অন্যান্য

ই-বর্জ্য জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্যে মারাত্মক হুমকি: নতুন বিধিমালা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ঃ ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হলেও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সঠিক কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না। একদিকে ইলেকট্রিক পন্যের ব্যবহার যেমন বাড়ছে, পাশাপাশি বর্জ্য উৎপাদনও বাড়ছে। সুতরাং কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই এবং এই সংক্রান্ত বিধিমালাটি দ্রুত প্রয়োগের আয়তায় আনা আবশ্যক। ‘বাংলাদেশের টেকসই পরিবেশ ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: সমস্যা এবং সমাধান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আজ ৩০ জুন বুধবার গবেষণা সংস্থা ভয়েসেস ইন্টারেক্টিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস)এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনাটি সরাসরি ভয়েসের সিভিক সেন্টারে ও অনলাইনের মাধ্যমে ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান ড.কাজী খালিকুজ্জামান আহমদ; প্যানেলে আলোচক হিসেবে ছিলেন ইএসডিও এর সাধারন সম্পাদক ড. শাহরিয়ার হোসেন; পরিবেশ অধিদপ্তর এর পরিচালক জিয়াউল হক; প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক ইফতেখার মাহমুদ; বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারন সম্পাদক শরিফ জামিল; বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস; খ্যাতিমান সাংবাদিক সেলিম সামাদ; পেন ইন্টারনাশনাল বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল ড. সৈয়দা আইরিন জামান; সামাজিক আন্দোলনের নেতা আমিনুর রসুল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে এনজিও, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, নারীনেত্রীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগটনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ভয়েসের প্রোগ্রাম অফিসার আফতাব খান শাওন মূল বক্তব্য উপস্থাপনে বলেন,২০১৮ সালে দেশে ই-বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে মাথাপিছু ৯০০ গ্রাম। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে,যা এশিয়ার অনেক গুলো দেশের চেয়ে বেশি। ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশে বছরে ৪৬ লাখ ২০ হাজার টন মানবদেহের জন্য মারাত্বক ওই সব ই-বর্জ্য তৈরি হবে। বাংলাদেশে বছরে ১.৩৭ বিলিয়ন ডলারে ইলেকট্রিক সামগ্রি বিক্রি হয়। যার যার ৪০ শতাংশ রেফ্রিজারেটর ও ৩০ শতাংশ টেলিভিশন। তবে সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ইলেকট্রিক সামগ্রি হচ্ছে মোবাইল ফোন। এর মধ্যে মোবাইল ফোনের অর্ধেক ভোক্তা প্রায় প্রতি বছর একাধিক মোবাইল ফোন কিনে থাকে এবং একটি ফোন ফেলে দেয়।
ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালাটির যুগোপযোগিতা বাড়ানো এবং তা বাস্তবায়ন করা সময়ের দাবি। এছাড়া দেশে প্রতি বছর কী পরিমাণ ইলেকট্রনিক দ্রব্যাদি ইলেকট্রনিক বর্জ্যে রূপান্তরিত হচ্ছে, তার জন্য সরকারি উদ্যোগে গবেষনা প্রয়োজন।
পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খালিকুজ্জামান আহমদ বলেন যে, সকল মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে দেশে একটি পরিবেশবান্ধব ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি বিভাগীয় শহরে, সম্ভব হলে প্রতিটি জেলা

শহরে বিশেষ অঞ্চল গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিধিমালা বাস্তবায়নের স্বার্থে পরিবেশসম্মত ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং প্লান্ট গড়ে তোলা আবশ্যক এবং এইক্সেত্রে সরকারের যথাযথ নজর দিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর এর পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, নতুন বিধিমালা অনুযায়ী কাজ করলে এবং সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে ই-বর্জে্র ক্ষতি থেকে পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। তিনি বিধিমালা উল্লেখ করে বলেন যে ধারা ১৫ তে উল্লেখ্য, কোনো পুরাতন বা ব্যবহৃত ইলকেট্রক্যিাল এবং ইলকেট্রনকি পণ্য আমদানি করা অথবা দান, অনুদান বা অন্য কোনোভাবে গ্রহণ করা যাইবে না এবং ধারা ৯ এর ‘পুনঃপ্রক্রয়িাজাতকারীর দায়িত্ব’ এর পরিপূর্ন প্রয়োগ আমাদের পরিবেশকে ক্ষতির হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা করতে পারবে। এছাড়াও বিধিমালায় প্রস্তুতকারক, সংযোজনকারী ও বড় আমদানিকারকের ই-বর্জ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বিধিমালা বাস্তবায়নের প্রথম বছর প্রস্তুতকারক, সংযোজনকারী ও বড় আমদানিকারককে উৎপাদিত ই-বর্জ্যরে ১০ শতাংশ সংগ্রহ করতে হবে। দ্বিতীয় বছরে ২০ শতাংশ, তৃতীয় বছরে ৩০ শতাংশ, চতুর্থ বছরে ৪০ শতাংশ ও পঞ্চম বছরে ৫০ শতাংশ ই-বর্জ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
ইএসডিও এর সাধারন সম্পাদক শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ইলেকট্রনিক বর্জে্র কারণে পরিবেশের যে ক্ষতিটা হচ্ছে, তা স্থায়ী ক্ষতি এবং এর প্রভাব মারাত্মক, তাই এ-সম্পর্কিত আইনি বাধ্যবাধকতা থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। তিনি ই-বর্জ্যকে ‘স্লো পয়জন’ এর সাথে তুলনা করে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারন সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন আমাদের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে বাজেট কমেছে এবং অন্যদিকে জেলা শহরে ব্যাটারি চালিত গাড়ির পরিমাণ বাড়ছে। আমাদের দেশে যদি ই-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করা হয় তাহলে তা হতে পারে
মূল্যবান সম্পদ। বিদেশে ভালো চাহিদা থাকায় রাজধানীর অনেক ভাঙারির দোকানে আলাদা করা হচ্ছে নষ্ট ইলেক্ট্রনিক পণ্যের মূল্যবান যন্ত্রাংশ।
প্রথম আলোর পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক ইফতেখার মাহমুদ বলেন, প্রতি বছর মোট আমদানীকৃত ই-পণ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। একটু চিন্তা করলেই এর ভবিষ্যৎ বিপর্যয় ও ভয়াবহতা সম্পর্কে অনুমান করা যায়। তাই উন্নয়নশীল বাংলাদেশের পরিবেশগত ভারসাম্য ঠিক রাখতে সঠিক ও কার্যকর ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেয়া উচিত।
আলোচকগণ ই-বর্জ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, যথার্থ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, এবং ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের আহ্বান জানান। এ লক্ষ্যে ই-বর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা বলেন বক্তারা। সঠিকভাবে বিধিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আহ্বান জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *