সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি প্রত্যাখ্যান করে ২৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ ও শ্রমিক হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে ওএসকে ফেডারেশনের দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত
স্টাফ রিপোর্ট: গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে শ্রমিক হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা এবং সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি প্রত্যাখ্যান করে ২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে গতকাল ১০ নভেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন। মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন দমন করার জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুলি চালিয়ে এবং মালিকের ভাড়াটে সন্ত্রাসীবাহিনী হামলা চালিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের হত্যা করে। এই হত্যায় জড়িত পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ২৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণের দাবিতে সকল গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকরা মিছিল সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১৮ সালে নির্ধারিত ৮০০০/ টাকা মজুরি অনেক কারখানাতেই বাস্তবায়ন করা হয় নি। তার মধ্যে দ্রব্যমুল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতি, কারখানায় শ্রমিকদের উপর সীমাহীন নির্যাতন এবং নির্বাচনী ঢামাঢোলের আগে মজুরি নির্ধারণ না করে মজুরি নিয়ে বিভিন্ন টালবাহানার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জিভুত হতে থাকে। তার মধ্যে মজুরি বোর্ডে প্রথমদিকে শ্রমিক প্রতিনিধির ২০,৪০০/ টাকা এবং মালিক প্রতিনিধির ১০,৪০০/ টাকা মজুরি প্রস্তাব এবং পরবর্তীতে সাড়ে 12 হাজার টাকা মজুরি প্রস্তাব শ্রমিকদের ক্ষোভে আগুনে ঘি ঢালার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এর ফলে গার্মেন্টস শ্রমিকরা পর্যায়ক্রমে গাজীপুর, সাভার-আশুলিয়া ও ঢাকায় ব্যাপক আন্দোলন এবং সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সরকার ও মালিকরা এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনা সংঘটিত করে। সরকার ও মালিকরা শ্রমিকদের সহিংস ঘটনার পিছনে বিভিন্ন ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে শ্রমিকদের বিক্ষুব্ধ করে তোলার জন্য নিজেদের দায় এড়িয়ে যায়। মজুরি বোর্ড নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার আগেই মজুরি নির্ধারণ না করে নির্বাচনী ঢামাঢোলের মধ্যে মজুরির প্রশ্ন জিঁইয়ে রেখে সরকার ও গার্মেন্টস মালিকরাই মূলত: উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে সমাবেশে নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তৃতায় বলেন। ২০১৮ সালের পরিস্থিতি তুলে ধরে নেতৃবৃন্দ বলেন, সে সময়েও গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তায় অবরোধ, ভাংচুর করার কারণে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভাংচুর-অবরোধের অভিযোগে সরকার শ্রমিকদের উপর নির্মম দমন পীড়ন শুরু করে। এই সুযোগে গার্মেন্টস মালিকরা মাত্র ৮০০০ টাকা মজুরি নির্ধারণের সুযোগ পায়। এবারও সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করে শ্রমিকদের একটি প্রহসনমূলক মজুরি প্রদান করতে পারে বলে নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে আশংকা প্রকাশ করেন।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন,আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদ্যমান পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে। প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় টিকে থাকা ও ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে। এর পিছনে কাজ করছে একদিকে মার্কিনের নেতৃত্বে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি এবং অন্যদিকে চীন-রাশিয়া। সাথে স্বীয় স্বার্থ ও পরিকল্পনায় যুক্ত রয়েছে নয়া-ঔপনিবেশিক আধা-সামন্তবাদী প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। এরকম অবস্থায় বিদেশী পুঁজি তথা পশ্চিমা লগ্নিপুঁজির উপর নির্ভর গার্মেন্টস শিল্পে নিয়োজিত একটি বৃহৎ সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন মহল স্ব-স্ব স্বার্থে ব্যবহার করার দিক থাকছে। বিশেষ করে কিছুদিন আগে ইউএসটিআর-এর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে শ্রম পরিবেশ পরিদর্শনে এসে এবং টিকফা’র বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিরা গার্মেন্টস সেক্টরের বিভিন্ন বিষয়ে ইঙ্গিতমূলক বক্তব্য রাখে। গার্মেন্টস সেক্টরে পশ্চিমা বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর মদতপুষ্ট বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও এনজিও সংস্থা গার্মেন্টস সেক্টরে ক্রিয়াশীল রয়েছে। তারা তাদের স্বার্থ রক্ষা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যও তৎপর রয়েছে।
ঢাকা: কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১০ টায় গুলিস্তান এলাকায় বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত করে। বিক্ষোভ মিছিলের পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ফেডারেশনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিনের সভাপতিত্বে এবং ফেডরেশনের অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা তফাজ্জল হোসেন এর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত ও সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম মানিক, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান খান, ঢাকা পোশাক প্রস্তুতকারী শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আহমেদ সুজন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বেলায়েত হোসেন নয়ন, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির যুগ্ম আহবায়ক রহিমা জামাল, সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত এর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান কবির, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বেলায়েত হোসেন নয়ন এবং ফেডারেশনের গাজীপুর জেলার আহবায়ক আব্দুস শহীদ।
চট্টগ্রাম:
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে একইদিন চট্টগ্রামে মনসুরাবাদ এলাকায় বিকাল ৪টায় ফেডারেশনের উদ্যোগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ফেডারেশনের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি আব্দুল রাজ্জাকের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট এমরান হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ চট্টগ্রাম জেলার অন্যতম নেতা উমর ফারুক ও ফেডারেশনের জেলা যুগ্ম আহবায়ক শাহাদাৎ হোসেন, জামাল মিয়া ও ফেডারেশনের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির অন্যতম নেত্রী মাহমুদা আক্তারসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
গাজীপুর: বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলার উদ্যোগে গাজীপুর জেলা কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ফেডারেশনের জেলা আহবায়ক আব্দুস শহীদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন, স্টারলাইট সোয়েটার শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো: রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমসহ বিভিন্ন কারখানার নেতৃবৃন্দ।