চলমান ছাত্র আন্দোলনকে দমন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলিতে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করার স্বৈরতান্ত্রিক তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন
৭৩’র অধ্যাদেশ অমান্য করে ক্ষমতাসীন স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের নির্দেশে স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা দেওয়া দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এর ফলে দেশের স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি একের পর এক বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্র-ছাত্রীদের হল খালি করার ঘোষণা দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে চলমান ছাত্র আন্দোলনকে দমন দমন ও ঢাবির হলগুলিতে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করার স্বৈরতান্ত্রিক তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছে জাতীয় ছাত্রদল। আজ (১৭ জুলাই) জাতীয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরি এক সভায় এ আহবান জানান নেতৃবৃন্দ। সংগঠনের সভাপতি তৌফিক হাসান পাপ্পু’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মধুমঙ্গল বিশ্বাসের পরিচালনায় জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন এবং কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির অন্যতম নেতা কামরুল হক লিকু, আমীর হামজা, শুভ আজাদ, জাকিয়া অর্থী, মনোয়ার হোসেন ইভানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ চলমান ছাত্র আন্দোলনকে অগ্রসর করার সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব উচ্ছেদের আহবান জানান। সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশ ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে। সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক তৎপরতার কারণে ছাত্রহত্যার ঘটনা সংঘটিত হয়। এ ঘটনায় সরকার কোন দায় না নিয়ে এবং হত্যাকারীদের এখনো গ্রেফতার না করে বরং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ঢাবির হলগুলিতে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদেরকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। সরকার মনে করছে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিলে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু শিক্ষার সমস্যা ও বেকারত্বের সমাধান এবং কোটা সংস্কারসহ শিক্ষাশেষে সকলের চাকুরির নিশ্চয়তা প্রদান করতে না পারলে কোনভাবেই ছাত্র আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। বরং ক্ষমতাসীন সাম্রাজ্যবাদের দালাল আওয়ামীলীগ স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের দমন-পীড়নের ফলে আন্দোলন সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও ছাত্র আন্দোলন ক্রমশ আরও বেগবান ও শক্তিশালী হবে। উপরন্তু ছাত্রদের এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তি তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পারে। তাই আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজকে কোন প্রকার উসকানি বা বিভ্রান্তির ফাঁদে না পড়ে তাদের শিক্ষার বৈষম্য দূরীকরণ, বেকারত্বের সমাধান এবং কোটা সংস্কারসহ শিক্ষাশেষে সকলের চাকুরির নিশ্চয়তার দাবিতে আন্দোলনকে অগ্রসর করে নিয়ে যেতে হবে। এ প্রেক্ষিতে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের সকল দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে এবং প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তির বিভিন্ন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সম্পর্কে সচেতন থেকে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সরকারের নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে জনগুরুত্বপূর্ণ এই দাবিতে একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্তের প্রত্যাশায় সরকারের উর্দ্ধতন মহলে বার বার স্মারকলিপি প্রদানসহ রাস্তায় অবস্থান করে দাবি জানিয়ে আসছিলো শিক্ষার্থীরা। অথচ প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি ন্যূনতম সহানুভূতি প্রকাশ না করে উল্টো এক সাংবাদিক সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঢালাওভাবে রাজাকার তকমা দিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতি তাচ্ছিল্য করেন। এর প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল বের করেন। পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি হুমকি প্রদর্শন করে ছাত্রলীগকে এই আন্দোলন প্রতিহত করার আহবান জানান। এর পরপরই ছাত্রলীগ ও পুলিশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর একের পর এক হামলা চালাতে থাকে। এর প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সারাদেশে আজ প্রতিবাদ সভার আহবান করলে এসব শান্তিপূর্ণ সভায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রহত্যা সংঘটিত করেছে। এ হত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে বলে নেতৃবৃন্দ জানান। এসব হত্যার সাথে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে যারা জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন জাতীয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
(প্রেসবিজ্ঞপ্তি)