ঐতিহাসিক ডহুরী দিবস ও শহীদ গোবিন্দ দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন
স্টাফ রিপোর্ট: গত ২২ জুলাই ২০২১ বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক ডহুরী দিবস ও শহীদ গোবিন্দ দত্তের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে কৃষক সংগ্রাম সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সকাল ১০ টায় শহীদ গোবিন্দ দত্তের সমাধি কেশবপুরের নারায়ণপুরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করা হয়। এ সময় শহীদ গোবিন্দ দত্তের স্মরণে শোক নিরবতা পালন ও শপথ পাঠ কর্মসূচিও অনুষ্ঠিত হয়। শপথ পাঠ শেষে কৃষক নেতা আশিষ কুমার গাইনের সভাপতিত্বে সমাধিস্থলে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচনা করেন যশোর জেলার বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি আশুতোষ সাহা, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সমীরণ বিশ^াস, কেশবপুর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান। এছাড়াও আলোচনা করেন বিকাশ বাবু, পরিতোষ দেবনাথ,মধুমঙ্গল বিশ^াস,মনিরুল ইসলাম বাবু প্রমুখ নেতৃবর্গ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৮৮ সালের ২২ জুলাই সংঘটিত ডহুরী আন্দোলন একটি ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর খুলনার বিল ডাকাতিয়া, বিল বুড়–লি-বিল পাথরা, বিল পাঁজিয়া আন্দোলনসহ যশোর-খুলনার অসংখ্য বিলে কৃষক আন্দোলনের মাধ্যমে ওয়াপদা বাধ উচ্ছেদ করে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালের ২৯ অক্টোবর যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার আগরহাটি-ভায়না বিলে কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতৃতে ওয়াপদার বিরুদ্ধে হাজার হাজার কৃষক-জনগণ আন্দোলন করে জোয়ার-ভাটা করে। যা ৪ বছর স্থায়ীভাবে চালু থাকায় বিল প্রায় ৫ ফুট উচু ও নদী ৩০ ফুট গভীর, ১৫০ ফুট প্রশস্ত হয়েছিল বলে ওয়াপদাই স্বীকার করে নেয়। উপরন্তু জনগণের এই অভিজ্ঞতাকে তারা প্রথম টিআরএম প্রকল্প তথা জোয়ারাধার-১ (টিবি-১) হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।
শহীদ গোবিন্দ দত্তের প্রেক্ষিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ডহুরী বিলে ১৯৮৮ সালের ২২ জুলাই’র কৃষক আন্দোলনের পটভূমিতে এই সময়ের কুখ্যাত ঘের মালিক আতিয়ার খাঁর নেতৃত্বে ঐ বিলে মাছের ঘের তৈরি করে জলাবদ্ধতা সমস্যাকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতৃত্বে জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে হাজার হাজার কৃষক বেড়ি বাধ উচ্ছেদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কৃষক-জনতা ওয়াপদা বাঁধ ও আতিয়ার খাঁ’র মাছের ঘের উচ্ছেদ করে। আতিয়ার খাঁ’র ভাড়াটে গুন্ডা বাহিনী ও খুলনার ডুমুরিয়া থেকে আনা পুলিশের সাথে কৃষক-জনতার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অবৈধভাবে আসা পুলিশের গুলিতে গোবিন্দ দত্ত ঘটনাস্থলে নিহত হন এবং গোবিন্দ সরকার ও সরোয়ার মাষ্টার মারাত্মকভাবে আহত হন। পুলিশ ও মাস্তান বাহিনীর সঙ্গে কৃষক-জনতার সংঘর্ষের ঘটনায় লাঠির আঘাতে একজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে নিহত হয়। এই ঘটনার মাঝ দিয়ে কৃষক-জনগণ ওয়াপদা বাঁধ উচ্ছেদ করে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক শত আন্দোলনকারী কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আন্দোলনকারী কৃষক-জনতার ওপর নেমে আসে নিষ্ঠুর পুলিশী নির্যাতন-নিপীড়ন। এই সুযোগে স্থানীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের সহযোগিতায় ওয়াপদা বাঁধ পুনঃনির্মাণ করা হয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ষড়যন্ত্রের ফলে কৃষক-জনতার আন্দোলনের সাফল্য ধরে রাখা যায় না। ঐ বিলে জলাবদ্ধতা আবারো স্থায়ী রূপ লাভ করে। তবে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিল বুড়–লির আন্দোলন, বিল খুকশির আন্দোলন, বিল পাথরা আন্দোলন, সুফলাকাঠি খাল কাটার আন্দোলন ইত্যাদি ছোট বড় আরও অনেক কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয় এবং প্রতিটি আন্দোলনই কৃষক-জনতার কিছু না কিছু সাফল্য বয়ে আনে। আন্দোলন-সংগ্রামের এই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ২৯ অক্টোবর আগরহাটি-ভায়না বিলে আবার কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এলাকায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ পেয়েছে। বিলের পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহের বসতবাড়ি জলাবদ্ধতা সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে। তার উপর ঘের ব্যবসায়ী হান্নান মোড়ল এই বিলে ২ হাজার ৯ শত বিঘা জমিতে মাছের ঘের তৈরি করে। সব মিলে পার্শ্ববর্তী উপরের বিলসমূহও জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে এবং দিনে দিনে এই জলাবদ্ধতা আরও সম্প্রসারিত হতে থাকে। স্থানীয় কৃষক-জনগণ জলাবদ্ধতা সমস্যার কারণে এক দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে থাকে।
সভায় নেতৃবৃন্দ জলাবদ্ধতা নিরসনে আগ্রহী সকল পক্ষ ও ভূক্তভোগী এলাকার জনগণকে ঐতিহাসিক ডহুরী কৃষক অভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা নিয়ে জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ভবদহের ২১ ও ৯ কপাটের স্লুইচগেটের মধ্যবর্তি মাটির বাঁধ উচ্ছেদসহ নিচু বিল চিহ্নিত করে এক সাথে একাধিক বিলে অবাধ জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি, এলাকার নদ-নদীগুলোর আন্তঃসংযোগ ও নদীর সাথে খাল-বিলের সংযোগ পুনঃস্থাপন এবং উজানের মিঠা পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানান।