মানবিক সংকটের মুখে শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা
মোঃ আকিকুল ইসলাম ঃ
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটে সারাবিশ্ব এক মানবিক সংকটের সম্মুখীন। মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের জীবন-জীবিকাও।
রিকশাচালক, পরিবহণ শ্রমিক, দিনমজুর, কৃষি শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, সাধারণ দোকানদার এবং ফুটপাতের ছোট ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার খেটে খাওয়া মানুষ জানান, কাজ না থাকায় এসব পেশার মানুষের হাতে টাকা নেই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। অনেকেই তিনবেলা খেতে পাচ্ছেন না।
এমনি একজন শ্রমিক হাসান আলী বলেন, ১০ দিনে মাত্র একদিন কাজ পেয়েছি। আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে বৃদ্ধ মা খুব অসুস্থ। মায়ের জন্য প্রতিদিন ওষুধ কিনতে হয়। এছাড়াও রয়েছে খাবারের খরচ। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেঁচে আছি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ (২০১৭) অনুযায়ী, দেশের ৮৫ শতাংশ কর্মজীবী লোক অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। তাঁরাই দিন আনে দিন খায় মানুষ। দেশের মোট ৬ কোটি ৮ লাখ লোক মজুরির বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজে আছেন। এর মধ্যে ৫ কোটির বেশি অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। যেখানে কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনেকটা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন তাঁরা। অন্যরা আনুষ্ঠানিক খাতের। করোনায় তাঁদের জীবিকাও হুমকিতে আছে।
দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমজীবী লোকের মধ্যে কৃষি খাতে আছেন ২ কোটি ৩০ লাখ ৪৮ হাজার নারী-পুরুষ। শিল্প খাতে ১ কোটি ১১ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ কাজ করেন। আর সেবা খাতে আছেন প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় শুধু শ্রমজীবীরায় নয় বরং সব সেক্টরে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারের দেওয়া সহযোগিতার পরিমাণ আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু সরকার নয় দেশের উঁচু শ্রেণির মানুষদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তারা। তাহলেই হয়তো এই সংকট কাটিয়ে উঠা যাবে।
শ্রমজীবী মেহনতি মানুষই দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ উন্নীত হয়েছে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে। আর তাদের নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমের মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ।