সম্পাদকীয়

রেল অব্যবস্থাপনা রোধে সরকারের জবাবদিহিতা ও জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন

রেল জার্নিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন সকল পর্যায়ের মানুষই। কিন্তু রেল ইঞ্জিনের অভাব চরমে ওঠায় দেশের অন্যতম এ পরিবহন মাধ্যমের যাত্রীদের প্রায়ই বিপাকে পড়তে হচ্ছে। জানা গেছে, রেলওয়ের ২৮০টি ইঞ্জিনের (লোকোমোটিভ) মধ্যে অন্তত ১৯৫টি প্রায় ৭০ বছর আগেই আয়ুষ্কাল অতিক্রম করেছে। ১৫ বছরে ১০৯টি ইঞ্জিন কেনা হলেও রেলের হিসাবে সংস্থাটির ১৮০ ইঞ্জিন মেয়াদোত্তীর্ণ। রেলের চলমান প্রকল্পের মধ্যে দুটি ইঞ্জিন ক্রয়সংশ্লিষ্ট। এর আওতায় ৬০ ইঞ্জিনের সবক’টি বহরে যোগ হয়েছে। ফলে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে ইঞ্জিন পাওয়ার সুযোগ নেই। ঠিকাদারের অর্থায়নে ২০১১ সালে ৭০ ইঞ্জিন কেনার প্রকল্প ছিল রেলের। ২০২৩ সালে তা বাতিল হয়।

শেষ পাঁচ বছরে রেলের উন্নয়ন প্রকল্পে সরকার ৬৩ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা খরচ করলেও বগি ও ইঞ্জিন সংকটে ধুঁকছে সংস্থাটি। পরিচালন ব্যয়সহ আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর রেলের জন্য খরচ করে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবু রেলের পরিসংখ্যানে ইঞ্জিনের ৬০ শতাংশ ও যাত্রীবাহী বগির ৪৭ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ। গত মে মাসের প্রথম ১৩ দিনে বিভিন্ন স্থানে ইঞ্জিন বিকল হয়েছে ১৭ বার। এর আগে এপ্রিলে ৪৪ বার ইঞ্জিন বিকল হয়ে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। জুন মাসেও ইঞ্জিন বিকলের ধারাবাহিকতায় চলতি জুলাই মাসেও প্রতিনিয়ত ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটছে।

গত ১৩ মে চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ, ঈশ্বরদী ও লালমনিরহাটের লোকোশেডের রেলচালকরা সভা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলীদের চিঠি দিয়ে ট্রেনের জরাজীর্ণ দশার কথা জানিয়েছিলেন। ছয়টি চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছিলেন ট্রেনের ব্রেক কাজ করে না’। জনবল সম্পর্কে রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৪৭ হাজার ৭০৩ পদের প্রায় অর্ধেক শূন্য। আগে থেকেই ট্রেন চলছে জনবল সংকট নিয়ে। নতুন রেলপথ চালুর পর জনবলের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। রেলের হিসাবে, যাত্রীবাহী বগি আছে ১ হাজার ৯৮০টি। এর মধ্যে চলাচলের উপযোগী আছে মাত্র ১ হাজার ৫৯৮টি। বাকি কিছু মেরামতে ছিল, অন্যগুলো বিকল। সারাদেশে যাত্রীবাহী ট্রেন ৩২০টি। তবে আদতে তা চলে ৭৪টি রেকে (ট্রেনের বগির সমন্বয়), অর্থাৎ এক রেকে একাধিক নামে ট্রেন চালানো হয়। বিকল্প রেক না থাকায় কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে হয় শিডিউল বিপর্যয় হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পথে বিকল হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে চলা ছয়টি ট্রেনের ৮০ শতাংশ ব্রেক কার্যকর নয়। এতে সিগন্যাল অমান্য হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ইঞ্জিনের ব্রেক দুর্বল ও ডেডম্যান ফুট প্যাডেল অকার্যকর বলে রেলের ময়মনসিংহ অঞ্চলের শ্রমিক-কর্মচারীদের অভিযোগ । ঈশ্বরদীর চালকদের অভিযোগ, ওই অঞ্চলের পাঁচটি ট্রেনের ব্রেক পাওয়ার দুর্বল। নতুন কেনা ৩০০০ সিরিজের ট্রাকশন মোটর বিকল বলে জানিয়েছেন ঢাকার শ্রমিক-কর্মচারীরাও। এ অঞ্চলের ছয়টি ট্রেনের ব্রেক পাওয়ার দুর্বল বলে অভিযোগ চালকদের। সিলেটের চালকদের অভিযোগ, জনবল সংকটের কারণে তাদের দ্বিগুণ সময় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। দক্ষ জনবলের অভাবে একের পর এক সিগন্যাল ভুলের ঘটনা ঘটছে। নতুন জনবল প্রয়োজন। শুধু পদ্মা রেল সংযোগের জন্য ১ হাজার ৬৮০ কর্মকর্তা-কর্মচারী দরকার। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জনবল নিয়োগের অনুমতি দিচ্ছে না।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর বাংলাদেশের রেলখাত নিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। এর সাথে রেলের ইঞ্জিন বিকল ও রেলবিভাগে অব্যবস্থাপনার ঘাটতি হলে সংগত কারণেই রেল সেক্টর নিয়ে সরকারের সদিচ্ছার অভাব বলে মনে করা হতে পারে। তাই দ্রুত রেলে ইঞ্জিন, বগি সংযোজন করে এবং প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধি করে রেলকে সময়োপযোগী করা দেশের সকল শ্রেণির মানুষের জরুরি দাবি।