ময়মনসিংহে সনাক-টিআইবি’র উদ্যোগে নারী ও শিশু ধর্ষণের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ময়মনসিংহ ও টিআইবি’র উদ্যোগে ১৬ মার্চ নগরীর শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে ঘন্টাব্যাপি এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।দেশে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ উল্লেখযোগ্যহারে বেড়ে গিয়েছে। ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্রই এর ভয়াবহ শিকার হচ্ছেন কন্যাশিশুসহ সকল বয়সী নারী। যার ধারাবাহিকতায় নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতার সাম্প্রতিক প্রবণতা ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও নতুন বাংলাদেশ এর মূল চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং সব ধরণের যৌন নির্যাতন, সহিংসতা ও বৈষম্য প্রতিহত করতে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ এবং এই সব আপরাধের সাথে জড়িতদের দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সনাক’র ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপ এর সাবেক দলনেতা সাদাত মো: সায়েম, বর্তমান দলনেতা স্বর্ণালী আক্তার সুইটি,সহ-দলনেতা মো: আতকিুর রহমান, অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি) এর সদস্য জগলুল পাশা রুশো নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধনে টিআইবি’র ধারণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
সনাক-টিআইবি’র পক্ষে মানববন্ধন হতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও “নতুন বাংলাদেশ” এর মূল চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং সব ধরনের যৌন নির্যাতন, সহিংসতা ও বৈষম্য প্রতিহত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এসব অপরাধের সাথে জড়িতদের দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি অপরাধের শিকার পরিবারকে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা; সকল ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার ও বিদ্যমান আইনসমূহের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে সকল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে নারীর নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা; সকল রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠন, পেশাজীবী সংস্থা, সকল প্রকার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী পুরুষের সমঅধিকার ও সমমর্যাদার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ঘোষণাসহ চর্চা প্রতিষ্ঠার সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে; টেকসই উন্নয়ন অর্জনের কর্মপরিকল্পনায় অভীষ্ট-৫ (জেন্ডার সমতা) ও ১৬ (শান্তি, ন্যায়বিচার, কার্যকর প্রতিষ্ঠান)কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধের পূর্বশত হিসেবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণসহ আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও নানা অযুহাতে যত্রতত্র হেনস্থা রোধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি রাষ্ট্রকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে; নারী ও শিশু নির্যাতনসহ সকল প্রকার নারী অধিকার হরণের ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল প্রতিষ্ঠানকে- বিশেষ করে প্রশাসন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রতিরোধ, শুদ্ধাচার, জবাবদিহিতা ও সার্বিক সুশাসন নিশ্চিত করা; জেন্ডার সমতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও আবিস্কারে নারীর অভিগম্যতা নিশ্চিত, ইন্টারনেট ও প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সুলভ করা এবং বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অনলাইনে সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিতে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিশেষায়িত জাতীয় কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাঙ্গনে বা সমাজে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছে -তাদের উৎসাহিত, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা ও সুরক্ষা প্রদান করা; মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে সকল প্রতিষ্ঠানে অভিযোগকরীর পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তাসহ নারীবান্ধব অভিযোগ প্রদান ও নিরসনের ব্যবস্থা থাকতে হবে; নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বন্ধে ব্যক্তির রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক আবস্থান, মর্যাদা ও প্রভাব বিবেচনা না করে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা; নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ ও নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিতে সাধারণ জনগণের ইতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর প্রচারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং জাতীয় হেল্পলাইন ও অভিযোগ জানানোর হটলাইন নাম্বারগুলোর প্রচার ও কার্যকরতা বৃদ্ধি করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে ময়মনসিংহের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি বর্গ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি,গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সদস্যগণ, এসিজি ও ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপ এর সদস্যবৃন্দ উপিস্থিত ছিলেন ।প্রেস বিজ্ঞপ্তি