জাতীয়রাজনীতি

কৃষকনেতা শেখ মাহমুদুল হক মনিপীরের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে কৃষকনেতা শেখ মাহমুদুল হক মনিপীরের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গত ১৭ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ৯ টায় ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানার গোপালপুরস্থ প্রয়াতের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এ সময় প্রয়াতের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট শোক নিরবতা পালন করা হয়। এরপর মণিপীরের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে সমাধিতে শপথ পাঠ করানো হয়।

সকাল ১০টায় মণিপীরের স্মরণে বলরামপুর বাজারে সংক্ষিপ্ত স্মরণ সভা করা হয়। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন। স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সহ-সভাপতি তোজাম্মেল হোসেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি ডাঃ ওলিয়ার রহমান, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা সাধারণ সম্পাদক মানবেন্দ্র দাস মিন্টু এবং ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য ও যশোর জেলা সভাপতি শাহরিয়ার আমির প্রমুখ। পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হক লিকু।

সভায় বক্তারা বলেন, মণিপীর সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী প্রগতিশীল রাজনীতি ধারণ এবং সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের কাছে আস্থাভাজন ও লড়াকু নেতা হিসাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছিলেন। এ কারণেই তিনি সরকার ও শোষকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। ১৯৭৭-৭৮ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) পুনর্গঠন এবং পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির উত্তরসূরি হিসেবে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ও নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করেন। এভাবে বাংলাদেশের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তিকে সুসংগঠিত করে অগ্রসর হওয়ার প্রক্রিয়ায় ১৯৭৯ সালে ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হলেও ফলাফল উলটে দেওয়া হয়। তিনি নয়াউপনিবেশিক-আধাসামন্ততান্ত্রিক বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি ও গণতান্ত্রিক বিপ্লব যে মূলত কৃষি বিপ্লব- ইতিহাসের সেই শিক্ষাকে কার্যকরি করার ক্ষেত্রে উদ্যোগী ও নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করেন। কৃষক সংগ্রাম সমিতির জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে সর্বাত্মক তৎপরতা চালানোর সময় ১৯৭৯ সালের ১১ ডিসেম্বর কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ফটকের সামনে তাঁর মটর সাইকেল সামরিক বাহিনীর জীপের ধাক্কায় তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে সজ্ঞা হারান এবং মারাত্মকভাবে আহত হয়ে যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মৃত্যুর ৪০ দিনে ১৯৮০ সালের ২৪ জানুয়ারি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ভূষণ হাইস্কুল মাঠে প্রায় লক্ষ কৃষকের অংশগ্রহণে কৃষক সংগ্রাম সমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষকনেতা মণিপীরের কৃষক সংগঠন গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন প্রগতিশীল নেতা-কর্মী ও কৃষক-জনতা।