ময়মনসিংহে জাতীয় ছাত্রদলের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
Staff Reorter: জাতীয় ছাত্রদলের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গতকাল ২৩ আগস্ট বিকাল ৫টায় ময়মনসিংহে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ছাত্রদলের জেলা কমিটির উদ্যোগে পাটগুদাম র্যালীর মোড়ে সংগঠনের জেলা কার্যালয়ে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা আহবায়ক সুমাইয়া আক্তার শাপলা এবং সঞ্চালনা করেন যুগ্ম আহবায়ক রবিন মিয়া।
অতিথি হিসেবে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেলা সভাপতি মাহতাব হোসেন আরজু, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি এডভোকেট হারুন-অর-রশিদ, সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বাবলী আকন্দ, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের নেতা রবিদাস । এছাড়াও ছাত্রনেতা সালমা আক্তার , আফসানা বেগম ও মশিউর রহমান দ্বীপ বক্তব্য রাখেন।
নেতৃবৃন্দ তাদের আলোচনায় বলেন, ১৯৬৭ সালে বিশ^ব্যাপী প্রগতিশীল রাজনীতির এক ঐতিহাসিক বিতর্কে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে একটি গ্রুপ ১৯৬৯ সালে শ্রমিক কৃষক মেহনতি জনতার সাথে একাত্ম হয়ে গ্রামে-গঞ্জে, কলে-কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। অন্যটি উগ্র-জাতীয়তাবাদী শ্লোগানের জোয়ারে ভেসে যায়। পরবর্তীতে সেটির বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নামকরণ ঘটে। এর বাইরেও ক্রিয়াশীল থাকে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন নামে দুটি ছাত্র সংগঠন। এর মধ্যে জাসদ ছাত্রলীগসহ ছাত্রলীগের দুটি অংশ ও ছাত্র ইউনিয়ন তখন আওয়ামী সরকারের রাজনৈতিক অনুকূলে। ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ (মুজিববাদ) মিলে এক সংগঠন হয়ে যাওয়ার উপক্রম তখন। অথচ রুশ সামাজিক সা¤্রাজ্যবাদ ও তার দালাল ভারতের মদদে এ দেশের জোতদার-মুৎসুদ্দি শ্রেণীর প্রতিভূ হিসাবে মুজিব সরকার নিপীড়িত শ্রেণীর উপর চালায় জুলুম নির্যাতন। উগ্র-বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের জোয়ার সৃষ্টি করে ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা সমূহের অধিকার বিলোপ করা সহ প্রগতিশীল রাজনীতিকে স্তব্ধ করার ভূমিকা গ্রহণ করে। এই ঐতিহাসিক বাস্তবতায় জরুরি হয়ে দাঁড়ায় চলমান এ অবস্থার বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা।
মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ‘ন্যাপ’ জাতীয় অঙ্গণে শাসক গোষ্ঠীর স্বরুপ উন্মোচন করে। মুজিব সরকারের নির্যাতন ও তা প্রতিরোধ করার ভূমিকা রাখার প্রেক্ষাপটে ছাত্র অঙ্গণে বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ছাত্রগ্রুপ ও সাধারণ ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধভাবে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালের ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে গঠণ করা হয় বিপ্লবী ধারার ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রদল। জাতীয় ছাত্রদল তার মূল রাজনৈতিক বক্তব্য হিসাবে সামনে নিয়ে আসে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
১৯৭৩ সালে জন্ম লগ্ন থেকেই জাতীয় ছাত্রদলের উপর নেমে আসে জুলুম নির্যাতন। সারাদেশে এ সংগঠনের নেতা কর্মিদের উপর হত্যা নির্যাতন চালানো হতে থাকে। অনেক নেতা-কর্মি শহীদ হোন। এ ছাড়া ৭৪-এ বিশেষ ক্ষমতা আইন জারীর পর ব্যাপক গ্রেফতার নির্যাতন চালানো হয়। ৭৫-এর ২০ জানুয়ারী ‘বাকশাল’ গঠিত হলে অন্য সকল বিরোধী দলের মতো জাতীয় ছাত্রদলকেও নিষিদ্ধ করা হয়। জাতীয় ছাত্রদল ও তার রাজনীতিকে স্তব্ধ করে দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয় এবং মুজিব আমলে নিহত হাজার হাজার বামপন্থি কর্মির মধ্যে অনেকেই ছিলেন জাতীয় ছাত্রদলের সদস্য। কিন্তু জাতীয় ছাত্রদল সকল বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতিকে বিকশিত করে চলে। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনসমূহের শ্লোগান ও মূলনীতি রাজনীতি বিমূর্ত থাকলেও জাতীয় ছাত্রদলের মূলনীতিগুলো সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে রচিত। ফলে জাতীয় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গতি প্রকৃতির প্রভাব ছাত্রসংগঠনসমূহের উপর পড়লেও জাতীয় ছাত্রদল তার রাজনৈতিক অবস্থানে অটল থেকেছে। অনেকেই বিভ্রান্ত, বিচ্যুত ও সুবিধাবাদী ধারায় পতিত হয়েছে কিন্তু জাতীয় ছাত্রদল তার লক্ষ্যের দিকে অবিচল থেকেছে।