শিশুরা মানসিকভাবে বিকশিত হোক পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশিক্ষায়
কোমলমতি শিশুদের মানব প্রগতির অনিবার্য অংশীদার হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন নিরাপদ ও আনন্দময় শিক্ষার পরিবেশ। শিশুদের সামাজিক ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পরিবার এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ হতে হবে নিরাপদ। পরিবারে যে শিশুটি নির্ভয়ে নিজের কথা বলতে পারে না, সে একইভাবে বিদ্যালয়ে বা পরিবারের বাইরেও নিজের মত প্রকাশ করতে পারে না বা নির্ভয়ে কথা বলতে পারে না। শিশুর সুকুমার বৃত্তির বিকাশের জন্য পরিবার এবং বিদ্যালয়ের ভূমিকাই মূখ্য।
পরিবারই শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বড়রা যা করে শিশুরা সেটা দেখে তাই করতে চায়। সেজন্য বাবা-মা বা অভিভাবকদের নিজেদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং শিশুদের প্রতি সহনশীল ও নমনীয় হতে হবে। কোন পরিস্থিতিতেই শিশুদের গায়ে হাত তোলা যাবে না। ধৈর্য্য নিয়ে শিশুদের বুঝাতে হবে। শিশুদের কাছে বাবা-মা হবে আদর্শ।
পরিবারের পরেই শিশুদের গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষকদের। বিদ্যালয়ে শিশুরা শিক্ষার্থী হয়ে আসে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীই বিদ্যালয়ের প্রাণ। মা-বাবার পরেই দ্বিতীয় মা-বাবার দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষক। শিক্ষকরাই পারেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করতে, তার শিখনকে ফলপ্রসূ করতে, তার আত্মবিশ্বাসকে সুদৃঢ় করতে এবং সর্বোপরি তার ভিতরে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার ভিত প্রতিষ্ঠা করতে।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষকদের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এ সকল চ্যালেঞ্জ ধৈর্য্য সহকারে শিক্ষকদের মোকাবিলা করে সমস্যাসমূহের সুন্দর কার্যকরী সমাধান বের করতে হবে। প্রথমেই শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দময় ও শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তাদের মধ্য থেকে বিদ্যালয় ভীতি দূর হয়। শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বের। যেকোনো সমস্যায় নির্ভয়ে নিঃকোচে যাতে শিক্ষকের কাছে বলতে পারে সেই আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিখন-শেখানো কাজের মান উন্নয়নের সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। প্রত্যেক শিশুর ভিন্নতা ও ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা অনুযায়ী উপযোগী শিখন-শেখানো কার্যাবলি পরিচালনা করতে হবে। পাঠদান আকর্ষণীয় এবং ফলপ্রসু করতে হবে। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শ্রেণি পাঠদানের প্রতি অধিক সচেষ্ট হতে হবে। দূর্বল বা পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের প্রতি উদাসিন না থেকে শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করে তা পূরণ করার মনমানসিকতা থাকতে হবে। শিশুদের সৃজনশীলতার বিকাশে ও প্রকাশের জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এবং প্রদর্শনীর আয়োজন করে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।
শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। তাদের সুপ্ত সম্ভাবনা বিকশিত করে সুশিক্ষিত মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পরিবার এবং শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
লতা আক্তার,
সহকারী শিক্ষক, আগচারান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিহাতী, টাংগাইল।