ময়মনসিংহে‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সাংবাদিকতা: সংস্কার ও সম্ভাবনায় করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত ময়মনসিংহের বিভাগীয় সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর সকালে ময়মনসিংহের প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সাংবাদিকতা: সংস্কার ও সম্ভাবনা শিরোনামে এবং ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় এই আয়োজন করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘দৃক’। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সকল খাতেই সংস্কারের প্রশ্ন উঠেছে। এর ধারাবাহিকতায় সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় সংস্কারের লক্ষ্যে এই আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকরা বলেন, দেশে প্রকৃত অর্থেই জনস্বার্থে সাংবাদিকতার সংকট রয়েছে এবং এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সংস্কার জরুরী। বিগত সময় থেকে যে ধরনের অপসাংবাদিকতা বিরাজ করছে এথেকে মুক্তির লক্ষ্যে এই পরিবর্তিত সময়কে কাজে লাগাতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সংবাদমাধ্যমের মান উন্নয়ন, সাংবাদিকদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিসত্ত্বর উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ জানিয়েছেন ময়মনসিংহের সাংবাদিকরা।
সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম বলেন, “বিগত আমলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে আমরা সাংবাদিকদের কেমন আচরণ দেখেছি। অথচ এই সাংবাদিকদের কাছ থেকে নতুনদের শেখার কথা ছিলো। গণঅভ্যুত্থানের সময়ে যেসকল সংবাদমাধ্যমে হামলা হয়েছে তা মানুষের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। সংবাদমাধ্যম সরকারের প্রচারণা সেল হিসেবে পরিণত হয়েছিলো।”
সাংবাদিক মীর গোলাম মোস্তফা বলেন, “আগের ধারাবাহিকতায় আমরা এখনো ভয় ও সংশয়ের মধ্যে আছি যে কী লেখা যাবে আর যাবে না। এখন এই পরিবর্তিত সময়ে স্বাধীন সাংবাদিকতায় কমিশন গঠন করতে হবে। এই সরকারকে স্পষ্ট উদ্যোগ নিতে হবে যাতে আমরাও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা করতে পারি।”
আয়োজনে অংশ নেয়া সকল সাংবাদিক পত্রিকাগুলোর ভিত্তিহীন ও অবাস্তব সার্কুলেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এক্ষেত্রে খোদ সংবাদমাধ্যমের মালিকানাতেই যদি নীতি-নৈতিকতা না থেকে তাহলে সাংবাদিকদের মধ্যে সততা ও বিবেকবোধ তৈরি হওয়ার সুযোগ নেই বলেও হতাশা ব্যক্ত করেছেন তারা। পাশাপাশি ঢাকার বাইরে সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপনের জন্য যে চাপ তৈরি করা হয় তা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। একজন সাংবাদিক কোনোভাবেই এ ধরনের কাজে যুক্ত থাকতে পারেন না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহের সাংবাদিকরা।
যখন যে সরকার আসে সাংবাদিকরা তাদের পক্ষের সাংবাদিক হয়ে যান বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক বাবলী আকন্দ। শোষকের পক্ষ থেকে সরে এসে শোষিতদের পক্ষে সাংবাদিকতা করার তাগিদ জানিয়েছেন তিনি। একইসাথে সাংবাদিকতায় নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সহকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বাবলী আখন্দ আরও বলেন, সাংবাদিকতা পেশায় নারীকে পেছনে রেখে সাংবাদিকতার উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়।
সাংবাদিক বাবুল হোসেন বলেন, “সাংবাদিকতায় অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করার কিছু নেই, প্রতিকূলতার মধ্যেই সাংবাদিকতা করতে হয়। তবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।” সাংবাদিকদের বিবেকবোধ জাগ্রত ও আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে নিজ নিজ জায়গা থেকে পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সাংবাদিক সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহের সাংবাদিকরা। এই আয়োজনে অংশ নেয়া সাংবাদিকরা মনে করেন আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের লেজুড়বৃত্তির কারণেই এত বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত এই ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করেছেন ময়মনসিংহের সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকরা বলেন, বাংলাদেশে বিগত সকল সরকার সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আইন ও বিচার বিভাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ আমলে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা ও ডিএসএ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে আইনে অনেক সাংবাদিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। নীপিড়নমূলক সকল বিদ্যমান আইন বাতিলের দাবি তাদের।
পরিশেষে সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অমিত রায়। দৃকের পক্ষ থেকে এই আয়োজন সঞ্চালনা করেছেন সাংবাদিক সামিয়া রহমান প্রিমা।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি