জাতীয়রাজনীতি

নির্বাচন ঠেকাতে’ নতুন কৌশলে বিএনপি

শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি এখন ‘নির্বাচন ঠেকাতে’ অযোগ্য নেতাদের সরিয়ে তাদের দল পুনর্গঠন করছে। বিরোধী দলটি চলতি সপ্তাহে কোনো হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেনি কারণ তারা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ‘নির্বাচন ঠেকাতে’ কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলন চলাকালে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ায় তারা হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যেতে দ্বিধাবোধ করছে। তবে, একইসঙ্গে শীর্ষ নেতাদের অনেকেরই উপলব্ধি, ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ জনসমর্থন পেতে পারে। কিন্তু এতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন দিতে সরকার কোনো চাপ অনুভব করবে না। এ অবস্থায় ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি ততই আলোচনায় আসছে। দল দুটির মধ্যে সম্পর্কের নতুন রসায়ন চলছে বলেও জানা গেছে। এতদিন পৃথকভাবে আন্দোলন করলেও এখন মাঠে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে জামায়াতকে কাছে পেতে চাইছে বিএনপি। যদিও বিষয়টি নিয়ে দল দুটির নেতারা এখনো বেশ কৌশলী অবস্থানে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জামায়াত তো বিএনপির মতোই আন্দোলন করছে। এর বাইরে আর কিছু হলে সেটা ভবিষ্যতে জানতে পারবেন।’ জামায়াত নেতারা মনে করছেন, মাঠের আন্দোলন জোরালো করতে হলে জামায়াতের বিকল্প নেই। চলমান আন্দোলনে বিএনপির পাশাপাশি থাকলেও সর্বশক্তি নিয়ে নামার আগে চূড়ান্ত কিছু হিসাব-নিকাশের ব্যাপার রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪-১৫ সালের আন্দোলনে বিএনপিকে নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন জায়ামাত নেতারা। তাদের দাবি, সে সময় জামায়াত নেতাকর্মীরা মাঠে থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা নামেননি। ফলে আন্দোলনে নেমে তাদের অনেক নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সে কারণে এইবার চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে কিছু বিষয় স্পষ্ট হতে চান তারা। তবে আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী না আসলেও ‘নির্বাচন ঠেকাতে’ বিএনপি নিজেদের চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, দাবি আদায়ে তারা করো বা মরো আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই মধ্যে বিএনপি সারাদেশে বিভিন্ন ইউনিট সংস্কার করবে যাতে তারা আন্দোলনকে সফল করতে পারে বলে অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে। যারা নিষ্ক্রিয় বা যথাযথ ভূমিকা পালন করছেন না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানান তারা। তুলনামূলকভাবে সক্রিয় নেতাদের বদলি করা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়, বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি দল বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। বিএনপি সূত্র জানায়, দলটি তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত তার বিভিন্ন ইউনিট পুনর্গঠন করছে এবং ভার্চুয়াল সভা-সমাবেশের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। সিনিয়র নেতারা ইতিমধ্যে প্রায় ৬০টি সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ সুবিধাবাদী নেতাদের পদ থেকে অপসারণের দাবি জানান।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার জন্য দলটি ১৫ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিছু হেভিওয়েট সহ ৫০ টিরও বেশি কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকে বহিষ্কার করেছে। দলটি নির্বাচন বর্জন করে তা বানচালের চেষ্টা করেছে। বিএনপি মনে করেন, ঢাকা মহানগর ইউনিটগুলোর ব্যর্থতায় দলটি আগের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে। দাবি আদায়ে বিএনপি ও তার সহযোগীরা ২৯ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী ১০ দফা অবরোধ ও তিন দফা হরতাল পালন করলেও তা নিষ্ফল হয়।

এরই মধ্যে বিএনপি রোববার মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজধানী ও জেলা শহরে মানববন্ধন করবে এবং ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস নানা কর্মসূচির পালন করবে। একইসঙ্গে নির্বাচন ঠেকাতে এবং তাদের দাবি পূরণে সরকারের ওপর নতুন করে বিদেশি চাপের প্রত্যাশা করছেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে সরকার অবশ্যই দুর্বল হয়ে পড়বে এবং নির্বাচন করতে পারবে না।
তথ্যসূত্র : এফএনএস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *