প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বি-রাজনীতিকরণের অপচেষ্টা দেশের জন্য অশনিসংকেত
আজ (২৮ আগস্ট) কৃষকদের জন্য ৮ দফা দাবিতে সারাদেশে স্মারকলিপি প্রদান করে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি নামে কৃষক অঙ্গনে সুপরিচিত একটি প্রাচীন কৃষক সংগঠন । সংগঠনটির নড়াইল জেলার নেতা-কর্মীরা নড়াইল জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিতে গেলে জেলা প্রশাসক তা গ্রহণ না করে কৃষক নেতৃবৃন্দের কাছে তাদের পরিচয়পত্রের প্রমাণস্বরূপ কৃষি কার্ড দাবি করেন। একজন জেলা প্রশাসকের এহেন কর্মকান্ডে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষ্ময় প্রকাশ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
এ সংগঠনটি ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সারা দেশে কৃষক ও কৃষির সমস্যা সমাধানে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। এ সংগঠনের নেতৃত্বে ১৯৮৮ সালে গড়ে ওঠে ডহুরী আন্দোলন। ১৯৯০ সালে বিল ডাকাতিয়া আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের নিয়ে অপরিকল্পিত ঘের ও বাঁধ অপসারণ এবং ১৯৯৭ সালে যশোরের কেশবপুরে বিল আগরহাটি-ভায়নায় বাঁধ উচ্ছেদের আন্দোলনসহ বৃহত্তর হাওর অঞ্চলে ভাসান পানির ঐতিহাসিক আন্দোলন করে সংগঠনটি। গতকালও সংগঠনটি যে স্মারকলিপি দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়েছিল সেখানে বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং পাটের মূল্য নির্ধারণসহ কৃষকদের বিভিন্ন দাবি উল্লেখ ছিল বলে জানা যায়। নড়াইলের জেলা প্রশাসক দেশের কৃষি ও কৃষকদের সমস্যার কথা যদি না শুনেন তাহলে জেলা প্রশাসক হিসেবে তার কাজ কি? জেলার বিভিন্ন দপ্তরের উপর এবং জনগণের উপর শুধু প্রশাসকগিরি করা তো রাষ্টের একজন গুরুত্বপূর্ণ আমলার কাজ হতে পারে না। বরং কৃষি সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে এবং কৃষকদের অধিকারের জন্য যারা রাজনীতি করেন তাদের অপমান ও অস্বীকার করে তিনি কি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে বি-রাজনীতিকরণের কোন ইঙ্গিত দিয়েছেন- এ প্রশ্নটি রাজনৈতিক মহলে আলোচিত হচ্ছে। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই আজ বি-রাজনীতিকরণের অপতৎপরতা দৃশ্যমান । বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রকাশ্যে ঘোষণা আসছে- “ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ।” সাধারণ ছাত্রদের নামে এসব প্রচার ও ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। আসলে এর পিছনে কি সাধারণ শিক্ষার্থীরা? সাধারণ শিক্ষার্থীরা কি তাদের অধিকারের জন্য ছাত্ররাজনীতি করতে বিমুখ, নাকি প্রতিক্রিয়াশীল লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতিতে বিমুখ? ব্রিটিশ আমল থেকে উপমহাদেশে দেখা গেছে প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েই ছাত্ররা দেশের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধো, স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম করেছে। ২০২৪ সালেও স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনলো প্রত্যক্ষভাবে মাঠে থেকেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন সমন্বয়ক রাষ্ট্র পরিচালনায় উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তারা কি রাজনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করছেন না? কারণ রাষ্ট্র নিজেই তো একটি রাজনৈতিক সংস্থা। রাজনৈতিক সচেতনতা ছাড়া যেমন রাষ্ট্র চালানো যায় না, তেমনি রাষ্ট্র কার স্বার্থে পরিচালিত হবে সেটি জানার জন্যও রাজনীতি চর্চা অপরিহার্য। অথচ শাসক-শোষক গোষ্ঠী নিজেদের মসনদকে নিরাপদ রাখতে সবসময়ই ছাত্ররাজনীতিকে ভয় পেয়েছে। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্র করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে তাদের ষড়যন্ত্র কিছুটা কার্যকর হচ্ছে। এই সাফল্যে শাসক শোষক গোষ্ঠী আগামীতে শ্রমিক ও কৃষক অঙ্গণেও বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র চালাতে উৎসাহ পেতে পারে- এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। নড়াইলের জেলা প্রশাসক সেই অভিলাষেই যদি কৃষকদের স্মারকলিপি গ্রহণ না করেন তাহলে আগামির বাংলাদেশের জন্য নিশ্চয়ই এটি একটি অশনিসংকেত।