গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকার মজুরি চূড়ান্ত করায় ওএসকে ফেডারেশনের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ
গার্মেন্টস সেক্টরে খসড়া গেজেট প্রকাশের পর গত ২৬ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের ৭ম ও চূড়ান্ত সভায় পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরির হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে গ্রেড কমানোর নামে শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত। এ প্রেক্ষিতে আগামী ১ ডিসেম্বর সকল শিল্পাঞ্চলে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন নেতৃদ্বয়।
এক যুক্ত বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, গত ০৭/১১/২৩ খ্রি: তারিখে গার্মেন্টস শিল্প সেক্টরে নিযুক্ত সকল শ্রেণীর শ্রমিক-কর্মচারীগণের জন্য নি¤œতম মজুরি হারের খসড়া সুপারিশ, ২০২৩ নি¤œতম মজুরি বোর্ড হতে হয়। ঘোষিত সুপারিশে নিম্নতম মজুরিসহ মজুরি কাঠামোর বেশকিছু দিক অসঙ্গতিপূর্ণ প্রতীয়মান হওয়ায় তা সংশোধন করার জন্য বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে গত ২০ নভেম্বর আপত্তিসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা মজুরি বোর্ডের কাছে তুলে ধরে। কিন্তু মজুরি বোর্ড সেসব প্রস্তাবনা ও আপত্তি আমলে না নিয়ে মালিকদের স্বার্থেই সাড়ে ১২ হাজার টাকার নি¤œতম মজুরি অপরিবর্তিত রেখেছে। অথচ দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। ২০১৮ সালে গার্মেন্টস সেক্টরের মজুরির ঘোষণার সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য কয়েকগুণ বেড়েছে। এছাড়া গত ৪৬ বছরের মধ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার সবচেয়ে বড় দরপতন হয়েছে। এর ফলে আমদানি নির্ভর বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। এতে দেশের অন্যান্য গরীব শ্রমজীবি মানুষের মত গার্মেন্টস শ্রমিকদেরও প্রকৃত আয় অনেক কমে যায়। কিন্তু ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণে গার্মেন্টস মালিকদের প্রকৃত মুনাফা অনেক বেড়ে যায়। অথচ শ্রমিকদের এই ক্ষতির দিকটিসহ দেশের মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি আমলে না নিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য মাত্র সাড়ে ১২ হাজার টাকা নি¤œতম মজুরি চূড়ান্ত করা হয়।
নেতৃদ্বয় বলেন, নিম্নতম মজুরি কাঠামোতে পূর্বের ৭টি গ্রেডের স্থলে ৪টি গ্রেড করা হয়েছে। এর ফলে সিনিয়র কাটার, সিনিয়র মেকানিক, সিনিয়র ইলেকট্রিশিয়ানদের যথাক্রমে মেকানিক, চীফ মেকানিক এবং কাটিং, চীফ কাটিং পদে পদোন্নতির সুযোগ তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ শ্রমিকদের বক্তব্য ছিলো যে, শিক্ষানবীশ শেষ হওয়ার পর একজন শ্রমিককে সহকারী অপারেটর হিসেবেই বছরের পর বছর ৭ নং গ্রেডে কারখানা কর্তৃপক্ষ রেখে দেয়। এর ফলে ৬নং গ্রেডের সাধারণ অপারেটর ও ৫নং গ্রেডের জুনিয়র অপারেটরের পদ পেরিয়ে শ্রমিকরা কখনো একজন অপারেটরের পদে পদোন্নতি হতে পারে না। এ কারণে ৫ ও ৬ নং গ্রেড বাতিল করে নতুন মজুরি কাঠামো গঠন করার পক্ষে শ্রমিকরা দাবি তুলেছিলো। এর পরিবর্তে শ্রমিকদের পদোন্নতির সুযোগ বন্ধ করে দেয়া কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। এছাড়া পূর্বের ৩ নং গ্রেডের শ্রমিকদের ১নং গ্রেডে উন্নীত করলেও ১নং গ্রেডে সর্বসাকুল্যে মজুরি ছিলো যেখানে ১৮,২৫৭/ সুপারিশকৃত মজুরিতে নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১৫০৩৫/ টাকা। অর্থাৎ ১নং গ্রেডের শ্রমিকদের জন্য মজুরি কর্তন করা হয়েছে, যা প্রচলিত শ্রম আইন বিরোধী। কারণ যে সুযোগ বা অধিকার শ্রমিকদের একবার প্রদান করা হয়, পরবর্তীতে তা কর্তন করা যায় না। মজুরি বোর্ড গঠন হওয়ার আগ থেকেই গার্মেন্টস শ্রমিকরা ২৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণের দাবিতে সকল গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত করে আসছে। দ্রব্যমুল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতি, কারখানায় শ্রমিকদের
উপর সীমাহীন নির্যাতন এবং মজুরি নির্ধারণ নিয়ে টালবাহানা করার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জিভুত হতে থাকে। সরকার ও মালিকরা এই আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনা সংঘটিত করে। সরকার পুলিশ দিয়ে রাসেল হাওলাদার, ইমরান হোসেন, আঞ্জুয়ারা খাতুন ও জালালুদ্দিনকে গুলি করে হত্যাকরাসহ অসংখ্য শ্রমিককে আাহত করে। অথচ সরকার ও মালিক এ ঘটনায় নিজেদের দায় এড়িয়ে যায়। বিদেশী পুঁজি তথা পশ্চিমা লগ্নিপুঁজির উপর নির্ভর গার্মেন্টস শিল্পের ্উপর নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য নিয়ে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের একচেটিয়া লগ্নিপুঁজির প্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠছে। এ শিল্পে নিয়োজিত একটি বৃহৎ সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন মহল স্ব-স্ব স্বার্থে ব্যবহার করার দিক থাকছে। গার্মেন্টস সেক্টরে পশ্চিমা বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর মদতপুষ্ট বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও এনজিও সংস্থা গার্মেন্টস সেক্টরে ক্রিয়াশীল রয়েছে। তারা তাদের স্বার্থ রক্ষা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যও তৎপর রয়েছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ের সহিংস পরিস্থিতির দায় শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে দিয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা-মামলা, হয়রানি ও নিপীড়ন-নির্যাতন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হাজার হাজার শ্রমিকদের হয়রানি করার সংবাদ শোনা যাচ্ছে। এরকম অবস্থায় শ্রমিকদের উপর দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ দমন-পীড়নের প্রেক্ষিতে মজুরিবোর্ড কোন দায়দায়িত্ব না নিয়ে প্রহসনমূলক মজুরি চূড়ান্ত করায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনাবস্থায় শ্রমিকদের এই ক্ষোভ আন্দোলনজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এর দায়-দায়িত্ব সরকার ও মালিকদেরই বহন করতে হবে বলে বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় জানান। এ প্রেক্ষিতে আগামী ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের বিক্ষোভ কর্মসূচি সফল করার জন্য ফেডারেশনের সকল নেতাকর্মিদের প্রতি আহবান জানান নেতৃদ্বয়। (প্রেস বিজ্ঞপ্তি)
Your blog has quickly become one of my favorites. Thanks for all the hard work you put in.
Looking forward to read more. Reading more. Great blog. Really.