ছুটি না পেয়ে অসুস্থ শ্রমিকের মৃত্যুতে ওএসকে শ্রমিক ফেডারশেনের তীব্র ক্ষোভ ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি
নিউজ ডেস্ক: ছুটি না দেওয়ায় অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে পড়েই শ্রমিক জাহিদুল ইসলামের মৃত্যুতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন। ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত এক বিবৃতিতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ এক জীবন আয়ের সমপরিমাণ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি করেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় উল্লেখ করেন, গাজীপুরের শ্রীপুরের সীমান্তবর্তী বাঘের বাজার এলাকার গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস কারখানায় সোমবার (৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাহিদুল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন। গত চার থেকে পাঁচদিন ধরে জাহিদুল ইসলাম শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থতার কারণে বারবার ছুটি চাইলেও কারখানার লাইন চিফ কামরুল ইসলাম প্রশাসন বিভাগ থেকে ঈদের আগে কাউকে ছুটি দেওয়া যাবে না বলে জানায়। কারখানা কর্তৃপক্ষ অসুস্থ শরীর নিয়েই জাহিদুলকে কাজ করতে বাধ্য করে। সোমবারে অসুস্থতা নিয়ে জাহিদুল ইসলাম কারখানায় কাজে যোগ দেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় অসুস্থতার জন্য পুনরায় লাইন চিফ কামরুলের কাছে ছুটি চাইলে শিপমেন্টের চাপ আছে বলে ছুটি দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। দুপুরে বিরতির পর জাহিদ কারখানায় এসে পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে আবার লাইন চিফ কামরুলের কাছে ছুটি চাইতে গেলে কামরুল জানায় মরে গেলেও ছুটি দেওয়া যাবে না। অসুস্থ শরীর নিয়েই জাহিদ উৎপাদন ফ্লোরে গিয়ে পুনরায় কাজে যোগ দেন। একপর্যায়ে তিনি কাজ করার সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফ্লোরে পড়ে যান। পরে তার সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে কারখানার মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বাইরে কোনো হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে মাওনা আলহেরা হাসপাতালে গেলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
নেতৃদ্বয় বলেন, এটা হত্যাকান্ড। এই হত্যার দায় কারখানা কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। এই হত্যার সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত ও মৃত শ্রমিকের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় আরো বলেন, পোশাক সেক্টরে কর্মপরিবেশ যে কতটা অশোভন ও অমানবিক জাহিদুলের মৃত্যু তা পরিস্কার করেছে। দেশের পোশাক কারখানার মালিকরা নির্মম শোষণের মাধ্যমে বেপরোয়া লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে । রাষ্ট্রের আইনকেও তারা তোয়াক্কা করছে না। অথচ সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি নির্বিকারভাবে তা প্রত্যক্ষ করছে । পোশাক কারখানার মালিকদের কোন প্রকার জবাবদিহিতার আওতায় সরকার আনছে না। বরঞ্চ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকারই বরং পোশাক মালিকদের তোয়াজ করে চলছে। এমনাবস্থায় পোশাক শিল্পসহ দেশের সকল শ্রমিকদের কর্মপরিবেশের নিরাপত্তাসহ পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম গড়ে তোলে শোষণহীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার বিকল্প নেই।