জাতীয়রাজনীতি

সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থরক্ষায় প্রণীত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসীযুদ্ধে সম্পৃক্ত করার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পরিকল্পনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে তার মাধ্যমে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী সমাজ গঠনের যে আকাংখা তৈরি হয়েছিল তার সাথে প্রহসন করা হয়েছে। এই সরকারের মাধ্যমে এদেশে মার্কিন অবস্থান আরও শক্তিশালী করার মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক রণনীতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী যুদ্ধে সম্পৃক্ত করার বিপদ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অবস্থান নিতে সাম্রাজ্যবাদী চীন ও রাশিয়া এদেশকে আরও অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন পাঁয়তারা চালাবে। সা¤্রাজ্যবাদীদের এসব তৎপরতার বিরুদ্ধে দেশের শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ময়মনসিংহ জেলার উদ্যোগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ আহবান জানান সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। একই সাথে স্বৈরতান্ত্রিক শেখ হাাসিনা সরকারের খুন-গুম-গণহত্যা, বেপরোয়া দুর্নীতি-লুটপাট ও দমন-পীড়ন-শোষণ-নির্যাতনের শ্বেতপত্র প্রকাশ করার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।

জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি মাহতাব হোসেন আরজু’র সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এনডিএফ’র জেলা সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা সভাপতি এডভোকেট হারুন-অর-রশিদ, সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা আহবায়ক বাবলী আকন্দ, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুখলেছুর রহমান ও এনডিএফ নেতা ওবায়দুল হক কালামসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ থেকে ১৬ বছর আগে মার্কিন পরিকল্পনায় ও মার্কিন-ভারতের সমন্বিত পরিকল্পনায় স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। ক্ষমতায় এসেই মার্কিন পরিকল্পনা কার্যকর করার সাথে সাথে ভারতের স্বার্থরক্ষায় একের পর এক জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে। পরবর্তীতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চীনের সাথে মার্কিনের নেতৃত্বে পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদীদের আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পেলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সাম্রাজ্যবাদের দালাল আওয়ামীলীগ সরকার চীন-রাশিয়ার সমর্থনে সাম্রাজ্যবাদের আরেক দালাল ভারতীয় মদদে বিনা ভোটের নির্বাচন করে স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকে। এ সময় গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম দমন করতে হত্যা, গুম ও মামলা-মোকদ্দমার মাধ্যমে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আওয়ামী স্বৈরতান্ত্রিক সরকার। এছাড়া দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের লাগামহীন দাম বৃদ্ধি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া, বেপরোয়া ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাট ও সাধারণ মানুষের উপর শোষণ-নির্যাতন তীব্রতর হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জিভুত হয়। এর বিরুদ্ধে সামগ্রিক শিক্ষা সমস্যা ও বেকার সমস্যার আংশিক চিত্র তুলে ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রসমাজ আন্দোলন করলে কয়েকশো মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা ও অসংখ্য মানুষকে গুরুতর আহত করে বর্বর স্বৈরতান্ত্রিক শেখ হাসিনা সরকার। এর ফলে দেশ-বিদেশে সর্বত্র সাধারণ মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং ছাত্র-মধ্যবিত্ত-জনতার গণবিস্ফোরণে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ পালাতে বাধ্য হয়। শত শত মানুষের এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে মানুষের আকাংখা তৈরি হয়েছিল যে, দেশীয় স্বৈরাচার ও বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের থেকে মুক্ত হয়ে একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠণ হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিয়ে আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে এদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অবস্থান আরও অগ্রসর হলো। এর ফলে সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসীযুদ্ধে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার বিপদ আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা অক্ষুন্ন রেখে সাম্রাজ্যবাদের দালাল নব গঠিত সরকার শিক্ষা, চাকুরিসহ আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের সমাধান করতে পারবে না। তাই বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আশু কর্তব্য হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ ও তার এদেশীয় দালাল সমূলে উচ্ছেদ করে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা করা। (প্রেস বিজ্ঞপ্তি)