বুয়েটে অস্থিতিশীলতায় জাতীয় ছাত্রদলের বিবৃতি
গত ২ দিন ধরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ শিক্ষার্থীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ ঘটনায় জাতীয় ছাত্রদলের জাতীয় কার্যকরী সংসদের সভাপতি তৌফিক হাসান পাপ্পু ও সাধারণ সম্পাদক মধুমঙ্গল বিশ্বাস এক যুক্ত বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার হত্যার পর বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলেন। প্রচলিত রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলেন।
নেতৃদ্বয় বলেন, এ ঘটনায় তখন জাতীয় ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি সম্মান রেখে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিল যে, ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তায়নের কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে এর মাধ্যমে আবরারসহ সকল ক্যাম্পাস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছাত্র সংগঠন ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল -এ যাবৎকালে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যতগুলি ক্যাম্পাস হত্যাকান্ড ঘটেছে তার একটিরও সুষ্ঠু বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। কারণ এসব হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকে সাধারণত ক্ষমতাসীন দলের লেজুরবৃত্তিকারী ছাত্রসংগঠন। ক্ষমতাসীন দল ও স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র এসব লেজুড়বৃত্তিকারী ছাত্রসংগঠন ও তার নেতা-কর্মিদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। তাই ক্যাম্পাস হত্যার বিচার এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্টু পরিবেশ নিশ্চিত করতে এসব লেজুড়বৃত্তিকারী, প্রতিক্রিয়াশীল এবং দুর্বৃত্তায়নের ছাত্ররাজনীতির বিপরীতে প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ধারার ছাত্ররাজনীতি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাঙ্গণে জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই বেগবান করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছিলো জাতীয় ছাত্রদল।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় আরও বলেন, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ধারার ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে শিক্ষার্থীদের মতামত ও গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ও তা ধারণ করার মাধ্যমেই কেবল তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। অন্যথায় চর দখলের মত রাত্রির অন্ধকারে হল দখল, ক্যাম্পাস দখল করা শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে পদদলিত করা হয়। এর মাধ্যমে পেশিশক্তি প্রদর্শনে সন্ত্রাস, দুর্বৃত্তায়ন ও স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এরা স্বৈরতন্ত্রের উপর ভর করে ভিন্ন মতকে দমনের জন্য স্বাধীনতাবিরোধী, উন্নয়নবিরোধী, চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, জামাত-শিবিরসহ নানা আখ্যা দেয়। এর ফলে শিক্ষাজীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থীদের। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র নামধারী গুন্ডা ও সরকারের সন্ত্রাসী ঠ্যাঙ্গারে বাহিনীসহ সকল প্রতিক্রিয়াশীল সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ এবং নির্যাতন বন্ধ করে শিক্ষার পরিবেশকে নিশ্চিত করতে হবে এবং এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আহ্বান জানায় জাতীয় ছাত্রদল।
জাতীয় ছাত্রদল মনে করে, অনুন্নত দেশে ছাত্রসমাজের সংগ্রামী ভূমিকা অপরিহার্য। যেহেতু পশ্চাৎপদ দেশে জাতীয় মুক্তির সমস্যা, অর্থনৈতিক শোষণ ও নিপীড়ন থাকে, সে কারণে ছাত্রসমাজের মধ্যে সংগ্রামী চেতনা প্রবাহিত হতে থাকে। ছাত্রসমাজ এই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন সত্তা নয়, সুতরাং ছাত্রসমাজও নির্যাতিত। ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়- এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশে জাতীয় মুক্তির জন্য ছাত্রসমাজ এক গরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের দেশের ছাত্র আন্দোলনের অতীত ইতিহাস লড়াই-সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতীক্ষা ও আত্মদানের ইতিহাস। ছাত্রসমাজ হলো সমাজের শিক্ষিত ও সচেতন অংশ। সেই কারণে জাতীয় মুক্তির সুস্থ চেতনা তারা আগেই উপলব্ধি করতে পারে। ১৯৪৫-৪৬ সালে ভারতবর্ষে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১ সালে জাতীয় মুক্তি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই, ৮৩-এর মজিদ খান শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন প্রতিটি আন্দোলন বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে এদেশের ছাত্ররা। এদশে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় এখনও পর্যন্ত একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা, শিক্ষার অধিকার তথা গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান নেতৃদ্বয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি