১৯৬তম ঈদুল আযহার জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান
১৯৬তম ঈদুল আযহার জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান
আমিনুল হক সাদী: ১৯৬তম ঈদুল আযহার জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। আগত মুসুল্লিদের নিরাপত্তায় পাঁচ স্তরে কাজ করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়। জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
দেশের অন্যতম প্রাচীন ঈদগাহ মাঠ রয়েছে কিশোরগঞ্জের বুকে। ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহের জামাত শুরু হয় শটগানের গুলির শব্দে। এটি এই ময়দানের বহুকালের ঐতিহ্য। ঈদ জামাতের বিশালতার কারণে পেছনের মুসল্লিদের সালাত শুরু সংকেত দেওয়ার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ার প্রচলন হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের সর্বশেষ সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে মাঠ পরিদর্শন করে সাংবাদিকদেরকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, এবারও ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবারের ঈদের জামাতে টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না মুসল্লিরা।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে আমরা সব সময় বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি ও করছি। তাই আমরা কিছু বাড়তি আয়োজন করেছি। এর মধ্যে ময়দানকে লক্ষ্য করে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষ যখন ঈদগাহ ময়দানে আসবেন পুলিশের চারটি স্থাপনা পেরিয়ে আসতে হবে। মাঠে চারটি ড্রোন ক্যামেরা থাকবে। থাকবে মাইনো কোলারসহ ছয়টি ভিডিও ক্যামেরা। এছাড়াও পুরো মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।’
র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো: মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহা নির্বিঘেœ উদযাপনের লক্ষ্যে সার্বিক আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে র্যাবের উদ্যোগে বুধবার বিকেলে ঐতিহ্যবাহি শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে সাংবাদিকবৃন্দের সহিত মতবিনিময় করে ঐতিহ্যবাহি কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, আমরা প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদ উল আযহা উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারাদেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পবিত্র ঈদ উলআযহা উপলক্ষে র্যাব ১৪ ব্যাটেলিয়ান আওতাধীন এলাকার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এই “শোলাকিয়া” ঈদগাহমাঠ । এখানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত কল্পে-কন্ট্রোলরুম, ওয়াচটাওয়ার, অবজারভেশন পোস্ট ও চেকপোস্ট,স্ট্যান্ডিং পেট্রোল ও ফুট মোবাইল পেট্রোল,স্ট্রাইকিং ফোর্স,ড্রোন কেন্দ্রিকনিরাপত্তাব্যবস্থা,বাইনুকোলার, সশস্ত্র ¯œাইপারসহঅন্যান্য নিরাপত্তাসরঞ্জাম,পর্যাপ্ত র্যাব সদস্য মোতায়েন, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা কার্যক্রমসহ রিজার্ভ ফোর্স, সিসিটিভি মনিটরিং ও ভেহিক্যাল স্ক্যানার স্থাপন করা হয়েছে। জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়সহ র্যাব-১৪ এর আওতাধীন সড়ক পথ গুলোতেও আমরা যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি, যাতে দূর দূরান্ত থেকে এখানে ঈদ-উলআযহার নামাজের জামাতে অংশ নিতে সাধারন মুসল্লিাদের রাস্তায় কোন প্রকার হয়রানির শিকার হতে না হয়।
শোলাকিয়া কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের একটি বৃহৎ ও পুরাতন জনবসতি এলাকা। বর্তমান শোলাকিয়া নামক স্থানটির পূর্বনাম ছিল রাজাবাড়িয়া। কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব উত্তরকোনে নরসুন্দা নদীর অববাহিকায় শোলাকিয়া এলাকাটির অবস্থান। জনশ্রুতি আছে, শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রথম বড় জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছিলেন। অন্য মতে মোঘল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া, সেখান থেকে বর্তমান শোলাকিয়া নামের উৎপত্তি। দেওয়ান মান্নান দাদ খান যে জমি ১৯৫০ সনে ওয়াকফ করেছেন, সে ওয়াকফনামায় ১৭৫০ সাল থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত হয়ে আসছে বলে লেখা আছে। সে হিসাবে মাঠের বর্তমান বয়স ২৭২ বছর।
এছাড়া জানা যায় যে, ১৮২৮ থেকে এ মাঠে বড় জামাত শুরু হয়। ১৮২৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বড় জামাতের ইমামতি করেন সুফি সৈয়দ আহমদ। বরকতময় শোলাকিয়া ঈদগাহে যুগে যুগে খ্যাতনামা আলেমরা ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।