ময়মনসিংহে স্টিল-আর্চ সেতু ও রহমতপুর সেতুসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টারঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালে আমরা ময়মনসিংহকে বিভাগ করে দিয়েছি । নতুন বিভাগ হিসেবে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যাতে করে ময়মনসিংহবাসী উন্নয়নের অংশীদার হতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এগিয়ে গিয়েছে। ঢাকার সাথে বিভিন্ন বিভাগের সংযোগ সড়ক ও মহাসড়ক তৈরি আমাদের সরকারের সময়েই হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী ১৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সড়ক ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশব্যাপী ১৫০টি সেতু, ১৪টি ওভারপাস ও নবনির্মিত অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন উদ্বোধনকালে ময়মনসিংহ বিভাগে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন।
ময়মনসিংহ বিভাগবাসীর বৃহৎ প্রাপ্তি ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর কেওয়াটখালীতে দেশের প্রথম সুবিশাল স্টিল-আর্চ সেতু ও রহমতপুর সেতুসহ ৪২টি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ বছর ময়মনসিংহ বিভাগবাসীকে হাজার হাজার কোটি টাকার দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্প উপহার দিয়েছেন। সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সুবিশাল স্টিল-আর্চ সেতু ও রহমতপুর সেতু ময়মনসিংহবাসীর জন্য বিশেষ উপহার বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে দেশব্যাপী ভার্চুয়ালি গুরুত্বপূর্ণ ১৫০টি সেতু ও ১৪টি ওভারপাসসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক নবনির্মিত ৪০টি সেতু, ব্রহ্মপুত্র নদের উপর নির্মিতব্য কেওয়াটখালী স্টিল-আচ সেতু ও রহমতপুরের সুবিশাল সেতু নির্মাণ কাজ এবং নবনির্মিত বিআরটিসি বাসডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া নির্মিত আরো ৪০ টি সেতু সেতু জনসাধারণের চলাচলের জন্য উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাঝে ময়মনসিংহে ২৩, নেত্রকোনায় ১২ ও জামালপুর জেলায় ৫টি সেতু রয়েছে। সেতুগুলোর সম্মিলিত দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ৭০০ মিটার। কয়েকটি সেতুর সাথে সীমান্ত সড়কের সংযোগ থাকায় দেশের প্রেক্ষাপটে অনেক গুরুত্ব রয়েছে। ময়মনসিংহের বহুল প্রত্যাশিত ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর কেওয়াটখালীতে দেশের প্রথম স্টিল-আর্চ সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১০০ মিটার। মূল সেতুর প্রস্থ ৪২.১৫ মিটার। দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণ করতে প্রায় ৩ বছর সময় লাগবে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ হাজার ২ শত ৬৩ কোটি টাকা। মূল সেতুতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। মূল সেতুর ৩২০ মিটার অত্যাধুনিক স্টিল-আর্চ এবং ৭৮০ মিটার এপ্রোচ সেতু নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৫৫১ মিটার সড়ক ওভারপাস, ২৪০ মিটার রেলওয়ে ওভারপাস এবং ৬.২০ কিলোমিটার এসএমভিটি লেনসহ চারলেন মহাসড়ক নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও নির্মাণ করা হবে টোলপ্লাজা, বিশ্রামাগার, স্মার্ট সেন্টার (ওয়াচ টাওয়ার) ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাঠামো। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে চায়না স্টেইট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করবে। রহমতপুর সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭১.৬৫৫ মিটার। মূল অংশের প্রস্থ ১৩.৪০ মিটার। সরকার দলীয় ময়মনসিংহের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর কেওয়াটখালী সেতু বাংলাদেশের প্রথম দৃষ্টিনন্দন স্টিল-আর্চ সেতু। একই নদের রহমতপুরেও নির্মিত হচ্ছে সুবিশাল সেতু।
সেতু দু’টির নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকার সাথে ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোসহ উত্তরাঞ্চলের ২ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন ঘটবে। ময়মনসিংহ বিভাগের স্থলবন্দর, ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ স্থাপন সুগম হবে। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া, শেরপুরের নাকুগাঁও এবং জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরের সাথে রাজধানী ঢাকার নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। নতুন নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি উন্মোচিত হবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার। প্রসার ঘটবে এ অঞ্চলের পর্যটন খাতের। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যপ্তির পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার জনগণের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। জাতীয় অর্থনীতি ও জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প উপহার দিয়েছেন। রেল সংযোগসহ পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা বিমানবন্দরে তৃতীয় টারমিনালের মতো মেগা প্রকল্প বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শওকত আলী জানান, নির্মিত সেতুর স্থানগুলোর সাথে স্থলবন্দরের অবস্থান থাকায় দেশের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। সীমান্ত সংলগ্ন সেতুগুলো সীমান্তের সাথে যোগাযোগ সহজ করে তুলবে।
নেত্রকোনা জেলার ঠাকুরাকোনা থেকে কলমাকান্দা পর্যন্ত ৭টি সেতু রয়েছে। জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী পর্যন্ত রয়েছে ৫টি সেতু। তিনি আরো বলেন, কেওয়াটখালী ও রহমতপুর সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের সাথে সড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হবে।
ভার্চুয়ালী গণভভন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব প্রকল্প উদ্বোধনশেষে তিনি ময়মনসিংহে জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমানের সাথে যুক্ত হন। ময়মনসিংহবাসির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, গত ১১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠ থেকে ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৩০ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। আজ আবারো ৪২ প্রকল্পের উদ্বোধন করায় এই অঞ্চল স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ময়মনসিংহবাসিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের উপকারভোগীর সাথে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
উপকারভোগী চর সিরতার নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা চরাঞ্চলের মানুষ এক সময় কাদাযুক্ত রাস্তায় অনেক কষ্ট করে চলাচল করতাম। এখন রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হওয়ায় আমরা যানবাহনে চলাচল করতে পারছি। ঐ শিক্ষার্থী আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে এবং কর্মকে দেখে আমাদের উৎসাহ উদ্দীপনা আরো বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐ শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভালো করে লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হও তুমিও একদিন প্রধানমন্ত্রী হতে পারো।
অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বাবু, ফুলবাড়িয়ার এমপি মোসলেম উদ্দিন এডভোকেট, গৌরীপুরের এমপি নাজিম উদ্দীন আহমেদ, নান্দাইলের এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন, গফরগাঁওয়ের এমপি ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, ভালুকার এমপি কাজিম উদ্দিন ধনু, হালুয়াঘাট-ধোবাউড়ার এমপি মিঃ জুয়েল আরেং, ঈশ্বরগঞ্জের এমপি ফখরুল ইমাম, সংরক্ষিত আসনের এমপি মনিরা সুলতানা মনি, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু, বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিলা, ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, জেলা, মহানগর আওয়ামীলীগ, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, মোটরমালিক, শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সার্কিট হাউজমাঠে আধুনিকমানের সুবিশাল প্যান্ডেল করা হয়।