসারণ দাবি করছি।
ফাহাদ নামে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, অন্যান্য মাদ্রাসায় বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আমাদের মাদ্রাসায় আন্দোলন কেন ? আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ আট দিন যাবত মাদ্রাসায় তালা ঝুলছে। আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম, এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাইনি।
সহকারী মৌলভী আশরাফ উদ্দিন বলেন, ১৮ই নভেম্বর থেকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের অপসরণের দাবিতে অফিস ও ক্লাসরুমে তালা ঝুলছে। শিক্ষার্থীদের কে বুঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু শিক্ষার্থীরা মানছে না। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কোন লোকও আসে নাই এবং সুপারের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি। নিরুপায় হয়ে আমরা প্রতিষ্ঠানে এসে বাইরেই বসে থাকি।
অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত সুপার মোহাম্মদ সুজাত আলী বলেন, মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্ধকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের উষ্কানি দিচ্ছে একটি মহল।
উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুয়েল আহমেদ জানান, সোমবার সন্ধ্যায় মাদ্রাসার সুপার এই বিষয়টি আমাকে অবগত করেন। মঙ্গলবার (আজ) মাদ্রাসায় গিয়ে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।