ময়মনসিংহে কমরেড আবদুল হক ও হেমন্ত সরকারের মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভা: সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই অগ্রসর করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা
ময়মনসিংহে কমরেড আবদুল হক ও কমরেড হেমন্ত সরকারের মৃত্যুবার্ষিকীতে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই অগ্রসর করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। কমরেড আবদুল হকের ২৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী এবং হেমন্ত সরকারের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ময়মনসিংহ জেলা কমিটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বিকাল ৪ টায় কৃষ্ণচূড়া চত্ত্বর, রেলওয়ে স্টেশনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন এনডিএফ’র জেলা সভাপতি মাহতাব হোসেন আরজু এবং সভা পরিচালনা করেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা কমিটির আহবায়ক বাবলী আকন্দ।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন এনডিএফ’র জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি এডভোকেট হারুন-অর-রশিদ ও সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান বাবুল, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার মাহবুব রব্বানী এবং জাতীয় ছাত্রদলের শম্ভুগঞ্জ আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক শরীফা আক্তার। এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিকী রুমেল।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, কমরেড আবদুল হক এবং হেমন্ত সরকার মার্কসবাদ-লেনিনবাদ প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করে গিয়েছেন। উপমহাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলন অগ্রসর করতে সকল প্রকার সংশোধনবাদ ও সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম অগ্রসর করেছেন। ১৯৭১ সালে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে এদেশে জাতীয় মুক্তির লড়াই পরিণতি লাভ না করে আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে তৎকালীন রুশ সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় বলে কমরেড আবদুল হক তাঁর ‘দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি’ ঐতিহাসিক মূল্যায়ন তুলে ধরেন। এর মাধ্যমে তিনি তৎকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং রুশ সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তুলে ধরেন। এর বিরুদ্ধে কমরেড আবদুল হক, হেমন্ত সরকার ও তাঁদের পার্টি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) জাতীয় মুক্তির লড়াই অগ্রসর করতে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। রুশ- মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই অগ্রসর করাসহ পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই অগ্রসর করেন। এ কারণে রুশ-ভারতের পরিকল্পনায় সৃষ্ট মুজিব বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের বদলে এদেশের কমিউনিস্ট ও বিপ্লবীদের হত্যার মিশনে নামে। এর ফলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এদেশের অসংখ্য মানুষকে হত্যা করলেও ভারতের সাথে রাশিয়ার মৈত্রী চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় বাহিনীর কাছে পাকিস্তানের বাহিনীর আত্মসমর্পণের ষড়যন্ত্র কার্যকরের মাধ্যমে এদেশের জাতীয় মুক্তির লড়াই অসমাপ্ত থেকে যায় বলে আবদুল হক প্রকৃত স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তির লড়াই সমাপ্ত করার আহবান জানান। এ প্রেক্ষাপটে রুশ- ভারতের পুতুল মুজিব সরকার জাতীয়মুক্তির আন্দোলন দমন করতে রক্ষি বাহিনী গঠন করে হাজার হাজার বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেতাকে হত্যা করে।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, শুধু শেখ হাসিনার সরকার নয় বিগত ৫৩ বছরে প্রত্যেকটি স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের দমন-পীড়ন ও নিপীড়ন নির্যাতনে জনগণের মধ্যে যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল তার বিস্ফোরণ ঘটে জুলাই আন্দোলনে। এ আন্দোলনে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা মৃত্যুবরণ করলেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অতি বিশ্বস্ত দালাল ব্যক্তিদের দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। এই সরকার মার্কিন পরিকল্পনা কার্যকর করতে দেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করছে। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আসকারা দিয়ে নিছক ভারত বিরোধীতার নামে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির চেষ্ঠা করছে। জনগণের মৌলিক সমস্যাকে অতীতের সরকারগুলির মতই উপেক্ষা শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তাকে অগ্রাহ্য করে যাচ্ছে। কথিত সংস্কারের নামে চীন-রাশিয়ার অবস্থানকে বাদ দিয়ে মার্কিন অবস্থানকে আরো অগ্রসর করতে চাচ্ছে দালাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার । নেতৃবৃন্দ এসব সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা ও তৎপরতার বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শক্তিগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অগ্রসর করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। (প্রেস বিজ্ঞপ্তি)