অন্যান্যজাতীয়

মফস্বল সাংবাদিকতায় চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা

নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর নাম হলো মফস্বল সাংবাদিকতা। আসলে মফস্বল সাংবাদিকরা বড্ড বোকা! তা না হলে কেন এত নিপীড়ন, নির্যাতন সহ্য করে, এত হামলা মামলার স্বীকার হয়েও এ পেশাকে আকড়ে ধরে পড়ে থাকে? মফস্বল সাংবাদিকতার বাস্তবতাগুলো বলতে হলে প্রথমেই বলতে হয়- আমাদের মফস্বল সাংবাদিকদের ওপর অবিচার অন্যায় করছেন পত্রিকার মালিকরা। মফস্বল সাংবাদিকরা অনেক সমস্যা ও বাঁধার সম্মুখীন হয়ে তাদের জীবন বাজী রেখে এলাকার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। যেখানে মফস্বল সাংবাদিকদের খবরে পত্রিকার পাতা প্রতিদিন পূর্ণ হয়ে ওঠে সেখানে দুঃখের বিষয়!
মফস্বল সাংবাদিকদের বেতনভাতা বা অর্থনৈতিকভাবে কোন মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বঞ্চিত করে রাখছে। বঞ্চিত অবস্থায় পড়ে আছে তারা। পত্রিকার পাতায় চোখ বোলালেই দেখা যায়, প্রতিদিন কোন না কোন মফস্বল সাংবাদিক লাঞ্চিত হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, রাজনীতি বিভক্তি, বৈরী মনোভাব বা বৈরী পরিবেশ পরিস্থিতির স্বীকার। অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়। চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, পরিবেশন করার পরেও দলীয় ও প্রভাবশালী মহলের হুমকির সম্মুখীন হয়। এমন বৈরী পরিবেশের মধ্য দিয়েও মফস্বল সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে। তার পরও সাংবাদিকতার দায়িত্ববোধ, নীতি থেকে বিচ্যুত হচ্ছে না তারা। অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় স্ব স্ব স্থান থেকে সত্য অনুসন্ধানে লড়াই করে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ন্ত্রণ করছে বলবো না, কিন্তু প্রভাবিত করছে। যে প্রভাব না থাকলে স্বাধীন সাংবাদিকতা আরও বিকশিত হতো। সরকার মনে করে তাদের তথ্যের উৎসগুলো হল দল। তবে দলের লোকজন কি সব সময় সত্য কথা বলে? বলতে পারে’না, লুটপাটের কারণে। তাহলে সরকারকে নেতিবাচক তথ্যটা কে দিচ্ছে? আমি বলবো মফস্বল সাংবাদিকরা। মফস্বল সাংবাদিকরা একটি মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের প্রাণ শক্তি। আর সেই মফস্বল সাংবাদিকদেরকে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ডিজিটাল এই আইন গুলো বাঁধার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদের মুক্ত থাকা দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সাংবাদিকরা মনে করেন সাইবার সিকিউরিটির প্রয়োজন আছে। তবে তার নামে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ব্যাহত করা নয়।
সাংবাদিকতা একটা মহান পেশা। সব পেশার মানুষই জনগণের সেবা করছে। কিন্তু সাংবাদিকতার মাধ্যমে দেশের মানুষকে সেবা দেওয়ার ধরনটা একটু ভিন্ন। প্রতিদিন সমাজের ঘটে যাওয়া অসংখ্য অসংগতি তুলে ধরে সমাজকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে এই মফস্বল সাংবাদিকরা। এটা মূল্যবোধ সম্পন্ন পেশা। মফস্বল সাংবাদিকদের ভিতরে একটা স্বাধীন চেতনার দৃঢ় অবস্থান আছে। বর্তমানে সেখানে একটু তার অভাব দেখা দিয়েছে। সেই সাথে নারী সংবাদকর্মীদের ক্ষেত্রে আরো কঠিন, এমন ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সাহসী মনোবল দৃঢ় প্রত্যেয় এবং অন্তর থেকে মফস্বল সাংবাদিকতা পেশাকে ভালোবেসে বিনা বেতনে, নিয়োগপত্রহীন এই বৈরী পরিবেশে সাহসীকতার সহিত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু বড় দুঃখের বিষয়! এই মফস্বল নারী সাংবাদিকদের বঞ্চিত করে রাখছে নানা সুযোগ সুবিধা থেকে।
আমরা প্রতি বছর দেখি সরকার সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্টে টাকা দেয়। কিন্তু আমি একজন মফস্বল সাংবাদিক হিসেবে বলতে চাই- আমার মত ক’জন মফস্বল সাংবাদিক সেই কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পায়? হাতে গুনা কয়েকজন মাত্র (সম্ভবত প্রতি জেলায় একজন) যেখানে প্রায় ১৫০ জন সাংবাদিক কর্মরত সেখানে মাত্র একজন। আর সকলেই বঞ্চিত। এমন মানবেতর জীবন যাপন করেও এই মহান পেশাকে অন্তরে ধারন করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে এই মফস্বল সাংবাদিকরা। পরিশেষে বলতে চাই, এই সত্যের সংগ্রামী জীবন বাজী রাখা মফস্বল সাংবাদিকদের জীবন মান উন্নয়নে ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কল্পে সরকার ও পত্রিকা মালিকদের মানবিক হ্নদয়ে বিবেচনা করা উচিত।।
(লেখক: মফস্বল সাংবাদিক রীনা হায়াৎ, কলমাকান্দা-নেত্রকোনা)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *