আবেগের ঝোঁক, বাস্তবতার শোক!
প্রজন্ম বয়সের তুলনায় অনেকখানি এগিয়ে গেছে। ভুল পথে পা বাড়িয়েছে বহুজন। চোখের আড়াল হলেই বাবা-মা ভাবেন, সন্তান হারিয়ে গেছে কিংবা কোনো বিপদ হয়েছে। মেয়ে-ছেলে যে কারো সাথে পালিয়ে যেতে পারে এবং সেটা যে খুব অল্প বয়সেও পারে সে বিশ্বাস বাবা-মায়ের মধ্যে এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে অনেক ছেলে-মেয়ে ঘর ছাড়ে- কখনো বয়সের অস্থিরতায়, কখনো প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে। তখন মায়ের ক্যান্সার, বাবার সম্মান কিছুই মনে থাকে না। দায় কার? সমাজের? সামান্যই। অধিকাংশ দায় বাবা-মায়ের।
মেয়েটা শেষ পর্যন্ত বেঁচে আছে, ফিরছে- এটাই বাবা-মায়ের জন্য স্বস্তির সংবাদ। দেশবাসীর মধ্যে যে দুশ্চিন্তার পারদ বাড়ছিল সেটা এখন অনেকটাই কমেছে। কত মানুষকে সন্দেহ হয়েছিল, এলাকাকে দুষেছিল- সব ধোঁয়াশার কুয়াশা কেটে গেছে। বাবা-মা সন্তান হারালে কতটা বিহ্বলিত হয় তা কখনোই সন্তান বুঝবে না। যে বাবা-মা মেয়েকে হারিয়ে মৃত্যুপ্রায় হয়েছিল, সেই মেয়েটা যাদের ছেলের সাথে পালিয়েছিল সেই ছেলেটার বাবা-মা কি এই দুইদিনের ছেলের খবর জানতেন? কোথায় আছে- খুঁজেছিলেন?
বয়সটা ভুল করার। মেয়েটাও ভুল করেছে। শোধরাতে সময় দেওয়া উচিত। মেয়েটাকে যদি প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়, চেপে ধরা হয় তবে মেয়েটির এই সমাজে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অবস্থা থাকবে না। মেয়েটা না বুঝেই ভুল করেছে। মেয়েটি যদি ঠিকঠাক বুঝতো, পূর্ণ জ্ঞানে থাকতো তবে এই এক জীবনে সে একবারও পালানোর প্ল্যান করতো না। কিছুতেই না। যে বোঝে সে পালায় না। যে ভুল করে তাকে ভুল ধরিয়ে দিতে হয়। শুদ্ধ হতে সময় দিতে হয়।
মেয়েটির বয়স কত?- এমন প্রশ্ন অবান্তর। আপনার ঘরেও যদি সেই মেয়েটির কম বয়সের কোন কন্যা সন্তানও থাকে এবং অভিভাবক হিসেবে আপনি তাকে মোবাইল কিনে দেন অথবা বাবা/মা কিংবা অন্য কারো মোবাইল ব্যবহারের বাধাহীন সুযোগ পায় তবে যেকোনো বয়সের সন্তান অনেক কিছু বোঝে, অনেকের চাইতে বেশি বোঝে! শিশু সন্তানরা যে বিপথে যাচ্ছে এর পেছনে বাবা-মায়ের দায় সিংহভাগ।
ক্যারিয়ার গড়তে, সম্পদ জোগাতে কিংবা সংসার গোছাতে গিয়ে আমরা সন্তানদের সময় দেই না। সন্তান কার সাথে গল্প বলে, কাদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে কিংবা কোথায় আড্ডায় দেয়- অধিকাংশ অভিভাবকদের কাছে সে খোঁজ নাই। কারো সাথে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণে এক দুইদিনের পরিচয় যথেষ্ট নয়। মেয়েটা ঘরে ফিরেছে সেটাই স্বস্তির খবর। এবার সামাজিকতার অসামাজিক বিচারের কবর থেকে যাতে ওদেরকে রক্ষা করা হয়।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com