ইউএনও’র মানবিকতা: পা ছেচড়িয়ে চলতে হবেনা আর প্রতিবন্ধী নয়নকে
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি ঃ ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের গঁফাকুড়ি এলাকার নজরুল ইসলাম অন্যের জমিতে দিনমজুর খাঁটেন ও মা’র ভিক্ষা বৃত্তির উপার্জনের টাকা দিয়ে কোন প্রকার জীবিকা নির্বাহ করে আসছে এই দম্পত্তি। ছয় সদস্যের সংসারে চার ভাই-বোনের মাঝে সবার বড় নয়ন।
প্রতিবন্ধকতায় থেমে আছে নয়নের জীবন। দিনমজুর ও ভিক্ষাবৃত্তির পরিবারে নয়নের জন্য ক্রয় করতে পারেনি একটি হুইল চেয়ার। অনেকের কাছে গিয়েছেন, অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন, তবুও মেলেনি একটি হুইল চেয়ার। হাতের উপর ভর করে ছেচড়িয়ে ছেচড়িয়ে মায়ের সাথে ভিক্ষা করে নয়ন, জন্ম থেকেই দুই পায়ে সমস্যা তার। প্রতিবন্ধী নয়নকে সাথে নিয়ে উপজেলা পরিষদে ভিক্ষা করতে আসলে বিষয়টি নজরে আসে ত্রিশালের ইউএনও আক্তারুজ্জামানের। পরিবারের খোজ খবর নিয়ে তাদের অসচ্ছলতা জেনে তিনি এই প্রতিবন্ধীর কষ্ট লাগবে একটি হুইল চেয়ার কিনে তার চলাচলের ব্যাবস্থা করে দেন।
খোজ নিয়ে জানা যায়, নয়ন মিয়ার আরও তিন ভাইবোন রয়েছে। তাদের বাড়িতে থাকার জন্য পাঁচ শতাংশ জমি ছাড়া অবশিষ্ট আর কিছু নেই। জড়াজীর্ন একটি ঘরেই থাকে পরিবারের ছয় সদস্য। দিনমজুর বাবার আয়ের সংসার না চলায় মা সালমা বেগম একটু সহযোগিতার আশায় প্রতিবন্ধী ছেলেকে সাথে নিয়ে ভিক্ষা বৃত্তি করে বেড়ান। নিয়মিত পাচ কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে চলে আসেন পৌর শহরের ত্রিশাল বাজারে। বাবার শ্রম আর মায়ের ভিক্ষা বৃত্তির টাকা দিয়েই চলে তাদের সংসার।
মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদে মা ছেলে ভিক্ষা করতে আসলে বিষয়টি নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামানের। তিনি মা ছেলে ডেকে নিয়ে তাদের বিস্তারিত শুনে বাড়িতে খোজ নিয়ে দেখেন ছেলের চিকিৎসা দুরের কথা একটি হুইল চেয়ার কেনার সামর্থও এ পরিবারের নেয়। তিনি প্রতিবন্ধী নয়ন মিয়োকে বুকে আগলে নিয়ে কিনে দেন একটি হুইল চেয়ার। মঙ্গলবার সকালে হুইলি চেয়ারটি তুলে দেন নয়নের হাতে। চেয়ার পেয়ে আবেগ আপ্লুত নয়ন ও তার মা সালমা বেগম।
প্রতিবন্ধী নয়ন মিয়া বলেন, এভাবে আমার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করতে খুব কষ্ট হতো। ইউএনও স্যার আমার জন্য একটি হুইলচেয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়াতে এখন কষ্ট কমবে। এখন থেকে আর আমাদের হাতের উপর ভর করে ছেচড়িয়ে চলতে হবেনা।
নয়নের মা সালমা বেগম বলেন, আমাদের সামর্থ নেই। চার সন্তান নিয়ে একবেলা খেলে আরেক বেলা খেতে পারিনা। ছোট একটা ছুপড়ি ঘরে রৌদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে জীবন পার করতেছি। আমার ছেলের কষ্ট দেখে ইউএনও স্যারের দয়া হয়েছে। এখন হুইল চেয়ারে বসে সে নিজে নিজেই চলতে পারবে।
ত্রিশাল উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, প্রতিবন্ধী নয়নকে নিয়ে তার মা ভিক্ষা করতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে আসলে বিষয়টি আমার নজরে আসে। তখন তাদের অসহায়ত্বের কথা শুনি। মায়ের সাথে সাথে হাতে ভর দিয়ে দু’পা ছেঁচড়িয়ে নয়নের এই চলা সত্যিই খুব কষ্টকর ছিল। বাড়িতে খোজ নিয়ে দেখলাম তাদের এই সামথ্য নেই তাই একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করেছি।