জাতীয়রাজনীতি

টি আর জেড গার্মেন্টস মালিকের সাথে কতিপয় নেতাদের শ্রমিক স্বার্থবিরোধী চুক্তির তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ

গত ২ জুলাই ‘২৪ গাজীপুরের গাছায় অবস্থিত টি আর জেড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লি: এর ম্যানেজমেন্টের সাথে কতিপয় গার্মেন্টস নেতাদের শ্রমিক স্বার্থবিরোধী চুক্তির তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন। অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন, গার্মেন্টস শ্রমিক গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এর সভাপতি মাসুদ রেজা, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি মাহমুদ হোসেন, বাংলাদেশের সোয়েটার গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এ এ এম ফয়েজ হোসেন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক বিপ্লব ভট্টাচার্য এক যুক্ত বিবৃতিতে এ নিন্দা ও ক্ষোভ জানান ।

নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে উল্লেখ করেন যে, বিজিএমইএ’র অন্যতম সদস্য উক্ত গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানটির মালিক। তিনি শ্রমিকদের মজুরি যথাসময়ে পরিশোধ না করে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের নিয়ে তালবাহানা করায় বেশ কয়েকবার এই কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। প্রায় ২ বছর যাবৎ কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্মরত শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন দিচ্ছেন না। কখনো কখোনো ২/৩ মাসের বেতন বকেয়া রেখে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করে। নানান অসঙ্গতির কারনে শ্রমিকরা আন্দোলন করায় বিজিএমইএ’র মধ্যস্থতায় বেশ কয়েকবার চুক্তিও সম্পন্ন হয়। শ্রমিকদের সাথে চুক্তির পরও বেআইনীভাবে অনেক শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত করা হয়। চাকুরিচ্যুতিজনিত ক্ষতিপূরণ বা বেনিফিট চাকুরিচ্যুত এসব শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রদান করা হয় নি। এতদ্বসত্ত্বেও ঈদুল ফিতরের ছুটির আগে শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করে মালিকের শিপমেন্ট তুলে দেয়। তারপরও ঈদের আগে মজুরি পরিশোধ না করে শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। ছুটি শেষে শ্রমিকরা কারখানায় যোগদান করতে গেলে, গেইটে কারখানা লে-অফের নোটিশ দেখতে পায়। শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের আংশিক, মে ও জুন মাসের মজুরি বকেয়া রেখে কারখানা লে-অফের ঘোষণায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। শ্রমিকদের বিক্ষোভের ফলে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের নিজেদের তৈরি এবং নামকাওয়াস্তে কিছু ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতে বিজিএমইএ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সাথে একটি অসম ও শ্রমিক স্বার্থবিরোধী চুক্তি সম্পন্ন করেন। চুক্তিতে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে মালিকের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। চুক্তিতে বকেয়া পূর্ণ মজুরি পরিশোধ না করে মাত্র মাসে ১৮ দিনের দিনের মজুরি পরিশোধ করার কথা বলা হয়। ১০ বছরের অধিক চাকুরি মেয়াদের শ্রমিকদের সার্ভিস বেনিফিট পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রতি বছরের জন্য ১ মাসের মূল মজুরি না দিয়ে বছরে মাত্র ১২ দিন করে হিসাব করা হয়েছে। এছাড়া নোটিশ পে, বাৎসরিক ছুটির টাকা, মাতৃত্বকালীণ ছুটির টাকা, রিজাইনজনিত বকেয়া মজুরি –এসব কোনকিছুই চুক্তিতে উল্লেখ বা হিসেব ধরা হয় নি। চুক্তি মোতাবেক এসব পাওনা আগামী ২ আগষ্ট বিজিএমইএ তে পরিশোধ করা হবে বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে মালিকপক্ষ কারখানা থেকে মালামাল সরিয়ে ফেললে শ্রমিকরা বাধা প্রদান করতে পারবেন না বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।

ভবিষ্যতে এ ধরনের শ্রমিক স্বার্থবিরোধী চুক্তি সই না করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে নেতৃবৃন্দ আনোয়ারা কম্পোজিটের কর্তৃপক্ষের দেয়া মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত সকল শ্রমিককে মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবী জানান।