জাতীয়রাজনীতি

শিক্ষাশেষে যোগ্যতার ভিত্তিতে সকলের চাকুরির নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে: জাতীয় ছাত্রদল

শিক্ষার সকল দায়ভার রাষ্ট্রকে বহন করার মাধ্যমে শিক্ষাশেষে যোগ্যতার ভিত্তিতে সকলের চাকুরির নিশ্চয়তা প্রদান করার আহবান জানিয়েছে জাতীয় ছাত্রদল। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে গত ৫ জুন রায় দিয়েছে হাইকোট। এ প্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ কয়েকটি দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলন করছেন। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় ছাত্রদলের সভাপতি তৌফিক হাসান পাপ্পু ও সাধারণ সম্পাদক মধুমঙ্গল বিশ্বাস এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, একটা রাষ্ট্রে বিভিন্ন জাতিসত্ত্বা ও জনগোষ্ঠীর লোকজন বসবাস করেন। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু সকল জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে রাষ্ট্রকে। প্রচলিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বৈষম্যের কারণে ধনীক শ্রেণীর মানুষদের জন্য শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকলেও ব্যাপক গরীব মানুষের সন্ত্বানদের এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। মূলত: দেশের শ্রমিক ও কৃষক সমাজ যারা শিল্প ও কৃষিখাতে উৎপাদন করে সমগ্র জনগণের জন্য খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করেন এবং শ্রমে-ঘামে সভ্যতার চাকাকে অগ্রসর করে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের সন্ত্বানদেরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তারপরও গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেহনতি মানুষের সন্ত্বানরা তাদের অদম্য ইচ্ছে দিয়ে স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার দিকে যাত্রা শুরু করে। অভাবী সংসারের দু:খ গোছাতে তারা মরিয়া চেষ্টা চালায় শিক্ষা শেষে কর্মের নিশ্চয়তায়। কিন্তু শিক্ষা শেষে চাকুরির নিশ্চয়তা না থাকায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত তরুণরা অভিশপ্ত জীবন যাপন করছেন। বিবিএস’র এক জরিপের বরাত দিয়ে নেতৃদ্বয় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত বর্তমানে ৮ লাখের বেশি বেকারের সংখ্যা রয়েছে। অশিক্ষিত তরুণদের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণদের মধ্যে বেকারের সংখ্যা ৩ গুণ বেশি। সরকার কথায় কথায় কথিত উন্নয়নের কথা বললেও এ সমস্ত বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না। উপরন্তু সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরে চাকরিতে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি শূন্যপদেও নিয়োগ প্রদান করছে না। নেতৃদ্বয় বলেন, ৪৬তম বিসিএসে ৩ লাখ ৩৮ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ১৪০ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। অর্থাৎ ১টি পদে নিয়োগের জন্য শতাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় দেশের তরুণ সমাজকে ঠেলে দিয়েছে সরকার ও প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থা। তন্মধ্যে ৫৬% কোটা বরাদ্দ রেখে সরকারী চাকুরিতে নিয়োগ প্রদান বেকার তরুণদের সাথে প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়।

নেতৃদ্বয় বিবৃতিতে আরও বলেন, পাকিস্তানের স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তৎকালীন ছাত্রসমাজসহ শ্রমিক-কৃষকরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো। মূলত: নয়া ঔপনিবেশিক আধা-সামন্তবাদী পাকিস্তানে সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ ও আমলা-দালাল পুঁজি বিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো ও সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধ গড়ে তুলেছিলো। কিন্তু উগ্র-বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাংলাদশ প্রতিষ্ঠিত হলেও জাতীয় গণতান্ত্রিক সংগ্রাম এখনো অসমাপ্ত রয়ে গেছে। যার কারণে পাকিস্তান আমলে সমাজে ধনী-গরীবের যে বৈষম্য বিদ্যমান ছিলো, বর্তমানে শিক্ষাসহ সমগ্রখাতে এই বৈষম্য আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তানের ন্যায় বাংলাদেশ জন্মের পরও সামরিক সরকার বা গণতান্ত্রিক সরকারের নামে প্রতিটি সরকারই স্বৈরতান্ত্রিক ভূমিকা পালন করছে। সাম্রাজ্যবাদ ও তার বিশ্বসংস্থাসমূহের পরিকল্পনা কার্যকর করতে প্রতিটি দালাল সরকারই জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তার প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করেছে। এমতাবস্থায় ছাত্রসমাজের জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু উগ্র-জাতীয়তাবাদের বিষবাস্প ছড়িয়ে আওয়ামীলীগ সরকার বরাবরই প্রগতিশীল এই ছাত্র আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। এ প্রেক্ষিতে নেতৃদ্বয় বলেন, যারা দেশমাতৃকা ও জনগণের মুক্তির জন্য লড়াই করেন তারা আত্মত্যাগ ও আত্ম বিসর্জনের মহান দায়িত্ব পালন করেন। সরকারী চাকুরিতে কথিত ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ বরাদ্দ রাখার মাধ্যমে সরকার উগ্র-বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে সুঁড়সুঁড়ি দিলেও বৈষম্যমূলক স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বিদ্যমান রাখার মাধ্যমে ৭১’এ জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ে আত্মাহুতি দেয়া প্রকৃত সৈনিকদের সাথে প্রহসন করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় আরো বলেন, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য শুধু চাকুরি অর্জন হতে পারে না। শিক্ষা মানুষকে সৎ হিসেবে গড়ে তোলে, মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ জাগ্রত করে ও ব্যক্তির গুনাবলির যথার্থ বিকাশ সাধন করে। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা বাড়ানো হয়। এ উদ্দেশ্যে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা ও তাদের যথাযথভাবে কাজে লাগানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে তুলে ধরে “টাকা যার, শিক্ষা তার”- নয়া ঔপনিবেশিক এই শিক্ষানীতি কার্যকর করছে। এর মাধ্যমে শ্রমিক-কৃষক ব্যাপক জনগণের সন্ত্বানরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের ছাত্রসমাজকে এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সার্বজনীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা তথা একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ছাত্রসমাজকে শিক্ষা বৈষম্যের আন্দোলনকে জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অগ্রসর করার আহবান জানান নেতৃদ্বয়।
(প্রেস বিজ্ঞপ্তি)