শ্রমিক শ্রেণীর ক্লান্তিহীন সৈনিক বাদল সরকার এর জীবনাবসান: শোককে শক্তিতে পরিণত করার আহবান ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের
স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য, সুনামগঞ্জ জেলার সভাপতি এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেলা-সহসভাপতি আজীবন সংগ্রামী নেতা বাদল সরকার আজ ২৮ নভেম্বর সকাল ৭:০৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেছেন। দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৬৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তারঁ মৃত্যুতে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং শোক সন্তোপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৩ দিনব্যাপী কালো পতাকা উত্তোলনসহ এক শোক বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সারাদেশের নেতাকর্মিদের কালো ব্যাজ পরার আহবান জানানো হয়েছে।
ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস যুক্ত বিবৃতিতে বলেন- বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাদল সরকার সংগ্রামী ভূমিকা গ্রহণ করে আসছেন। পেশায় তিনি একজন ক্ষৌরকার হওয়ার সুবাদে সুনামগঞ্জ জেলা ক্ষৌরকার ইউনিয়ন গঠন করেন। এছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলা বারকি শ্রমিক ইউনিয়ন, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন, হকার্স শ্রমিক ইউনিয়ন, স’মিল শ্রমিক সংঘ, কয়লা লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তোলা সহ বিভিন্ন শ্রমিক সেক্টরে সংগঠন-সংগ্রাম গড়ে তোলেন। বাদল সরকার ট্রেড ইউনিয়ন নেতা হলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের দু:খ, দুর্দশার কারণ হিসেবে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-দালাল পুঁজিকে সমস্ত শোষণ-নিপীড়নের হোতা হিসেবে মনে করতেন। তাই শোষণের এই তিন পাহাড়কে উচ্ছেদ করতে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষকের মৈত্রীর ভিত্তিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে অগ্রসর করার মহান ব্রত গ্রহণ করেন। গত ৯০ দশকে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতৃত্বে ইজারাবিরোধী যে ঐতিহাসিক ভাসানপানির আন্দোলন গড়ে উঠে বাদল সরকার তাতে নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করেন। জেলার তাহিরপুর, বিশম্ভরপুর, ধরমপাশা উপজেলাসহ যেখানে যেখানে ভাসান পানির আন্দোলন গড়ে উঠেছিলো বাদল সরকার সেখানে প্রত্যক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। আন্দোলনের কারণে সংগঠনের নেতা-কর্মিসহ অসংখ্য জেলে-কৃষকের উপর হামলা-মামলা সংঘঠিত হয়। সেসব হামলা-মামলা তিনি অত্যন্ত সাহস ও ধ্যৈর্য্যের সহিত মোকাবেলা করাসহ দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করেন। জেলা শহরে অবস্থান করার কারণে তাঁর বাসা নেতা-কর্মিদের একটি প্রধান আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো উলেখ করেন- বাদল সরকার শুধু একজন নিবেদিত সংগঠকই ছিলেন না, আন্দোলন-সংগ্রামের সকল কাগজপত্র, রেকর্ড সংরক্ষণ করাসহ বিপ্লবী ও প্রগতিশীল সাহিত্য অত্যন্ত সুনিপুণ হাতে যতœ করে সংরক্ষণে রাখতেন। যা আগামীদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস রচনায় এক গুরুত্বপূর্ন দলিল ও উৎস হিসেবে বিবেচিত রয়েছে। অত্যন্ত প্রাণোচ্ছল, সজ্জন ও ক্লান্তিহীন এই সংগ্রামী নেতৃত্বের অভাব সুনামগঞ্জ জেলাসহ গোটা শ্রমিক অঙ্গণে পূরণ হবার নয়। তবু বিশ্বব্যাপী বাজার-প্রভাব-বলয় ও পুনর্বন্টন নিয়ে আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী দ্ব›েদ্ব দেশে দেশে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে বিশ্বযুদ্ধের বিপদ বৃদ্ধি করছে, তার বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে বিশ্ববিপ্লব অগ্রসর করতে বাদল সরকারকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ। সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-দালাল পুঁজির নির্মম শোষণ লুণ্ঠনে দেশের শ্রমিক-কৃষক-জনগণের উপর যে খড়গহস্ত নেমে এসেছে তার বিরুদ্ধে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব অগ্রসর করতে বাদল সরকার এর মৃত্যুর শোককে শক্তিতে পরিণত করে এবং শ্রমিক শ্রেণীর মহান আদর্শকে উর্দ্ধে তুলে ধরে তাঁর অসমাপ্ত কাজকে অগ্রসর করে নেয়ার জন্য সারাদেশের শ্রমিক ও সংগঠনসমূহের প্রতি আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।