জাতীয়

ছয় মাসেরও অধিক সময় ধরে উধাও ঠিকাদার

ত্রিশাল প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ ৬ মাসেরও অধিক সময় যাবত বন্ধ রয়েছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা পরিষদের কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণকাজ। এতে নষ্ট হচ্ছে রড বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসাগ্রী। ঠিকাদারের সেচ্ছাচারিতায় উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় কাজ বন্ধ থাকলেও নেই এলজিইডির কোন কার্যকরী ভূমিকা। ৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ ভবনের কাজ করছিল মেসার্স এমআই ট্রেডিং এন্ড কোং নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজ সংশ্লিষ্ট কোন প্রকার তথ্য দিতে রাজি হননি উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মুহাম্মদ শফিউল্লাহ খন্দকার।খোঁজ জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি’র) বাস্তবায়নে ত্রিশাল উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে ২০২২ সালে ১০ অক্টোবর শুরু হয় উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন ও হলরুম নির্মাণের কাজ। কমপ্লেক্সের বহুতল ভবনে থাকবে প্রশাসনিক বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরের অফিস।

নির্মাণাধীন ওই ভবনের কাজটি পান খুলনার মেসার্স এমআই ট্রেডিং এন্ড কোং নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ অনুযায়ি ওই কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২৪ সালের জুন মাসে। নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ঠিকাদারের অপারগতায় সময় বৃদ্ধি করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সময় বাড়ালেও নির্মাণ শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ না করেই গত ৬ মাসেরও অধিক সময় ধরে উধাও ঠিকাদার। বর্ধিত সময়ের পরও কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। এর আগে নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে ২০ মিলি রডের পরিবর্তে ১৬ মিলি ব্যবহারের মতো অনিয়মের সত্যতা পান তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান। ঠিকাদারের এমন কান্ডে ২০ মিলি রডের পরিবর্তে ১৬ মিলি ব্যবহার করায় নির্মিত ১২ টি আরসিসি পিলার ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন তিনি। সরেজমিন দেখা গেছে, চারতলা ভবনটির শুধু দ্বিতলের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। চারতলার মূল ভবনের পাশেই হলরুমের ছাদে দীর্ঘদিন আগে বিছানো রডগুলোতে মরিচা ধরে জং পড়ে গেছে। এতে রডের স্থায়িত্ব নষ্ট হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় সচেতন মহল। প্রকৌশলীদের মতে, যখন লোহা (রড) খোলা জায়গায় পড়ে থাকে পানি পড়ে, বাতাস যায় তখন অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেনের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, ফলে রডের স্থায়িত্ব কমে যায়। বিভিন্ন মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের ভবনের কাজ বন্ধ থাকা নিয়ে আলোচনা হলে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় থেকে একটি টীম কাজে অগ্রগতির বিষয়ে পরিদর্শন করে গেছেন। তারপর থেকে সোমবার (২৭ জানুয়ারী) থেকে দায়সারা ভাবে ৫/৬ জন্য শ্রমীক নিয়ে কাজ শুরু করিয়েছেন ঠিকাদার।

টানা ২৫ মাস ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করা ভুক্তভোগি নূর আলম জানান, বেতন বাবদ ঠিকাদারের কাছে তার তিন লক্ষাধিক টাকা এখনো পাওনা আছে। ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে যাওয়ার পর বহুবার টাকার জন্য তাকে ফোন দিয়েছি, দেই দিচ্ছি বলে মাসের পর মাস পার করেন। অনেক হয়রানির পর উপজেলা প্রশাসন, এলজিইডি’র প্রকৌশলী ও থানায় অভিযোগ করেছি। কোথাও কোন প্রতিকার পাইনি। আমি ছাড়াও অনেক শ্রমিককে কাজ শেষে বিনা বেতনে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে এই ঠিকাদারের কাছ থেকে।এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ত্রিশাল উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মুহাম্মদ শফিউল্লাহ খন্দকার কোন প্রকার তথ্য দিতে রাজি হননি। ফলে জানা যায়নি ৪০ শতাংশ কাজ করে ইতিমধ্যে কি পরিমান টাকা উত্তোলন করেছেন ঠিকাদার। তবে তিনি বলেন, নিউজ করার কোন দরকার নেই।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারী কামাল খান পাশা’র সঙ্গে কথা বলতে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী বলেন, সম্প্রতি ত্রিশালে যোগদান করে বিষয়টি আমার নজরে আসলে উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তিনি আশ্বস্ত করেছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করবেন। বিলম্ব করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।