রোজিনা ইসলামের মুক্তির আন্দোলন সকল গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুক্ত করুন।
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও কারাবন্দী রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাঁকে হেনস্তাকারী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাংবাদিক ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসব কর্মসূচি পালন করছে। রাষ্ট্র পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে যারা থাকেন খোদ সচিবালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দ্বারা সচিবালয়ে সাংবাদিক নির্যাতনের এমন ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে নতুন। তাই এই ঘটনায় অনেক সিনিয়র সাংবাদিকগণ আগামি দিনে সাংবাদিকতার প্রেক্ষিতে আরো নতুন নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টির আশংকা করছেন। অনেকে এ ঘটনাকে তাদের অতীত কৃতকর্মের ফল হিসেবেও দেখছেন।
সাংবাদিকতা বরাবরই একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসকগোষ্ঠীকে চেক-আপে রাখতে অবাধ সাংবাদিকতার বিকল্প নেই। সাংবাদিকরা একদিকে যেমন শাসকগোষ্ঠীকে তাদের ক্ষমতা চর্চা সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক রাখে, তেমনি জনগণকে তাদের অধিকার সম্পর্কেও সজাগ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা চর্চার ক্ষেত্রে এই নিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। দেশের প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সকল ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে সীমিত পরিসরে সাংবাদিকতা চর্চা ও গা বাঁচিয়ে চলার প্রবণতা । ফলে শাসকশ্রেণী জন নিপীড়ন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করলেও দেশের মিডিয়া সেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করে বরঞ্চ অনেকাংশে সরকারের আনুকূল্যতা পেতে অনেক সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ সমস্ত জবাবদিহি হীনতার কারণে গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্র এক ধরণের আস্কারা পেয়ে আসছে। আমলাদের দ্বারা বিনা বিচারে হত্যাসহ নিরীহ মানুষের উপর বিভিন্ন অবিচারের ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে । ফলে খোদ সচিবালয়ে সচিবদের দ্বারা একজন নারী সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বরঞ্চ যারা প্রতিবাদ করছেন তাদের হিসেব করতে হবে- তাদের আন্দোলন কর্মসূচি কি শুধু রোজিনা ইসলামের মুক্তি এবং তাঁকে হেনস্তার জন্য হবে, নাকি সরকার ও আমালাদের সকল অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে হবে ? এই আন্দোলন যদি শুধু রোজিনা ইসলামের জন্য হয় তবে এর ফলাফল খুব বেশি আশা করা যায় না। কিছুদিন পর রোজিনা ইসলামের মত হয়তো আরেকজনের ক্ষেত্রে আরো ভয়ানক ঘটনা ঘটবে। তাই আন্দোলনকারী সাংবাদিক সহ সকল গণতান্ত্রিক ব্যক্তি ও সংগঠনকে রোজিনা ইসলামের মুক্তির আন্দোলনকে অবাধ সাংবাদিকতা, অবাধ মত প্রকাশ ও সভা-সমাবেশের স্বাধীনতাসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুক্ত করতে হবে।