রমযান মাসে ছাঁটাই নির্যাতন বন্ধ ও এক মাসের মজুরি সমান ঈদবোনাসের দাবিতে সারাদেশে হোটেল শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত
স্টাফ রিপোর্টার: ২৩ মার্চ বুধবার রমযান মাসকে কেন্দ্র করে ছাঁটাই-নির্যাতন বন্ধ, সকল বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও এক মাসের মজুরির সমপরিমাণ উৎসব ভাতা প্রদানের দাবিতে বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসাবে ঢাকায় বুধবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান খান এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।
সমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সহ-সভাপতি শ্যামল কুমার ভৌমিক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ খলিলুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইয়াসিন, বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ শাহ আলম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির, বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, ঢাকা পোশাক প্রস্তুতকারী শ্রমিক সংঘের সভাপতি মাহাবুবল আলম মানিক, সিএনজি ও অটোরিক্স চালক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শেখ মোঃ হানিফ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ ঢাকা মহানগর কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক আতিকুল ইসলাম টিটু । এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি জয়নাল আবদীন, যুগ্ম-সম্পাদক মোঃ সাদেক মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জহিরুল ইসলাম বাদল, অর্থ সম্পাদক মোঃ রাজু এবং হোটেল শ্রমিক নেতা কবির হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, এপ্রিলের শুরুতেই রমজান মাসের আগমন উপলক্ষ্যে দ্রব্যমূল্যের চলমান উর্ধ্বমুখী বাজার আরো চড়া হওয়ার আশঙ্কা যেখানে বিদ্যমান এবং দেশের সমস্ত শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষ নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছে, সেখানে হোটেল শ্রমিকদের রমজান মাসকে কেন্দ্র করে রয়েছে ব্যাপক চাকরিচ্যুতির আশংকা। এমনিতেই সারা বছর চাকরির অনিশ্চয়তা, সময়মত বেতন না পাওয়া, অতিরিক্ত কর্ম ঘন্টা, আইন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ না করে চাকুরিচ্যুত করা, স্বাস্থ্য সম্মত কর্মপরিবেশ ও থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা না থাকা, কথায় কথায় বিনা কারণে চাকুরিচ্যুত করা, নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র না দিয়ে শ্রম আইনগত সুবিধা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ইত্যাদি নানান রকম সমস্যা-সংকট নিয়ে হোটেল শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা চালাতে হয়। তদুপরি রমজান মাস আসলে আরেক দফা ছাঁটাই নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে শ্রমিকদের কর্মজীবনে। চলমান বৈশ্বিক মন্দাজনিত পরিস্থিতির মধ্যে ২০২০ সাল থেকে বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রাদূর্ভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক ও শ্রমজীবিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হোটেল শ্রমিকরা। দেশের প্রায় ৩০ লক্ষ শ্রমিক ও তার পরিবার-পরিজন নিয়ে এই বিশাল জনগোষ্ঠি অনাহারে-অর্ধাহারে, বিনা চিকিৎসায়, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদিতে জর্জরিত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে। ইতিমধ্যে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির যে পাঁয়তার সরকার করছে তা বাস্তবায়ন হলে তা হবে শ্রমিকদের জন্য মরার উপরে খাড়ার ঘাঁ।
নেতৃবৃন্দ তাঁদের বক্তব্যে প্রশ্ন রাখেন, আসন্ন রমজানে যারা চাকরিতে নিয়োজিত তাদেরকে আরেক দফা ছাঁটাই করা হলে এই শ্রমিকরা কোথায় যাবে? এ অবস্থায় ছাঁটাই-নির্যাতন বন্ধ, সকল বকেয়া মজুরি পরিশোধ, উৎসব বোনাস ও সবেতনে ছুটি প্রদানের জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ। একই সাথে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে বাজারদরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মজুরি নির্ধারণ, সর্বাত্মক রেশনিং ব্যবস্থা চালু, বেকার শ্রমিকদের বেকার ভাতা ইত্যাদি দাবিতে আরো জোরদার সংগঠন-সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন রাজপথ প্রদক্ষিণ করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।
ময়মনসিংহ জেলা: ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহ জেলার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহ জেলার উদ্যোগে বিকাল ৪.৩০ টায় র্যালীর মোড় কার্যালয় হতে মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন এর সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সদস্য মুখলেছুর রহমান। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা সভাপতি এডভোকেট হারুন-অর-রশিদ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেলা সভাপতি মাহতাব হোসেন আরজু, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা সহ-সভাপতি হযরত আলী, সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা কমিটির নেতা আতিক মিয়া প্রমুখ।