নিহত শ্রমিকদের জন্য এক জীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার দাবিতে হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর চক বাজার কামালবাগের বরিশাল হোটেলে ৬ জন হোটেল শ্রমিক আগুনে পুড়ে হত্যা করার দায়ে অভিযুক্ত মালিক, ভবন মালিক, টেড লাইসেন্স, কল কারখানা প্রতিষ্ঠা পরিদর্শক, অন্যান্য কর্তৃপক্ষ সহ দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, নিহত শ্রমিক পরিবারকে আজীবন আয়ের সমপরিমান ক্ষতিপূরণ ও বাজারদরের সাথে সঙ্গতিরেখে নিম্নতম মজুরিসহ বিভিন্ন দাবীতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ গতকাল ৩০ আগস্ট বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়ন। বিকাল ৫টায় চাঁনখারপুলে কয়েকশো হোটেল শ্রমিকরা জমায়েতে হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। ইউনিয়নের সভাপতি আক্তারুজ্জামান খান এর সভাপতিত্বে এসব বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, ইউনিয়নের অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল আহসান ও গিয়াস উদ্দিনসহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এবং মহানগরের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বলেন, গত ১৫ আগষ্ট রাজধানীর চকবাজারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বরিশাল হোটেলের ৬ জন শ্রমিক নিহত হোন। অগ্নিকান্ডের কারণ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয় নি। তবে শ্রমিকদের মারা যাওয়ার কারণ স্পষ্ট। সারারাত ডিউটি শেষে হোটেলের এক কোণে তােেদর অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ জায়গায় ঘুমাতে দেওয়া হয়। ঘুমন্ত অবস্থায়ই অগ্নিদগ্ধ হয়ে তারা মৃত্যুবরণ করেন। শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তাসহ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চয়তার দাবিতে হোটেল শ্রমিক ফেডারেশন দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও কোন কর্তৃপক্ষই তাতে সাড়া না দেওয়ার আজকের এই পরিণতি। ফলে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এই মৃত্যু স্বাভািিবক মৃত্যু নয়, বরং এটি একটি কাঠামোগত হত্যাকান্ড। এই হত্যাকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট মালিকসহ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও অনুমোদনের সাথে যারা জড়িত সকলই এই হত্যার জন্য দায়ী। হোটেল-রেষ্টুরেন্টের মালিকরা শ্রমিকদের ১৩/১৪ ঘন্টা ডিউটি করতে বাধ্য করে। তাতে শ্রমিকদের ঘুম, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও চিত্ত বিনোদনের কোন সুযোগ থাকে না। শ্রমিকদের দিয়ে অতিরিক্ত ডিউটি করানোর জন্য মালিকরা প্রতিষ্ঠানের ভিতরেই শ্রমিকদের রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে। যেসব প্রতিষ্ঠান ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে সেসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের সারারাত ডিউটি শেষে দিনের বেলায় বারান্দা, সিঁঁড়ি ও ছাদে ঘুমাতে দেখা যায়। শ্রমিকদের থাকার নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ যেমন মালিকরা নিশ্চিত করে নি, তেমনি বাইরে থাকার জন্য বাড়ি ভাড়া ভাতাও প্রদান করে না। এক অনিরাপদ ও মানবেতর পরিবেশে হোটেল রেস্টুরেন্টের শ্রমিকদের জীবন যাপন করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র পরিদর্শনের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থাকলেও অদৃশ্য কারণে এসব সংস্থার তৎপরতা তেমন পরিলক্ষিত হয় না। ফলে একের পর এক দুর্ঘটনার নামে শ্রমিক হত্যাকান্ড সংঘটিত হচ্ছে। বরিশাল হোটেলের ঘটনাও এর ধারাবাহিক ঘটনার অংশ। তাই সংশ্লিষ্ট হোটেল মালিকসহ এই ঘটনার জন্য বিভিন্নভাবে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে নেতৃবৃন্দ জোর দাবি জানান। একই সাথে শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ আবাসনব্যস্থাসহ তাদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহবান জানান।