গার্মেন্টস সেক্টরে ১৮ দফা চুক্তি ও শ্রমিক অঙ্গণে শ্রম সংস্কার: শ্রমিকদের উপর শোষণ-নিপীড়ন অবসানের বিহিত কি হবে?
মিনহাজ উদ্দিন:
গার্মেন্টস সেক্টরে ১৮ দফা চুক্তি:
গত ২৪ সেপ্টেম্বর গার্মেন্টস সেক্টরে সরকারের উপদেষ্টাগণ, মালিক ও কিছু শ্রমিক প্রতিনিধিদের (শ্রমিক প্রতিনিধির চেয়ে বলা ভালো, নিজেরাই প্রতিনিধি হয়েছে) উপস্থিতিতে ১৮ দফা চুক্তি সম্পন্ন হয়। এ চুক্তির প্রেক্ষাপট নিয়ে সাপ্তাহিক সেবা’র বিগত সংখ্যায় বিস্তারিত লেখা প্রকাশিত হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শ্রমিকরা দাবি তুলেছিলো দীর্ঘদিন ধরে তাদের উপর কারখানা কর্তৃপক্ষ যে নিপীড়ন-নির্যাতন করে আসছিলো তার অবসান ঘটাতে হবে। বাজারদরের সাথে সঙ্গতিরেখে মজুরি পুন:নির্ধারণ করতে হবে। বিভিন্ন কারখানায় বিভিন্ন ইস্যুতে শ্রমিকরা আন্দোলন করলেও মূল দাবি ছিল কারখানার নির্যাতন বন্ধ করা এবং মজুরি পুন:নির্ধারন করা। নির্যাতনের ক্ষেত্রে একদিকে ছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অশোভন আচরণ, মানসিক চাপ এবং কর্মক্ষেত্রের অনিরাপত্তা অন্যদিকে কারখানার বাইরে ছিল মালিকের ভাড়াটে সন্ত্রাস ও মস্তান বাহিনী, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হয়রানি এবং নির্যাতন। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের দাবি ছিল শিল্পাঞ্চল থেকে সন্ত্রাস ও মস্তান উচ্ছেদ করে কারখানায় অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের সভা-সমাবেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। একই সাথে বাজারে প্রতিনিয়ত জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকরা বাজারদরের সাথে সঙ্গতিরেখে মজুরিবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে তারা ২৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণের দাবি করেছিল। শ্রমিকদের এই মৌলিক দাবির প্রেক্ষিতে সরকার, মালিক ও কতিপয় গার্মেন্টস শ্রমিক নেতৃত্ব সচিবালয়ে বসে ১৮ দফা চুক্তি করেন। উল্লেখিত বিষয় হচ্ছে এই ১৮ দফা শ্রমিকরা কোন প্রকার সভা, কনভেনশনের মাধ্যমে তা তুলে ধরেন নি। বরং চুক্তিকারকগণ শ্রমিকদের সন্তুষ্ট করার জন্য আইনস্বীকৃত কিছু বিষয় তারা চুক্তির ফিরিস্তিতে নিয়ে এসেছেন। এতে শ্রমিকদের হয়ত তারা বোঝাতে পারেন- দ্যাখো, তোমাদের জন্য অনেক কিছু চুক্তি করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যের (!) বিষয় যে, শ্রমিকরা তাদের কথা বুঝতে পারে নি এবং শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিল। হাজিরা বোনাস, প্রোডাকশন বোনাস এবং টিফিন বিল যে শ্রমিকদের ছেলে ভুলানো কথা তা শ্রমিকরা টের পেয়েছিল। ফলে চুক্তিকারক শ্রমিক নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ ১৮ দফার বান্ডিল নিয়ে কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ থামাতে গেলে শ্রমিকরা তাদের উপর চড়াও হয়। অবশ্য শ্রমিকদের রোষানল থেকে নিজেদের আত্মরক্ষা করতে এসব শ্রমিক নেতাদের তাদের দামি গাড়ি বেশ কাজে লেগেছে।
আদতে শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের উপর পূর্বে যে নিযার্তন নিপীড়ন পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল, এখনো সেই পরিস্থিতিই বিদ্যমান। বরং ১৮ দফার চুক্তির প্রেক্ষিতে ৪% ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি করে মজুরির প্রশ্নকে আড়াল করা হচ্ছে। এই ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধিতে শ্রমিকরা কত টাকা মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে? ৪ নং গ্রেডের একজন শ্রমিকের মূল মজুরি ৬,৭০০ টাকা। ৪% ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধিতে গেজেট ঘোষিত মজুরির চেয়ে ৪ নং গ্রেডের শ্রমিকের মজুরি বাড়বে মাত্র ২৬৮ টাকা। আর টোটাল ৯% ইনক্রিমেন্ট হিসেব করলে জানুয়ারি-২০২৫ খ্রি. থেকে ৪ নং গ্রেডের একজন শ্রমিকের মজুরি বাড়বে মাত্র ৬০৩ টাকা। অথচ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী নভেম্বর মাসেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১৩.৮০ শতাংশ। এরকম পরিস্থিতিতে ৪% ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির পরও শ্রমিকরা কেন আন্দোলন করছে এবং আন্দোলনের কারণে আশুলিয়ায় বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ হওয়ার প্রেক্ষাপটে কোন কোন পক্ষ এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিযুক্ত করছে। এ কারণে শ্রমিক সংগঠনগুলোও স্বত:স্ফূর্তভাবে শ্রমিকদের পক্ষে তাদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে বিভিন্ন দ্বিধা ও ভয়-ভীতিতে রয়েছে। আন্দোলনকারী শ্রমিকরা বুঝতে পারছে ৪% ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করেই মজুরি ইস্যুকে আড়াল করা হবে । তাই উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে তারা ১৫% মজুরি বৃদ্ধির দাবি করছে। একই সাথে মাসের পর মাস শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া থাকায় আইন অনুযায়ী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পূর্ববর্তী মাসের মজুরি পরিশোধ এবং বাৎসরিক অর্জিত ছুটির টাকা বছর শেষে পরিশোধ করার দাবি তুলেছে। শ্রমিকদের এসব আইনসঙ্গত এবং যৌক্তিক দাবিকে শুধু ষড়যন্ত্র হিসেবে চালিয়ে দেয়ার প্রবণতা বিগত সরকারগুলোর মধ্যেও ছিল। মালিকরা শ্রমিকদের উপর যেকোন অভিযোগ নিয়ে এসে তারা পাড় পেয়ে যাওয়ার চিরাচরিত কৌশল প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। মালিকের এই কৌশলে সরকার এবং শ্রমিক নামধারী নেতৃত্বরা আটকে যাওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ আরও বৃদ্ধি পায়। কারণ সরকার ও কথিত নেতৃবৃন্দের উপর শ্রমিকদের আস্থা হারিয়ে নিজেদের আন্দোলনকেই তারা তাদের দাবি আদায়ের একমাত্র পথ অবলম্বন মনে করছে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলার অভাবে শ্রমিকদের স্বত:স্ফূর্ত আন্দোলনে অনেক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির আশংকা রয়েছে। তাই গার্মেণ্টস সেক্টরে সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতা নিরসনে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়াকে যৌক্তিকভাবে গ্রহণ করার বিকল্প নেই। শিল্পাঞ্চল থেকে সন্ত্রাস মস্তান উচ্ছেদ করে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে চলমান অস্থিরতা নিরসন করার উদ্যোগ নেয়ার বিকল্প নেই।
শ্রমিক অঙ্গণে শ্রম সংস্কার কমিশন:
ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম চালু করেছে। অতীতের বিভিন্ন সংস্কার তৎপরতার অভিজ্ঞতায় গণমানুষের মধ্যে সংস্কার বিষয়ে একটি নেতিবাচক প্রবাহ রয়েছে। পুঁজিবাদ বিকাশের শুরুতে পুঁজির বিকাশের জন্য সামন্তীয় যুগের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে প্রথমে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু একটি পর্যায়ে সামন্তবাদকে উচ্ছেদ করা ছাড়া পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয় নি। বিংশ শতাব্দীর গোড়াপত্তনে পুঁজির বিকাশ একচেটিয়া পুঁজিবাদে পরিণত হওয়ার প্রেক্ষাপটে একদিকে বিশাল সর্বহারা শ্রমিক শ্রেণী পুঁজিবাদ উচ্ছেদের সংগ্রামে লিপ্ত হয়, অন্যদিকে পুঁজিবাদ নিজেকে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন ছলাকৌশল অবলম্বন করতে থাকে। এরই একটি প্রক্রিয়া হিসেবে যেখানে যেখানে পুঁজিবাদ গভীর সংকটে আটকা পড়েছে বা কোন অংশে পচন ধরেছে সেখানে কিছু পরিবর্তন এনে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখছে। বিশ^ একচেটিয়া পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর কাছে তাদের একচেটিয়া মুনাফা নিশ্চিত করা এবং শোষণ কার্যকর করা- এটি হচ্ছে তাদের সংস্কার কার্যক্রমের মূল বিষয়বস্তু।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইংরেজরা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা দখলের মধ্য দিয়ে এবং ১৭৬৫ সালে দেওয়ানী লাভের মাধ্যমে ভারতবর্ষে ইংরেজরা দ্বৈত শাসন চালু করে। এর ফলে ইংরেজরা খাজনা তোলা, বিচার কাজ পরিচালনা করা ও প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা করতে যেয়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রথা ও নিয়মকানুনের জন্য বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। এ কারণে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে সংস্কার কার্যক্রম চালায়। ব্রিটিশদের এই কাজে তৎকালীন ভারতবর্ষের অনেক শিক্ষিত ও গুণীজন অংশগ্রহণ করে এদেশে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তার, সতীদাহ প্রথার উচ্ছেদ, বিধবা বিবাহ চালু ইত্যাদি সংস্কার কার্যক্রম অগ্রসর করেন। অন্যদিকে একই সময়ে ব্রিটিশের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে এদেশে ফকির সন্ন্যাসী, সিপাহী, সামন্তীয় প্রতিনিধিসহ ছাত্র-যুবক-শ্রমিক-কৃষকদের সংগ্রাম অগ্রসর হতে থাকে। ব্রিটিশ বিরোধী এই সংগ্রাম দমন করতে ব্রিটিশরা অসংখ্য সংগ্রামী মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা করে। ফলে তখনো এই প্রশ্ন সামনে ছিল- ব্রিটিশদের সাথে সংস্কার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে সুসংহত করা, নাকি ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম করে ভারতবর্ষের জনগণকে মুক্ত করা এবং সাম্রাজ্যবাদ মুক্ত স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষ গড়ে তোলা? ইতিহাসে এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর রয়েছে। যারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে সুসংহত করার পক্ষে ছিল সমাজের পক্ষে তাদের অনেক সংস্কার কার্যক্রম থাকলেও তারা ইংরেজদের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, অন্যদিকে ফকির-সন্ন্যাসী, বীর বাহাদুর এবং অকুতোভয় ছাত্র-যুবক ও কৃষকরা মুক্তির সারথী হিসেবে জনগণের কাছে গৃহিত হয়েছেন।
জুলাই-আগষ্টের আন্দোলনে স্বৈরতন্ত্রের উচ্ছেদের লক্ষ্যে প্রায় সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু এদেশের সাহসী সন্ত্বানদের আত্মবলিদানের কৃতিত্ব ও সুফল দেশের জনগণ ভোগ করার আগেই তা ছিনিয়ে নেয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। অনেককেই বলতে শোনা যায়, ১৯৭১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের কাছে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে জুলাই আন্দোলনকে তারা কাজে লাগিয়েছে। আন্দোলনে আত্মাহুতি দেয়া ছাত্র-যুবকদের রক্ত শুকানোর আগেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার অতি বিশ্বস্ত দালাল প্রফেসর ইউনুসকে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে। সরকারের অন্য উপদেষ্টাগণও মূলত: এনজিও গোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বস্ত ব্যক্তি। ফলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এরকম একটি নিরংকুশ সরকার গঠন করে ১৯৭১ সালে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের যে প্যাটার্নে বাংলাদেশ গঠিত হয়েছিল তার পুরোটাই নিজেদের মত করে ঢেলে সাজাতে চায়। ১৯৭২ সালে রুশ-ভারতের পুতুল সরকার হিসেবে শেখ মুজিব সরকার যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা পাল্টিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের অনুকূলে রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে সাজাতে চায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল ক্ষমতাসীন অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ কারণে প্রয়োজন হয়ে পড়ে ব্যাপক সংস্কার। বিগত ৫৩ বছর ধরে এদেশের ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর দু:শাসনে অতিষ্ট হয়ে জনসাধারণের মধ্যে অনেকে এই সংস্কার কার্যক্রমকে স্বাগত জানালেও অচিরেই এই তথাকথিত সংস্কারবাদিতার স্বরুপ উন্মোচিত হয়ে যাচ্ছে। ন্যাটো’র প্রধান রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিলের ফেলো ড. আলী রীয়াজকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে কথিত এই সংস্কারবাদিতা সম্পর্কে সহজেই অনুমান করা যায়।
শ্রম সংষ্কার কমিশনের প্রধান করা হয়েছে বিলস্ এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে। সামাজিক সংলাপ, শোভন কর্মপরিবেশ, দরকষাকষির স্বাধীনতাসহ ট্রেড ইউনিয়নের গঠণ ও সক্ষমতা নামে এসব প্রজেক্টের গবেষণা, প্রশিক্ষণ এবং ক্যাম্পেইন করে থাকে এই প্রতিষ্ঠানটি। আইএলওসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মূলত: বিলস এ অর্থায়ন করে থাকে। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিলস্’র সাথে জাতীয় ফেডারেশনগুলো অন্তর্ভুক্ত হলেও পশ্চিমা একচেটিয়া পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর অর্থায়নে এনজিও সংস্থা হিসেবে শ্রমিক অঙ্গণে এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ ‘বিলস’ এর সাথে শুরুতে থাকলেও এটি শ্রমিক আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা এবং সাম্রাজ্যবাদী অর্থায়নে চলার কারণে পরবর্তীতে ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ এখান থেকে বের হয়ে আসে। বিপ্লবী ধারার ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলমের নামও এই সংস্কার কমিশনে আসায় শ্রমিক অঙ্গণে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে সংগঠনের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্কপের প্রতিনিধি হিসেবে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই সংস্কার কমিশনের সম্পৃক্ততা থেকে তিনি বের হয়ে আসবেন বলে ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ থেকে নিশ্চিত করা হয়। শ্রমিক আন্দোলনের পরিণতিতে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের পরিবর্তে যখন এনজিও মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের উদ্যোগে কমিশন করে সংষ্কার তৎপরতা শুরু হয়, তখন এর পরিণতি সম্পর্কে সহজেই অনুমান করা যায়। শ্রম সংষ্কার কমিশনের সুপারিশ প্রণয়নের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, ঘোষণা ও নীতিমালা, মানবাধিকার, পরিবেশ, অভিবাসন ও ব্যবসা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক দলিলাদি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি ২০৩০), এলডিসি গ্রাজুয়েশনে অনুসরণীয় বিষয়াদি এবং উন্নয়ন সহযোগী ও ক্রেতারাষ্ট্রসমূহের প্রত্যাশা ও নীতিমালা। সুপারিশের এই ভিত্তির সাথে শ্রমিকদের স্বার্থ ও অধিকার কতটুকু সম্পর্কিত তা কমিশন ঘোষিত সুপারিশ প্রণয়ণের ভিত্তি থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠে। মূলত: পশ্চিমা পুঁজির অনুকূল শিল্প পরিবেশ তৈরি ও তাদের পুঁজির নিরাপত্তার বিষয়টিই সংস্কার কমিশনে প্রাধান্য পাওয়ার দিকটি সামনে আসছে। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার মন্দা ঠেকাতে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে রক্ষায় এসডিজি’র নামে সাম্রাজ্যবাদের বিশ্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এসব সংস্কার কমিশনগুলো অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে বিশ্ব জনগণের উপর সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ও আগ্রাসন চাপিয়ে দেয়া এবং শ্রমিক শ্রেণীর উপর ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন, ব্যাপক ছাঁটাই ও বেকারত্বের কারণে যে দগদগে ঘা সৃষ্টি হয়েছে সেখানে খানিকটা মলম লাগিয়ে দেয়া ছাড়া কমিশনের বিশেষ কোন সাফল্য শ্রমিক শ্রেণী দেখতে পায় না।
(সূত্র: লেখাটি সাপ্তাহিক সেবা, রেজি: ডি/এ-৫১৮ ঢাকা।। ৪৪ বর্ষ।। সংখ্যা-০৫।। ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ সংখ্যা থেকে সংগৃহিত)