গ্যাস সংকটে সার কারখানা বন্ধের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি
প্রেস বিজ্ঞপ্তি: গ্যাস সংকটে সার কারখানা বন্ধের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির এক যুক্ত বিবৃতিতে গ্যাস–সংকটের অজুহাতে রাষ্ট্রায়াত্ব সার কারখানাগুলি বন্ধের সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত অভিহিত করে তা প্রত্যাহার করে ও অবিলম্বে চালুর জোর দাবী জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, গ্যাস–সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল রাষ্ট্রায়ত্ত চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা লিমিটেডের (সিইউএফএল)। সিইউএফএল সূত্রে জানা যায়, সচল থাকলে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন সার উৎপাদিত হওয়ার কথা। বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া এবং ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া। গ্যাসের সরবরাহ না পেয়ে ইউরিয়া উৎপাদনকারী যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (জেএফসিএল) প্রায় এক মাস ধরে সার উৎপাদন করতে পারছে না। আগামী তিন মাস কারখানাটি চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গ্যাস এবং জ্বালানির সংকটের জন্য সরকার গত সপ্তাহে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় তার ফলেই বন্ধ করে এসব সার কারখানা। অথচ সরকারের তথ্যানুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে সময় দেশের সার কোম্পানীগুলি বন্ধ করার উদ্দেশ্য কি? এতে অনেকেই আশ্চর্য ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সার বেশি দামে কিনতে বাধ্য হওয়ায় এই বছর সারের পেছনে ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে। যদিও আগের দামের বিবেচনায় এই বছর সারের ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ রয়েছে সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা। তারপরও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সরকার সার আমদানিতে ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে।
গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর সাড়ে ২৬ লক্ষ টন ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশে উৎপাদন হয় প্রায় ১০ লক্ষ টন। চাহিদার বাকিটা সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং কাতার থেকে আমদানি করা হয়। অথচ ইউরিয়া সার উৎপাদনের সমস্ত উপাদানই বাংলাদেশে রয়েছে।
টিএসপি সার প্রয়োজন হয় সাড়ে সাত লক্ষ মেট্রিক টন। কিন্তু দেশে উৎপাদন হয় এক লক্ষ মেট্রিক টন। বাকিটা মরক্কো, তিউনিশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। ডিএপি সারের প্রয়োজন হয় সাড়ে ১৬ লাখ। তার মধ্যে সাড়ে ১৫ লাখ মেট্রিক টন সার বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। চীন ও জর্ডান থেকেই মূলত এই সার আমদানি করা হয়। এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে আট লক্ষ মেট্রিক টন, যার পুরোটাই বেলারুশ, রাশিয়া, কানাডা থেকে আমদানি করা হয়। বাংলাদেশে সারের আমদানির বড় একটা অংশ আসে রাশিয়া থেকে। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে সার আমদানি নানা সমস্যার মুখে পড়েছে।