কৃষি ও শিল্পজাতীয়

জলঢাকায় আগাম জাতের ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম

হাসানুজ্জামান সিদ্দিকী হাসান, নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারীর জলঢাকায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম পড়ছে। আশানুরুপ ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে এখন হাসির ঝিলিক। কৃষকেরা বাড়তি লাভ হিসেবে চাষাবাদ করছেন স্বল্পমেয়াদী এই আগাম জাতের আমন ধান। এ ধানের কাচাঁ খড় গো-খাদ্য হিসেবে বেশী দামে বিক্রি হওয়ায় বাড়তি আয় হচ্ছে কৃষকদের।

এ উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ সারা বছরই সবুজে ছেয়ে থাকে। জমিগুলোতে তিন থেকে চারটি ফসল হওয়ায় আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ৩ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৪৪০ মেট্রিকটন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি এসব ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে গড়ে ৪ দশমিক ৩ থেকে ৬ দশমিক ৪ মেট্রিকটন। এর মধ্যে আগাম জাতের আমন ধান রয়েছে হাইব্রিড ও উফশি জাতের তেজগোল্ড, ব্রী – ৯০, বিনা – ১৭, সম্পাকাটরি,জাঁপাড়ি,ধানিগোল্ড সহ আরও বিভিন্ন জাত। উপজেলার খুটামারা ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন এলাকায় এই আগাম জাতের আমন ধান সবচেয়ে বেশি চাষারাদ হয়েছে।

শনিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় মাঠে মাঠে আগাম জাতের আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম পড়েছে। কেউ ধান কাটছে, কেউ আবার ধান কেটে কাঁধে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। কেউরা ধান মাড়াই করে বস্তায় ভরছেন। আবার অনেকে ধান কাটার পর আগাম আলু সহ শীতকালীন রবিশস্য চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এজন্য মাঠে কিশান কিশানীদের চরম ব্যাস্ততা, যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। অগ্রহায়ন নয়,নিষ্ফলা আশ্বিনে মঙ্গাজয়ী আগাম জাতের ধানের বাম্পার ফলন ও ভালো বাজার মূল্য কৃষক পরিবারে এনেছে সমৃদ্ধির হাসি। ধানের পাশাপাশি গো- খাদ্যের জন্য কাঁচা খড়ের ভালো ব্যবসা চলছে। চাহিদা থাকায় মাঠে মাঠে ধানের কাঁচা খড় কেনার জন্য ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এদিকে ধান কাটা মাড়াই শেষে তারা খড় কিনে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। অপর দিকে কৃষক মাঠের খড় বিক্রি করে কিছুটা জমি চাষের খরচ তুলছেন। বাজারে ধানের দামের সাথে খড়ের দাম বেশি পেয়ে বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন কৃষকেরা। এ বাড়তি আয়ের মাধ্যমে আলু সহ অন্যান্য রবি ফসল চাষে খরচ মেটাচ্ছেন কৃষক ।

খুটামারা ইউনিয়নের খালিশা খুটামারা গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর বলেন, এক সময় আগাম আলু চাষের জন্য জমি ফেলে রাখা হতো। এখন স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন আগাম জাতের ধান আবিষ্কার হওয়ায় জমি ফেলে রাখা হয় না। ধানের পর আগাম আলু চাষ করলে আলুর ফলন ভালো হয়, দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই জমি গুলোতে প্রতিবছর আগাম ধান, আলু, ভুট্টা সহ চার ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এতে করে আমরা লাভবান হচ্ছি।

কৃষক বেলাল জানান এ বছর তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান লাগিয়েছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে এক বিঘা জমির ধান কেটেছি। বাজারে দামও ভালো পেয়েছি।ধান কাটা শেষে এসব জমিতে আগাম আলু রোপন করবো।

উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন আহমেদ বলেন, কৃষকেরা আগাম জাতের ধান কাটা ও মাড়াই কাজ শুরু করেছে । ধান কাটার পর ওই জমিতে আলু রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন । এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। দাম ও পাচ্ছেন ভালো পাচ্ছেন তারা।