স্কুল-কলেজ খুলবে ১৩ জুন
এনএনবি : মহামারী পরিস্থিতি খুব বেশি প্রতিকূল না হলে আগামী ১৩ জুন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
বুধবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত জানান।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অনিশ্চয়তার মধ্যে চলমান ছুটি ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আসেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য তারিখ জানানোর পাশাপাশি আগামী দুই মাসের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান।
সপ্তাহে কতদিন কোন শ্রেণির ক্লাস এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ক্লাস ও পরীক্ষার বিষয়ে কথা বলেন দীপু মনি।
ছুটি বাড়ানো নয়, মূল বিষয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল পরিকল্পনা ১৩ জুন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া। খুব বেশি প্রতিকূল পরিস্থিতি না থাকলে আমরা ১৩ জুন থেকেই খুলে দিতে চাই। এখন যে পরিস্থিতি আছে, সেটা দেখে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাই। পরিস্থিতি যদি অনুকূলে না থাকে, তাহলে হয়ত ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
তবে আলাদাভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নেই জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোথাও কোথাও বন্ধ রাখা, কোথাও খুলে দেয়া- এটাও বলছেন অনেকে। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোথাও খুলব, কোথাও খুলব না; সেক্ষেত্রে অসাম্য আরও বেশি তৈরি হবে।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে আসছিলেন। এর মধ্যেই ছুটি আরেক দফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানাল সরকার।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
সরকার কয়েক দফা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর পরিকল্পনা করলেও মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়াতে হয়েছে।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এসে ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ ও ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বাড়ায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ছুটি বাড়াতে হয়েছে।
সবশেষ ২৯ মে পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা আছে।
১২ জুন পর্যন্ত ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের যে পরিস্থিতি আছে মহামারীর, তার সঙ্গে সম্প্রতি ঈদ যাত্রার কারণে কিছুটা সংক্রমণের হার বেড়েছে। কোনো কোনো জেলায় সংক্রমণের হার বেশ বেড়েছে। সে কারণে সবগুলো বিষয় বিবেচনা করেই ১২ জুন পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সবাই দায়িত্বশীল হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, ‘যখন আমরা খুলে দেব, তখন প্রথমে যারা ২০২১ সালে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছেন, তারা ৬ দিনই ক্লাস করবেন। যারা ২০২২ সালে এসএসসি এবং এইচএসসি দেবেন, তাদেরও সপ্তাহে ৬ দিনই ক্লাস নেয়ার চেষ্টা করব। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রথমে সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস করবে। প্রথমে আমরা দেখব কত দ্রুততার সাথে তাদের ক্লাসটা একদিন থেকে সময়টা বাড়ানো যায়। এরপর ক্রমাগত বাড়িয়ে দুই, তিন, চারদিন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে পূর্ণাঙ্গভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চলবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ কর্মদিবস ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ কর্মদিবস ক্লাস নেয়ার দুই সপ্তাহ পরে পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ক্লাস শুরুর পরে জানিয়ে দেয়া হবে।’
তবে জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে কোন পরিকল্পনা হয়নি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জেএসসির ব্যাপারে আমরা ভাবছি অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে যদি এটা করা সম্ভব হয়, সেটি আমরা দেখব। পরীক্ষা নেবার মত পরিস্থিতি থাকলে সেদিকে আমরা যাব। তা না হলে অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করব।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকাদান নিশ্চিত করার পরিকল্পনা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আবাসিক হলগুলোতে অনেক ভিড় আছে, আমরা সেটি দেখছি। টিকা দেয়ার ব্যাপারে আমরা তথ্যগুলো চেয়েছি ইউজিসির মাধ্যমে, কতজন টিকা পেয়েছেন। আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই ৪০ বছরের নিচে। তাই আমরা ধরেই নিয়েছি তাদের অধিকাংশেরই টিকা দিতে হবে এবং কাজটি আমরা দ্রুত শুরু করতে পারব। প্রথম ডোজ দিলেই তো হবে না, দ্বিতীয় ডোজও দিতে হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের আরেকটু চিন্তা করতে হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার সিদ্ধান্ত এই টিকার ওপর খানিকটা নির্ভর করবে বলে তিনি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করলেও বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির পরামর্শ নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
দীপু মনি জানান, এক বছরের বেশি সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে সরকার তথ্য সংগ্রহ করছে। যেহেতু আমরা এখন নানা ধরণের প্রযুক্তির ওপর নির্ভর হয়ে গেছি, তাই সেই ক্ষতিটা আরও কম সময়ে আমরা পূরণ করতে পারব।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। সেটা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা করছি। ক্ষতিটা নিরূপণ যত তাড়াতাড়ি হবে, ক্ষতি কীভাবে কত সময়ে পূরণ করতে পারবো; সেটা বুঝতে পারব।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন।