অন্যান্যঅর্থনীতিআন্তর্জাতিকজাতীয়

২০ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে ৬ দফা দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারী

রাজধানীতে অবস্থিত বিভিন্ন লোকাল গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা ঢাকা পোষাক প্রস্তুতকারী মজুরি বৃদ্ধি শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে মহাপরিদর্শক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। অদ্য (৯ ফেব্রুয়ারী) রবিবার, বেলা ১২ টায় বিজয়নগরের শ্রমভবনে অবস্থিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে যেয়ে সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ এ স্মারকলিপি প্রদান করেন। এর আগে সকাল ১০ টায় বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা পুরান ঢাকায় এক সমাবেশে মিলিত হয়। ঢাকা পোশাক প্রস্তুতকারী শ্রমিক সংঘের সভাপতি আহমেদ সুজনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন এবং সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মাহবুবুল আলম মানিক। সমাবেশ শেষে সহ¯্রাধিক শ্রমিকদের এক বিক্ষোভ মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরবর্তীতে ঢাকা কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান শেষে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের অধিদপ্তরের ঢাকা কার্যালয়ের উপমহাপরিদর্শক কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ মালিকদের প্রতি হুঁশিয়ারী প্রদান করে আগামি ২০ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আহবান জানান। ২০ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া না হলে ২২ ফেব্রুয়ারী পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারে অবস্থিত মালিক সমিতির কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশ করার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ। ঐ সমাবেশ থেকে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানান।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের আকাশ ছোঁয়া উর্ধ্বগতিতে ১০ বৎসর পূর্বে নির্ধারিত পিসরেট বা মজুরি দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা লোকাল গার্মেন্টস শ্রমিকদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে নিমজ্জিত লোকাল গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে, যা যে কোন সময় বিষ্ফোরিত হয়ে শিল্পে অচল অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় শ্রমিকরা বাঁচার মতো মজুরির দাবি জানাচ্ছে। নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৮/৯ মাস ধরে শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া রাখা হয়। এর ফলে শ্রমিকরা এক মানবেতর জীবন যাপন করছে। রমজান মাসে শ্রমিকদের গভীর রাত পর্যন্ত মালিকরা কাজ করতে বাধ্য করলেও কোন প্রকার টিফিন ভাতা প্রদান করে না। এমনকি কারখানায় শ্রমিকদের খাওয়ার পানিটুকু পর্যন্ত মালিকরা সরবরাহ করে না। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের জীবন মান দিন দিন নিচে নামায় শিল্পের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমনাবস্থায় শিল্পের গতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বেতন-ভাতার প্রস্তাবনাসহ ০৬ দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে উল্লেখিত দাবিসমূহ হচ্ছে- (১) শ্রম আইনের ৫ ও ৬ ধারা মোতাবেক প্রত্যেক শ্রমিককে অবিলম্বে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিসবুক প্রদান করতে হবে। (২) বাজারদরের সাথে সঙ্গতি রেখে লোকাল গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য বাঁচার মতো পিসরেট বা মজুরি নির্ধারন করতে হবে । (৩) ৮ ঘন্টার অতিরিক্ত কাজের দ্বিগুণ মজুরি প্রদান, এক মাসের মজুরির সমপরিমান বৎসরে দুটি উৎসব বোনাসসহ শ্রম আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। (৪) শ্রমিকদের নামমাত্র সপ্তাহ দিয়ে মজুরির টাকা মালিকদের পকেটে রাখার কু-প্রথা বন্ধ করতে হবে । (৫) আইন অনুযায়ী তারিখের মধ্যে মজুরী পরিশোধ, নারী শ্রমিকদের মজুরীর বৈষম্য দুর করা, রাত্রিকালীন অতিরিক্ত কাজের জন্য টিফিন ও নাইট এলাউন্স প্রদান করতে হবে। (৬) আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুযায়ী অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার দিতে হবে। (৭) বাজারদরের সাথে সঙ্গতিরেখে লোকাল গার্মেন্টস শ্রমিকদের পিসরেট নির্ধারণ করার দাবি জানানো হয়।

প্রধান কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানশেষে শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে পুরানা পল্টনে অবস্থিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের অধিদপ্তরের ঢাকা কার্যালয়ের উপমহাপরিদর্শক বরাবর স্মারকলিপির অনুলিপি প্রদান করা হয়। এছাড়াও স্মারকলিপির অনুলিপি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি