গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদস্য রেণু বেগমের মৃত্যুতে শোকসভা অনুষ্ঠিত
গত ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকাল ৫.৩০টায় গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির উদ্যোগে সংগঠনের সদস্য ও একনিষ্ঠ কর্মী সংগ্রামী নারী রেণু বেগমের মৃত্যুতে আগারগাঁও ল্যাবরেটরি মেডিসিন এর সামনের চত্বরে এক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয় । শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহবায়ক জিনাত আরা এবং সঞ্চালনা করেন যুগ্ন-আহবায়ক রহিমা জামাল। সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম, বিশেষ অতিথি কৃষক সংগ্রাম সমিতির সভাপতি শাহজাহান কবির, হোটেল রেস্টুরেন্টে মিস্টি বেকারি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সিএনজি সংগঠনের আমিনুল ইসলাম, প্রয়াত রেণু বেগমের স্বামী আবুল কালাম আজাদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। শোকসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আগারগাঁও বস্তিতে বসবাসকারী শোষণ নিপীড়ন নির্যাতনের নিগড়ে পিষ্ঠ নিষ্পেষিত রেণু বেগমের পাড়াপ্রতিবেশিসহ শ্রমজীবী নারীরা। বক্তব্য রাখেন রেনু বেগমের বান্ধবী রেহানা পারভিন নিমু, প্রতিবেশী সহযোদ্ধা কর্মজীবী নারী হাজেরা ও নুরজাহান, প্রয়াতের স্বামী কালাম প্রমুখ।
সভার শুরুতে রেনু বেগমের মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবার স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান হয়। একইসাথে শোককে শক্তিতে পরিণত করে নারীর সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সমাজব্যবস্থার সামগ্রিক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে অগ্রসর করার তার অসমাপ্ত সংগ্রামী দায়িত্ব পালনে দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করা হয়।
১৯৯৭ সালে বস্তি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আন্দোলনের সময় তার সক্রিয় ভূমিকা, রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলন, বিভিন্ন সময়ে বন্যা পরবর্তী ত্রাণ কর্মকাণ্ডে তার প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ ছিলো লক্ষণীয়। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের পাশে তার দরদী ভুমিকার জন্য বস্তিবাসীর কাছে তিনি ছিলেন সুপরিচিত। উল্লেখ্য মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫০ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে টিবিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর পূর্বদিন তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। প্রচলিত প্রহসনমুলক চিকিৎসা ব্যবস্থার শিকার খেটে খাওয়া রেনু বেগম।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন,রেনু বেগমের মত শহরের শ্রমজীবী বস্তিবাসী নারীরা উদয়াস্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সাহসের সাথে জীবন-সংগ্রাম করলেও মানবেতরভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সন্তান-পরিজনের খাবার জোগান, চিকিৎসা-শিক্ষার সুযোগ ও পরিবেশসহ দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজন মেটাতে অকাল মৃত্যুবরণ করতে হয়। এটা শুধু রেণু বেগমের ক্ষেত্রেই নয় বরং শহরের বস্তিবাসী, গ্রামের গরিব কৃষাণীসহ দেশের শ্রমিক-কৃষক শ্রমজীবী-কর্মজীবী জনগণর নির্মম বাস্তবতা। এর কারণ প্রচলিত আর্থসামাজিক নয়া ঔপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী ব্যবস্থা এবং তিন শোষক সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজির নির্মম শোষণ-লুন্ঠন এবং তাদের স্বার্থরক্ষাকারী রাষ্ট্র ও সরকারের শোষণমূলক শাসন। যুগ যুগ ধরে এই তিন পাহাড়ের শোষণে পিষ্ট জনগণ মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে চললেও সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালেরা এই শোষন ব্যবস্থাকে কার্যকর করে চলেছে। এর থেকে মুক্তির জন্য প্রচলিত সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন অপরিহার্য। এর জন্য গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতিতে সংগঠিত হয়ে বৃহত্তর নারী আন্দোলন এবং নারী পুরুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান হয় ।