জাতীয়

কিশোরগঞ্জে ১৫২৩টি কেন্দ্রে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম

আমিনুল হক সাদী,কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩ উপজেলায় ১৫২৩টি কেন্দ্রে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম। এ কার্যক্রমের আওতায় চালু রয়েছে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, কোরআন শিক্ষা এবং বয়স্কদের সহজ কোরআন শিক্ষা কর্মসূচি। জেলায় ১৫২৩টি কেন্দ্রে ৪৯ হাজার ৮শত ৮৫ জন শিক্ষার্থী পাঠদান করছে। প্রকল্পের ৫ বছর মেয়াদে প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানোর সুযোগ পাচ্ছে। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে ধর্মীয় শিক্ষক না থাকায় এ প্রকল্পের শিক্ষার্থীরা প্রাক প্রাথমিক কেন্দ্রে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পাচ্ছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪-৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাদান করা হয়। এ শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরে জেলায় ৬৬০টি প্রাক প্রাথমিক কেন্দ্র চালু রয়েছে।এসব কেন্দ্রে ৩০ জন করে মোট ১৯ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীদেরকে মৌলিক চেতনা নিয়ে লেখা ‘আমার প্রথম পড়া’ এবং ‘কায়দা ও দীনি শিক্ষা’ নামক দুটি বই পড়ানো হয়। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ৭-১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। সহজ কোরআন শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় জেলায় ৮৫১ কেন্দ্রে ৩৫জন করে ২৯৭৮৫ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে।

১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের জন্য জেলায় ২৫জন করে ১২টি কেন্দ্রে ৩০০ জন শিক্ষার্থীদেরকে বয়স্ক কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র চালু রয়েছে। বয়স্ক কোরআন শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের কয়েদীদের কোরআন শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া সরকারি শিশু পরিবারে কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম এবং জেলার উজানসহ দুর্গম হাওর অঞ্চলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র চালু রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন শিক্ষক নিয়োজিত আছেন। প্রত্যেক কেন্দ্রের শিক্ষক মাসিক সম্মানী ভাতা হিসেবে ৫হাজার টাকা পান। দুই ঈদে মাসিক বেতনের সমপরিমাণ দুটি বোনাস পান। এছাড়া জেলার প্রতিটি উপজেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত সাধারণ রিসোর্স সেন্টার ও মডেল রিসোর্স সেন্টার রয়েছে। এসব কেন্দ্র পরিদর্শন ও পরিচালনায় তদারকি করেন প্রতি উপজেলার সুপারভাইজার ও কেয়ারটেকারগণ। প্রতি কেন্দ্রে মান সম্মত পাঠদানের জন্য মাসিক সমন্বয়সভা ও শিক্ষকদের থেকে বাছাই করে মডেল শিক্ষকদের দিয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শিক্ষকদেরকে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলতে দুজন মাস্টার ট্টেইনার দিয়ে প্রতি মাসে ক্লাস্টার সাব ক্লাস্টার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

সদর উপজেলার চরপাড়া জামে মসজিদ কেন্দ্রের শিক্ষক মাও.মস্তোফা বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গণশিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুরা জীবনের প্রথম শিক্ষাটাই পবিত্র কুরআন শিক্ষার পেয়ে থাকে। মহিনন্দ গোয়ালাপাড়া জামে মসজিদ কেন্দ্রের শিক্ষক মাও. মোঃ আমিনুল হক বলেন, ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে শিশুরা। কয়েক যুগের এ শিক্ষা প্রকল্পটি রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত করার দাবী জানাই। সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের হাজীপুর মৌলভী জামে মসজিদের শিক্ষক মাও.এমরুল হাসান বলেন, আমাদের মসজিদে ইফার সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রে ত্রিশ জন শিক্ষার্থীকে কোরানুল কারিমে সবক দেওয়া হয়েছে। এতে ইফার দায়িত্বশীলগণসহ স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সুপারভাইজার হাফেজ মাও.একেএম মোস্তফা কামাল জানান, ‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ দেশের শিক্ষা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যুগোপযোগী ভূমিকা পালন করে আসছে। এ প্রকল্পে মসজিদের ইমামগণ মসজিদ কেন্দ্রের শিশু ও বয়স্ক শিক্ষার্থীদেরকে বাংলা, অংক, ইংরজী, আরবী, নৈতিকতা ও মূল্যবোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দান করছেন। সুবিধা বঞ্চিত স্থানে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার ও কোর্স সম্পন্নকারীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্র্তির হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে। পাশাপাশি ধর্মীয় মুল্যবোধ জাগ্রত হচ্ছে এবং নৈতিক শিক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালন করছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জেলা কার্যালয়ের ফিল্ড অফিসার মাও.ড.কামরুল হাসান বলেন, জেলায় প্রায় ৭ হাজার মসজিদ রয়েছে। এরমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ১৫২৩টি কেন্দ্র চালু রয়েছে। জেলার ২২ ভাগ মসজিদে কেন্দ্র চালু রয়েছে। এখনো গণশিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়েছে ৭৮ ভাগ মসজিদ। চাহিদানুযায়ী গণশিক্ষা কার্যক্রম আরও বাড়ানো দরকার। একটি মসজিদ একটি মক্তব রুপে প্রকল্প নেওয়া হলে শতভাগ মসজিদে শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন সহজ হতো।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ মহসিন খান জানান, ‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ প্রকল্প ইসলামিক ফাউন্ডেশন-এর একটি অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমুলক কর্মকান্ড ও শিক্ষা বিস্তারের কাজে মসজিদের ইমাম সাহেবদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সরকার ১৯৯৩ সালে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় প্রাক-প্রাথমিক এবং ঝরে পড়া (ড্রপ-আউট) কিশোর-কিশোরী ও অক্ষর জ্ঞানহীন বয়স্কদের জন্য ‘‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’’ এর কাজ শুরু করে। এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৭টি পর্যায় শেষ করে বর্তমানে ৮ম পর্যায়ে প্রকল্পটির কার্যক্রম অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

তিনি আরও জানান, মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো- কোমলমতি শিশুদের প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাদান, শিশুদের দেশ প্রেম ও জাতীয় চেতনা সম্পর্কে ধারনা দেয়া, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলা,নৈতিকতা, মূল্যবোধ,সততা এবং শিষ্টাচার বিষয়ক শিক্ষাদান প্রদান। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিভিন্ন কেন্দ্র নিয়মিত তদারকি করে থাকেন। প্রাক প্রাথমিক স্তরের শিশু শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজী,আরবী ও গণিতের প্রাথমিক জ্ঞান প্রদানের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হিসেবে গড়ে তোলা হয় বলে তিনি জানান।