অন্যান্য

অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে

স্টাফ রিপোর্টার ঃ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধু সরকারি ওষুধই না পাওয়া নয়,পড়তে হচ্ছে ডাঃ দেখানোর ভোগান্তিতে।অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ধীরে ধীরে অনিয়ম আর ভঙ্গুরতায় যাচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা। এ নিয়ে নির্বিকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন। অবকাঠামোগত অনেক পরিবর্তন করলেও মেলছে না সুফল। আউটডোরে রোগীর চাপ সবসময় থাকে। সেই চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে টিকিট স্বস্তিতে দেয়ার জন্য আউটডোরের প্রধান ফটকেই পুরুষের জন্য করা হয় টিকিট কাউন্টার। আর ভেতরের দিকে রাখা হয় মহিলা কাউন্টার। পুরুষ কাউন্টারের পাশেই রাখা ছোট্ট একটা গলি যেখান দিয়ে প্রবেশ করা যায় আউটডোরের ভেতরে। পুরুষের টিকিটের দীর্ঘ সারি পৌঁছে যায় রাস্তায়।

ঠিক এমনিভাবেই দীর্ঘ সারি হয় মহিলা কাউন্টারেও। সেই সকাল হতে দাঁড়িয়ে থেকে রোগী বা রোগীর স্বজনরা দীর্ঘ লাইন শেষে টিকিট সংগ্রহ করে যখন ডাঃ দেখানোর রুমগুলোর সামনে যান,সেখানেও দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকতে হয়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ডাঃ দেখাতে সাধারণ মানুষের তেমন সমস্যা নেই যদি ডাঃ নিয়মমাফিক রোগী দেখে থাকেন। তাছাড়া ডাক্তারদের রুমের সামনে থাকা কর্মরত গার্ড সে পরিস্থিতি বুঝে উৎকোচের মাধ্যমে রোগী প্রবেশ করিয়ে দেয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়।

টিকিট কাউন্টারের দীর্ঘ লাইন শেষে করিমন (৪৫) ডাক্তারের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। দীর্ঘ প্রায় ঘন্টাখানেক একই লাইনের একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকেন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীদের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। লাইন এখান থেকে আর এগোয় না কেন? খোঁজ নিয়ে জানা যায় একপাশে ডাক্তার ছুটিতে আছেন, আরেকপাশে ডাক্তার নাস্তা করছেন। একটি রুমের ভেতর থেকে মেডিকেলের দুজন স্টাফ বের হয়ে যান যারা দীর্ঘক্ষণ ডাক্তারের সাথে কথা বলছিলেন। আর বাইরে রোগীরা অপেক্ষায় থাকে। ডাক্তারদের নাস্তার সময় ঠিক কয়টায় সে বিষয়েও সাধারণ মানুষ অবগত নন। ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ভুক্তভোগীদের।

বর্তমানে হাসপাতালের ব্যবস্থা অসহনীয় পর্যায়ে যাচ্ছে বলে দাপুনিয়া থেকে আগত একজন রোগী জানান। রুমা নামের একজন রোগী গাইনি চিকিৎসকের কাছে তার ভায়া টেষ্টের জন্য যান। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন দীর্ঘক্ষণ। যখন গার্ড ভেতরে সিরিয়াল দিবেন সেখানে গার্ড টাকা চায়। উক্ত প্রতিবেদককে রুমা তা জানাতেই গার্ড সে রুমাকে আড়ালে ভেতরে নিয়ে টাকা রাখেন। রুমে বের হয়ে প্রতিবেদককে জানান ভেতরে প্রবেশ করাতে ৩০/- নিয়েছে। ঠিক এমনিভাবেই চলে উৎকোচ গ্রহন। এদিকে ডাক্তারদের ছুটির বিষয়েও সাধারণ রোগীরা অবগত নন। তারা এ পাশ থেকে ও পাশে ছুটাছুটি করেন। একজন ডাক্তারের রোগী দেখার চাপ থাকে। তার উপর বসে খোশগল্প করার সময়ই নেই। তবুও তারা বাইরে অপেক্ষামান রোগীর দীর্ঘ সারি রেখে খোশগল্পে মেতে থাকেন।

এদিকে নগরীতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। নগরীর পরিচিত মুখ আলী ইউসুফ নামের একজন স্বেচ্ছাসেবক তার আত্মীয়ের লাশের ট্রলি নিজে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন এমন একটি ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে একের পর এক অভিযোগের কথা উঠে আসছে। মেডিকেলে লাশ বহন করার ট্রলি অপর্যাপ্ত, নেই ট্রলিম্যান। যে কয়েকটি আছে সেগুলোও ব্যস্ত থাকে অন্যদিকে। ফলে যে কোন ওয়ার্ডে রোগী মারা গেলে তাকে বহন করার ট্রলি যেমন পাওয়া যায় না আবার কখনো তা পাওয়া গেলে টাকার বিনিময়ে নিতে হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে অনেক সময় মৃতদেহের আত্মীয় স্বজনদের ট্রলি বহন করতে হয়।

সরকারি ওষুধ না পাওয়া, ডাক্তারদের অবহেলা, কর্মচারীদের অনৈতিক উৎকোচ গ্রহন,প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংকটসহ নানাবিধ কারণে ময়মনসিংহ মেডিকেলের চিকিৎসা ব্যবস্থা নাজুক। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সরাসরি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন মনে করছেন নগরবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *