জাতীয়রাজনীতি

সভা, সমাবেশ ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রদানসহ শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়া অবিলম্বে মেনে নিয়ে পোশাক শিল্পের অস্থিতিশীলতা নিরসন করুন

সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুর-ময়মনসিংহসহ সারাদেশের পোশাক শিল্পাঞ্চলের অস্থিরতা নিরসনে অবিলম্বে শ্রমিকদের সভা,সমাবেশ ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রদানসহ ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন। অদ্য (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এ আহবান জানান তিনি। ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন এবং ময়মনসিংহ দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের আয়োজনে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের অন্যতম নেতা ও দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোখলেছুর রহমান দুলাল। সমাবেশে দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ বাবলী আকন্দসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের পোশাক শিল্পের অন্তর্গত তৈরি পোশাক খাত, কটন-টেক্সটাইল এবং লোকাল গার্মেন্টস (দর্জি)- এর সাথে যুক্ত সকল শ্রমিক এক নিদারণ কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছেন। ফুরণভিত্তিক (পিস রেট), ফিক্সড (১২ ঘন্টার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা) বা ৮ ঘন্টার কর্মদিবসে মাসিক মজুরি- যে নিয়মেই মজুরি প্রদান করা হোক না কেন তা দিয়ে বর্তমান বাজারদরে শ্রমিক পরিবারগুলোতে ১ সপ্তাহও চলা সম্ভব হয় না। ফলে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে জীবন পাড় করতে হচ্ছে শ্রমিক পরিবারগুলোকে। অসুখ-বিসুখে চিকিৎসা করাতে না পেরে পরিবারের অন্য সদস্যসহ শ্রমিকরা ধুঁকে ধুঁকে জীবন পাড় করছেন। নামমাত্র মজুরিতে চাকরি করে শ্রমিকরা তাদের সংসারের নিত্যনৈমিত্তিক জরুরি প্রয়োজনগুলো মেটাতে না পেরে অথবা কারখানা কর্তৃপক্ষের চাপে বাধ্য হয়ে ওভারটাইম করলেও মালিকরা সঠিক নিয়মে শ্রমিকদের ওভারটাইমের মজুরি পরিশোধ করে না। অনেক কারখানায় দেখা যায়, কোন শ্রমিক ১০০ ঘন্টা ওভারটাইম করলে ৮০ ঘন্টার মজুরি পরিশোধ করে বাকিটা কারখানা কর্তৃপক্ষ আত্মসাৎ করে ফেলেছে। তাছাড়া কারখানা কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত চাপ ও নির্যাতন চালিয়ে শ্রমিকদের সক্ষমতার অতিরিক্ত কাজ আদায় করছে। কোন শ্রমিকের কোন আইটেম ৬০ পিছ উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও তাকে তখন জোর করে ৮০ পিছ উৎপাদন করানো হয়, ফলে সঙ্গতকারণেই শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোন কোন সময় অসুস্থ হয়ে শ্রমিকরা কারখানা ফ্লোরে ঢলে পড়েছে। অথচ কর্তৃপক্ষ এসব অসুস্থ শ্রমিকদের আইন অনুযায়ী অসুস্থতাজনিত ছুটি না দিয়ে বিনাবেতনে ছুটি প্রদান করে। এমনকি আইন অনুযায়ী শ্রমিকরা বৎসরে ২০ দিনের বাৎসরিক ছুটি পাওয়ার অধিকারী হলেও অনেক মালিকরা তা প্রদান করে না। বিগত স্বৈরাচারী সরকারগুলোর ন্যায় আওয়ামীলীগ স্বৈরাচারী সরকারের সময়েও শ্রমিকরা তাদের সমস্যা-সংকটের দাবিতে সুষ্টুভাবে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে পারে নি। গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস কার্যকর করে শ্রমিকদের সভা-সমাবেশ ও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রায় হরণ করা হয়েছিল। হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও এখনও পর্যন্ত শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের সভা-সমাবেশ ও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রদান করা হয় নি। কারখানা মালিকদের নির্মম শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে শ্রমিকরা কোথাও প্রতিবাদ করলে শ্রমিকদের মারধোর-নির্যাতন করে শিল্পাঞ্চলে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কারণেই শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে শিল্পাঞ্চলে আজ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরে পশ্চিমা বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর মদতপুষ্ট বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও এনজিও সংস্থা শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলে মালিকদের শোষণ-নিপীড়নকে আড়াল করে সা¤্রাজ্যবাদী দেশ ও তাদের সংস্থাসমূহের এজেন্ডা-কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে শ্রমিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ভূমিকা রেখে চলেছে। একই সাথে পশ্চিমা বিরোধী শক্তি চীন-রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের লগ্নিপুঁজিও এদেশে বিনিয়োগ রয়েছে এবং শিল্প সেক্টরে তাদেরও অবস্থান রয়েছে। এছাড়াও লুম্পেন, প্রতিক্রিয়াশীল, সুবিধাবাদী এবং মালিকদের পকেটস্থ কিছু শ্রমিক নামধারী সংগঠন মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্নভাবে শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করে শিল্পাঞ্চলে প্রতারণার জাল বিস্তৃত করে রেখেছে। মালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী এসব গোষ্ঠী বিভিন্নভাবে প্রকৃত শ্রমিক আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গার্মেন্টস সেক্টরে এর বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের স্বরুপ উন্মোচন করে শ্রমিকদের আইনি অধিকার রক্ষা ও শোষণমুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অগ্রসর করছে।
(প্রেস বিজ্ঞপ্তি)