আন্তর্জাতিকজাতীয়

প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিরোধ এবং সামুদ্রিক দূষণ নিরোধ কর্মসূচি পালিত হলো

ঢাকা প্রতিনিধি: জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (টঘওউঙ) এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ও নরওয়ে সরকারের আর্থিক সহায়তায় দেশে চলমান প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিরোধ এবং সামুদ্রিক দূষণ নিরোধ কর্মসূচির ২০তম উদ্যোগটি চট্টগ্রামের সমুদ্র সৈকত গুলিয়াখালী, সীতাকুন্ডে ৩১শে ডিসেম্বর বাস্তবায়িত হলো । এই পরিছন্নতা অভিযান ও নাগরিক সচেতনতা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী পরিছন্নতা কর্মী, সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তা, ছাত্র-ছাত্রী এবং এলাকাবাসী। তারা প্রতিনিধিত্ব করেন ২০টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, যারা প্লাস্টিক বর্জ্য ও সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

ক্লিন-আপ ও সচেতনতা কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে. এম. রফিকুল ইসলাম। ইউনিডো’র ন্যাশনাল এক্সপার্ট এস. এম. আরাফাত, ইউনিডো’র ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সত্য রঞ্জন ভট্টাচার্য,পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম’এর সহকারী পরিচালক মোঃ আশরাফ উদ্দীন, উপ-পরিচালক মোঃ মুজাহিদুর রহমান, সীতাকুন্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি), সীতাকুন্ড উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল্লাহ আল-কাইউম চৌধুরীসহ বেশকিছু এনজিও কর্মকর্তা, শিক্ষক ও আমন্ত্রিত বিশিষ্ট নাগরিক এই পরিছন্নতা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন শেষে একটি মনোজ্ঞ শপথ অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। শপথ বাক্য পাঠ করেন প্রধান অতিথি সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে. এম. রফিকুল ইসলাম, ইউনিডো’র বিশেষ অতিথি এস. এম. আরাফাত, সত্য রঞ্জন ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। পরিছন্নতা অভিযানে স্বেচ্ছাসেবীরা ২,০২৫ কেজি প্লাস্টিক/পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন বর্জ্য সংগ্রহ করেন।

প্রধান অতিথির ভাষণে কে. এম. রফিকুল ইসলাম বলেন “প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার সংকোচন, পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ এবং সামুদ্রিক দূষণ পরিবেশের জন্য এত বড় একটি চ্যালেঞ্জ যা মোকাবিলা করতে হলে গোটা সমাজকে সম্পৃক্ত হতে হবে। সীতাকুন্ডে পর্যটক সমাবেশ, বিশেষ করে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের উপস্থিতির কারণে সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধ একটি অপরিহার্য পরিবেশগত দাবী।”

ইউনিডো’র ন্যাশনাল এক্সপার্ট এস. এম. আরাফাত তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার সংকোচন, পুনঃব্যবহারযোগ্য এবং পুনঃপ্রক্রিয়াযোগ্য প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার এবং বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলে আমরা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে সক্ষম হবো।”

পরিবেশ অধিদপ্তর,চট্টগ্রামের সহকারি পরিচালক মোঃ আশরাফ উদ্দীন এই পরিছন্নতা অভিযানের উদ্যোক্তা সংগঠন ও সংস্থাসমূহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার ভাষণে বলেন, “এ ধরণের উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োচিত। বিশেষ করে সীতাকুন্ডের মতো সৈকতের জন্য এটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিত। কারণ, এ ধরণের এলাকার প্রকৃতি ও সামুদ্রিক দূষণ এক ভয়াবহ পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।” অন্যান্য বক্তাদের উপস্থাপনাতেও দূষণের ভয়াবহতা প্রতিক্রিয়া ও পরিবেশগত ঝুঁকির কথা উঠে আসে এবং তারা সকলেই দূষণ প্রতিরোধে বৃহত্তর নাগরিক সচেতনতা ও সমন্বিত উদ্যোগের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এই কর্মসূচি সাফল্যের সাথে আয়োজনের জন্য সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহনকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর মধ্যে ছিলো উপজেলা যুব উন্নয়ন বিভাগ, মোহসিন ফাতেম যুব কল্যাণ ফাউন্ডেশন, সীতাকুন্ড বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, স্বপ্নীল যুব কল্যাণ, গরীবের বন্ধু আবু তাহের ফাউন্ডেশন, সীতাকুন্ড কর্মাস ফোরাম, যুব ক্রিকেট একাডেমি, গুলিয়াখালী সমাজ কল্যাণ সংঘ, মানবিক নডালিয়া ইয়ুথ ফাইন্ডেশন, বিডি-কিøন ফেনী ও বিডি-ক্লিন চট্টগ্রাম প্রভৃতি।

সীতাকুন্ডের এই পরিছন্নতা অভিযান ও নাগরিক সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে টেকসই প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার এবং সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থার যৌথ উদ্যোগে উক্ত প্রকল্পের কম্পোনেন্ট-২’এর অংশ হিসাবে, যার অভিষ্ট লক্ষ্য হলো পরিবেশ সুরক্ষায় বৃহত্তর নাগরিক সচেতনতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে তোলা। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার এবং মৎস্যজীবি লোকালয়ে অনুরূপ পরিছন্নতা অভিযানে অর্জিত সাফল্যের উপর ভিত্তি করে চলমান রয়েছে পর্যায়ক্রমে একটি প্লাস্টিকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতীজ্ঞা।