অন্যান্য

প্রায় দুই যুগ ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ: মামলা-হামলায় অসহায় পরিবারের বিচার দাবী

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

দলিল ও রেকডীয় মালিক হওয়া হওয়া সত্বেও ২০০৬ সাল থেকে একের পর এক হামলা, মামলা ও হুমকির শিকার একটি পরিবার। জবর-দখল করে জমি বেদখল, মামলা ও হামলার শিকার হওয়া যেন এ পরিবারটির এখন নিত্য দিনের সঙ্গী। এমন কর্মকান্ড থেকে রেহাই পেতে বার বার স্থানীয় মাতাব্বরদের দ্বারস্থ হয়েও সঠিক সমাধান পাননি এখনো। স্থানীয় ভাবে দেন-দরবারে আপোষ মিমাংশা হলেও যেন শেষ হয়নি দখল দারিত্ব আর হয়রানির।

এমন ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সাখুয়া ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের পশ্চিম পাড়া এলাকায়।
ভূক্তভোগীর পরিবার ও মামলা সূত্র জানায়, নওপাড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত হাসেন আলীর উত্তরাধীকার নওশের আলী, আফাজ উদ্দিন ও আঃ রহমানসহ পাঁচ মেয়ে সন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

উত্তরাধীকারসূত্রে প্রাপ্ত ও ক্রয়কৃত সম্পত্তি নিয়ে নিজেদের মাঝে কোন বিরোধ না থাকলেও একই গোষ্টির আঃ সামাদ গংরা দীর্ঘদিন যাবত মৃত হাসেন আলী গংদের জমি জবর-দখল করে একের পর এক হামলা ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন পর পর হাসেন আলীর উত্তরাধীকারদের একেকজন কে একেক সময় মারধর ও হামলার ঘটনাও গঠেছে। ২০১৭ সালের ১লা জানুয়ারী এ বিরোধকে নিষ্পত্তি করার জন্য স্থানীয় ভাবে আপোষ মিমাংশায় বসেন সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গরা। ওই বৈঠকে লিখিত ভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। কিছুদিন সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলেও অল্প কিছুদিন পর আবারও শুরু হয় পূর্বের ন্যায় হামলা আর হুমকি। মৃত হাসেন আলীর উত্তরাধীকাররা দুর্বল প্রকৃতির হওয়ায় এবং প্রতিপক্ষ আঃ সামাদ গংরা প্রভাবশালী হওয়ায় যেন ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বার বার।

মৃত হাসেন আলীর উত্তরাধীকার আঃ মোতালেব জানান, ৫২ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছে প্রতিপক্ষের সাথে। ওই সকল জমিগুলো দাদা হাসেন আলী ক্রয় করেন। যা কখনো কারো কাছে বিক্রয় করা হয়নি। ১৯৬০ সালে ইয়াকুব আলীর নিকট থেকে হাসেন আলী সাড়ে ছয় শতক জমি ক্রয় করেন, ১৯৬৩ সালে একই ব্যক্তি একই বিক্রেতার কাছ থেকে ১৩ শতক, ১৯৬৫ সালে একই বিক্রেতা হাসেন আলীর নিকট আরো ১৩ শতক ও পরবর্তিতে আরেকটি দলিলে আরো ১৩ শতক জমি বিক্রি করেন।

এ সকল জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ২০০৬ সাল থেকে একের পর এক হামলা ও হুমকির শিকার হয়েছেন বলে জানান আঃ মোতালেব। অপরদিকে হাসেন আলী গংদের ওয়ারিশগণের সাবেক ৩৭১ ও ৭৭ নং দাগে আরো ১০শতক জমি প্রায় ৮ বছর যাবত বেদখল করে রেখেছে প্রতিপক্ষ সামাদ গংরা।
এ জমি দখল কেন্দ্র করে করে সবশেষ গত ৫ আগস্ট বিকেলে প্রতিপক্ষ আঃ সামাদ গংরা হাসেন আলী গংদের বাড়ীতে হামলা ও মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ত্রিশাল থানায়। এ হামলা ও মারধরের ঘটনায় হাসেন আলী গংদের ৬জন আহত হয়। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে গুরুতর আহত সিদ্দিক ও নজরুল ইসলামকে আশংকাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। তাদের মাথায় ও মুখে গুরুতর আঘাতের চিন্থ রয়েছে। আহত অন্যরা হলো, সোহেল মিয়া (২৫), রাসেল মিয়া (২২), জহিরুল ইসলাম (২২) ও আমিরুল ইসলাম (৩৫)।

এ ঘটনায় গত ৯ আগস্ট মোসাঃ আনোয়ারা বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং-১৬।

মৃত হাসেন আলীর উত্তরাধীকার আঃ মোতালেব জানান, জমির প্রকৃত মালিকানা নির্ধারণ করে রেকডীয় কাগজপত্র। আমরা বার বার বলেছি দলিল ও কাগজপত্র অনুযায়ী যদি প্রতিপক্ষ জমির দাবিদার হয়ে থাকে তাহলে আমরা ওই জমি তাদেরকে দিয়ে দিবো। কিন্তু তারা কাগজপত্রে তোয়াক্কা না করে বার বার গায়ের জোড়ে জমি দখল করতে চায়, আর এনিয়ে হামলা ও হুমকির শিকার হয় আমরা। আঃ মোতালেব কেও দুই বার হামলা ও মারধর করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

অপরদিকে প্রতিপক্ষও হামলার অভিযোগ এনে হাসেন আলী গংদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন ত্রিশাল থানায়। প্রতিপক্ষের দায়ের করা মামলায় হাসেন আলী গংদের অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ মঞ্জুরুল হক জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের ঘটনায় উভয় পক্ষই থানায় মামলা করেছে। উভয় পক্ষের আসামীরাই আদালত থেকে প্রায় সকলে জামিন নিয়ে এসেছে। যারা জামিন নেয়নি তাদেরকে গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *