অন্যান্য

মমেকহা’তে এক্সরে করাতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে রোগীরা

স্টাফ রিপোর্টার ঃ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক্সরে করাতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে ভর্তিকৃত ও আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। ভোর থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকেই এক্সরে করাতে পারছে না। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রোগীর স্বজনদেরও নানাবিধ শারীরিক অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রথম দিন এক্সরে করাতে না পেরে দাঁড়াতে হচ্ছে পরেরদিনে। এভাবে তিনদিন ঘুরে ফিরে গিয়ে পরে এক্সরে করাতে হচ্ছে রোগীদের। একদিকে রোগীর চাপ বেশি অন্যদিকে জনবল সংকট, এক্সরে মেশিন অপ্রতুলতা, লজিষ্টিক সাপোর্ট কম, মেডিকেল প্রশাসনের গাফিলতিসহ নানাবিধ কারণে এ দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আউটডোরের নিচতলায় যেখানে এক্সরের টাকা জমা নেয়া হয় সেখানে দীর্ঘ দুটি লাইন। নারী ও পুরুষের সেই লাইনটি একেঁবেঁকে ফ্লোরটিতে ঠাঁই নেয়ার চেষ্টায় আছে। লাইনের সামনের সারিতে কে থাকবে সেটি নিয়ে চলছে বাকবিতণ্ডা। বাকবিতন্ডা থেকে প্রায় হাতাহাতির পর্যায় যাওয়ার অবস্থা। দীর্ঘ সারিটিতে অপেক্ষামাণ রোগীর স্বজনরা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রোগী নিজেও সারিতে অবস্থান নেয়।

কথা হয় সার্জারি বিভাগ থেকে আসা এক রোগীর স্বজনের সাথে। তিনি জানান, তিনদিন পর তিনি সারির সামনের দিকে আসতে পেরেছেন টাকা জমা দেয়ার জন্য। কেন এমন! তা জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভের সহিত বলেন, তিনি ভোরে এসেও দেখেন আগে থেকেই দীর্ঘ লাইনের সারি। তিনি দাঁড়ানোর পরে তার সারি কাউন্টারের কাছাকাছি আসতে দুপুর ১২ টা বেজে যায়। ফলে সে সময় কাউন্টার বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে বিকেলে ১.৩০ টায় দাঁড়াতে এসেও দেখে একই অবস্থা। ঠিক এভাবেই তিনি তিনদিনের মাথায় এক্সরে করাতে সক্ষম হতে চলেছেন।

এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেকজন জানান, ডাক্তার লিখে দেয় জরুরী এক্সরে কিন্তু এখানে এসে দেখি জরুরীর বালাই নেই। এখানে মাত্র একজন টাকা নেয়। ব্যবস্থা জঘন্য পর্যায়ের হয়ে গেছে। এভাবে রাগে ক্ষোভে ভুক্তভোগীগণ তাদের কষ্টের কথা বলে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি বিভাগই / ওয়ার্ড আছে ৫ টি। ভর্তিকৃত রোগীর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ এক্সরে সার্জারি ওয়ার্ড থেকেই দেয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাঃ জানান, সার্জারি ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ জন রোগীর এক্সরে দিতে হয়। তবে সার্জারির ৫ টি ওয়ার্ড থেকে এক্সরে করাতে রোগীর সংখ্যা হয় ৪০০ জন। মমেকহাতে মোট ৩৩ টি ওয়ার্ড। সেখান থেকে সর্বনিম্ন হলেও আরো ২০০ এক্সরে করানোর রোগী থাকলে হয় ৬০০ জন। এছাড়া আউটডোর থেকে আসা রোগীর সংখ্যা যদি হয় আনুমানিক ২০০ তবে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০০ জন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ টি এক্সরে মেশিন রয়েছে। যেখানে দৈনিক ৪০০ জন রোগীর এক্সরে সম্পন্ন হয়ে থাকে। জরুরী প্রয়োজনে ওয়ানস্টপ ছাড়া মাত্র একটা জায়গায় টাকা জমা নেয়া হচ্ছে। যার কারণে এ ধরনের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। বেশ কয়েক বছর আগেও ভর্তিকৃত রোগীর এক্সরের টাকা জমা নেয়া ও এক্সরে করানো হতো পুরাতন বিল্ডিংয়ের নিচতলা রেডিওলজি বিভাগে। হঠাৎ করেই সেখানে টাকা জমা নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। এখন সেখানে শুধুমাত্র এক্সরে করানো হচ্ছে। এদিকে বাইরে থেকে এক্সরে করিয়ে আনলেও সেটিও ডাক্তারগণ গ্রহণ করছেন না বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে তারাকান্দা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যবসায়ী কুদ্দুস মিয়া জানান,সুচিকিৎসা পাওয়ার জন্য মেডিকেলের ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বাইরের এক্সরে তারা দেখবেন না আবার মেডিকেলের ভেতরে এক্সরে করতে গেলে তিনদিন ঘুরতে হয়,এটা কেমন ব্যবস্থা! এ ধরনের ব্যবস্থা থেকে মেডিকেল কর্তৃপক্ষের বেরিয়ে আসা উচিত।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, এক্সরের ফিল্ম এর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌখিকভাবে তা সংকোচনের নির্দেশ দিয়েছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। ফলে এ ধরনের নির্দেশনায় ভুক্তভোগী হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *