অন্যান্য

কোনোভাবেই আর নয় শব্দদূষণ, দরকার সমন্বিত প্রচেষ্টা

শুধু মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নয়, প্রাণিকূলের জন্যও শব্দদূষণ মারাত্মক ক্ষতিকর। শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিনিয়ত স্থলে ও জলে পড়ছে। শব্দদূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। শব্দের ডেসিবেল শ্রাব্যতার সীমায় থাকলে আমরা সুস্থ থাকবো এটাও বেশিরভাগ লোক জানিনা। তাই আর দেরিতে নয়, দরকার শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ। এজন্যে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মতামত ব্যক্ত করা হয় শব্দসচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কর্মশালায়। শব্দদূষণমুক্ত ময়মনসিংহ বিভাগ গড়তে সকলের সহযোগিতা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিকরণের বিকল্প নেই বলে আহ্বান জানানো হয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায়।

পরিবেশ অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের উদ্যোগে ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’ এর আওতায় বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে শব্দসচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ বৃহস্পতিবার (০৯ নভেম্বর) ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার মিলনায়তনে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

ভিন্ন মাত্রার পরিবেশ দূষণের মধ্যে অন্যতম ঘাতক হচ্ছে উচ্চমাত্রার শব্দ। বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে উচ্চমাত্রার শব্দ ধীরে ধীরে আমাদের জীবনের সক্রিয় সৃজনশীলতা নষ্ট করে ফেলে। শব্দ দূষণের কুফল ও এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে অবহিতকরণ ও উদ্যোগ গ্রহণের নিমিত্ত আজকের এ কর্মশালার আয়োজন।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ আলী, স্থানীয় সরকার পরিচালক ফরিদ আহমদ, বাংলাদেশ পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ আবু সায়েমসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। প্রশিক্ষণে ময়মনসিংহের সরকারি দপ্তরের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণসহ প্রায় শতাধিক অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করেন।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় শব্দদূষণের উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ, কেন গুরুত্ব দেয়া উচিত, কোন ধরনের প্রাণীর ক্ষেত্রে কত ডেসিবেল মাত্রার শব্দ স্বাভাবিক-এর ছক, শব্দ দূষণের উৎস, ক্ষতিকর দিক, শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) আইন-বিধিমালা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের উপায়, এ দপ্তরের উদ্যোগ ও কার্যক্রম বিষয়ে উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন দিলরুবা আহমেদ, পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ বিভাগ।

মুক্ত আলোচনায় বিআরটিএ প্রতিনিধি বলেন, ময়মনসিংহ শহরকে কেন্দ্র করে প্রায় ২ হাজার গাড়ি চলাচল করে। বেশিরভাগ গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার করতে দেখা যায়। হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহারে সীমিত করে দেওয়া বা পরিবেশবান্ধব হর্ণ ব্যবহারের পরামর্শ দেন এবং এটা বাস্তবায়নে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিনিধি জানান, শব্দদূষণের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। শহরে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও অনেক। পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তাদের মনিটরিং করার প্রয়োজন বলে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।

যারা প্রতিনিয়ত শব্দদূষণ তৈরি করছে বা শব্দদূষণের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদেরকে জানানো বা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারলে আরো বেশি ভালো হতো। কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে তাদের সাথে মতবিনিময় সভা বা প্রশিক্ষণ আয়োজন করা যেতে পারে। স্টেকহোল্ডারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোছাঃ আলিয়া ফেরদৌস জাহান।

জেলা তথ্য অফিস, বন বিভাগ, প্রাণিসম্পদ দপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরসহ আরো কয়েকটি দপ্তরের প্রতিনিধিগণ মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান এর সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আমাদের চরিত্রে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বিদেশিদের অনেকেই আস্তে কথা বলে। পুরো জাতিকেই সচেতন হতে হবে। ধারণা করা হয় বিবর্তনের মাধ্যমে আমরা এসেছি। মানব জাতি এক অভ্যাসকে ছেড়ে অন্য অভ্যাস গ্রহণ করেছে। মনে হয় আমরাও উচ্চ ডেসিবেলের শব্দ গ্রহণ করতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি, যেটা কখনোই কাম্য নয়। আমরা শব্দদূষণের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছি। আমরা যেটা শিখাবো পরবর্তী প্রজন্ম তাই শিখবে। আমাদের সমাজকে যেভাবে গড়ে তুলবো সেভাবেই গড়ে উঠবে। তাই শব্দদূষণের বিষয়ে আমাদের জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। পরিবহণ, ধর্মীয়সহ প্রতিটি সেক্টর থেকে শুরু করে সকল সেক্টরেই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করা উচিত।
(পিআইডি, ময়মনসিংহ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *