জাতীয়

গৌরীপুরে সাবেক মেয়রসহ ৭জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

গৌরীপুর প্রতিনিধি :ময়মনসিংহের গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও গৌরীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামসহ ৭জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ময়মনসিংহের বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে এ মামলা দায়ের করেন বিদ্যালয়ের অভিভাবক মো. মোস্তফা কামাল। মামলার বাদী বিদ্যালয়ের নবযোগদানকৃত প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলামের নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম ও বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে প্রধান শিক্ষক যাতে না করিতে পারে এ জন্য নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেছেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার (৭ অক্টোবর/২৪) বিজ্ঞ আদালত ১৫কার্য্য দিবসের মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) প্রদান করেন। শোকজ নোটিশ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, আমি ও বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক (সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) মো. হাবিবুর রহমান নোটিশ পেয়েছি। অন্যদের বিষয়ে জানা নেই।

মামলায় আসামী করা হয়েছে গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও গৌরীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম, সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ফারুক আহমেদ, আব্দুস সাত্তার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।

অপরদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তকে কেন্দ্র করে ‘গৌরীপুরে নিয়োগ বোর্ডের কর্মকর্তা তিনিই তদন্ত কর্মকর্তা’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৯ আগস্ট প্রকাশিত সংবাদে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। এবার সেই কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করে ‘বসের তদন্তের দায়িত্বভার দেয়া হয় তার অধিনস্ত কর্মকর্তা একাডেমিক সুপারভাইজার কমল কুমার রায়। এ তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাকিল আহমেদ।
এ প্রসঙ্গে একাডেমিক সুপারভাইজার কমল কুমার রায় বলেন, আমি শুধু প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করছি, নিয়োগ বোর্ডের কারা ছিলেন, তাদের নিয়ে তো আর তদন্ত হচ্ছে না। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত কাজ চলছে।

নিয়ম বর্হি:ভূতভাবে অর্থের বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ তুলে এ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে অভিযোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামছুজ্জামান দুর্জয়। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রথমে নিয়োগের দায়িত্বভার দেন নিয়োগবোর্ডের সদস্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে সরিয়ে তার অধিন্ত কর্মকর্তাকে তদন্তভার দেয়ায় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য মো. হাবিবুল ইসলাম খান শহিদ বলেন, যে নিয়োগ বোর্ডে তার উধ্বর্তন কর্মকর্তা ছিলেন। সেখানে সুষ্ট তদন্ত বিঘিœত হওয়ার শংকা রয়েছে।

এ দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২ আগস্ট সারাদেশে উত্তাল ও শত শত শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির দিনে নিয়োগ পরীক্ষা ও ৫ আগস্ট সারাদেশে সাধারণ ছুটির দিনে এ অবৈধ নিয়োগ বৈধ্যতা দিতে রেজুলেশান সৃজনের ঘটনায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গৌরীপুরে ৩জন নিহতের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় মাওহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলামকে আসামী করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বৈধ্য করতে বিদ্যালয়ের তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই একটি ফাঁকা ওয়েব সাইড করেন এ প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মো. হাবিবুর রহমান। তিনি ওই ওয়েব সাইডে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠের কোনো তথ্য আপলোড করেন নাই। শুধুমাত্র ‘একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।’ তবে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরবর্তীতে নিয়োগ পরীক্ষা ও ফলাফল সংক্রান্ত কোনো তথ্য ওয়েব সাইড ও নোটিশ বোর্ডে প্রদান করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মো. হাবিবুর রহমান জানান, দ্রুত নিয়োগ দেয়া নিয়ে কমিটির চাপে ছিলাম। তাই ২ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান পরিস্থিতিতেও নিয়োগ পরীক্ষা নিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওয়েব সাইড ছাড়া নিয়োগ নেয়া সম্ভব না। তাই তাড়াহুড়া অবস্থায় করা হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর পরীক্ষার তারিখ, লিখিত পরীক্ষার বা চুড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচিত ফলাফল বোর্ডে ও ওয়েব সাইডে দিতে হবে, সেটা আমার জানা ছিলো না।
আন্দোলনকারীরা বলেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ‘লাখ টাকায় বিদ্যালয়ের ফাঁকা (তথ্যউপাত্তবিহীন) ওয়েব সাইড বানিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ৩০লাখসহ ৩টি নিয়োগে অর্ধকোটি টাকা লুটে নিয়ে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য করেছে। দেশে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শ’শ শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছেন, সেই সময়ে মেধার স্থলে টাকার কোটার এখানে নিয়োগ হয়েছে, এ নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম জানান, যারা অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। নিয়োগ বিধিমালার বিধি-বিধান মেনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মহাপরিচালকের প্রতিনিধি’র উপস্থিতিতে তারাই প্রশ্ন করেছেন, পরীক্ষা নিয়েছেন। মেধা যাছাইয়ের ভিত্তিতে যিনি প্রথম হয়েছেন, তাকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে আন্দোলনকারীরা বলেন, এ বিদ্যালয়ে একের পর এক অনিয়ম হয়েছে। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিতে সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক সরকারকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যুৎসাহী সদস্য করা হয়েছে। এসব অবৈধ কমিটি অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরও অপসারণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মো. এনামুল হক সরকার জানান, তিনি এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সদস্য সচিব থাকা অবস্থাতেই অবসরে যাওয়ার পর থাকে বিদ্যুৎসাহী সদস্য নির্বাচিত করার আগাম সিদ্ধান্ত হয়েছে। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যিনি কমিটির সদস্য সচিব-তিনিই সেই কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য হওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা বিধিসম্মত নয়