রোজা, সংযম ও ন্যায়ের পরীক্ষায় আমরা কোথায়?
দুনিয়ার কেউ দেখতো না অথচ রোজা রেখে এক ফোঁটা পানি পানকেও ভয় করলেন অথচ অন্যের হক কত অনায়াসে মেরে দিয়ে দিব্যি চলছেন। বলছেন বড় বড় নীতিকথা। কাজে ফাঁকি দিয়ে মালিকের থেকে মজুরি নিয়েছেন, ফাইল আটকিয়ে ঘুষ ধরেছেন কিংবা দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির মজমা বসিয়েছেন-এসবের জন্য একটুও ভয় হয় না? কর্মফলের জন্য আতঙ্ক অনুভব করেন না? কী কৈফিয়ত দিবেন?
অফিসের কাজ রেখে গল্প করেছেন, পড়ানোতে ফাঁকি দিয়েছেন কিংবা কারো অধিকার অনাদায়ি রেখেছেন-এসবের জন্যে একটুও আফসোস হয় না? প্রায়শ্চিত্তের বোধ জাগে না? সবকিছুর কৈফিয়ত যে একদিন দিতেই হবে, আপনার মনে কি শেষ দিবসের ভয়ও নাই? মানুষ তো চিরকাল বাঁচে না। ডুব দিয়ে পানি খেতে পারতেন, দূরে গিয়ে ভাত খেতে পারতেন কিংবা কাউকে না দেখিয়ে কতকিছু আহার করতে পারতেন! দেখিয়ে দেখিয়ে খেলেও আপনাকে আটকানোর সাধ্য কারো ছিল না। দুপুরের পর থেকে খুব কষ্ট হচ্ছিলো অথচ সংযমকে মাগরিব পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন। কেন? কোউ রোজাদার বলবে-সেই আশায়? কেউ বে-রোজদার বলবে-সেই লজ্জায়? কারন যদি আল্লাহ ভীতি হয়, যদি আল্লাহর আদেশ মানতে হয় তবে সেই আল্লাহ কাউকে ঠকাতে চরমভাবে নিষেধ করেছেন। কারো হক তথা অধিকার মেরে খেতে বারণ করেছেন। হারাম স্পর্শ করতে মানা করেছেন। সুদ-ঘুষ কিংবা দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। অন্যায়-পাপাচারে লিপ্ত হতে বারণ করেছেন-এসব আপনি জানেন না? অথচ রবের নিষেধ সত্ত্বেও সব করছেন। যে হক রবের তা লঙ্ঘন করলে রব ক্ষমা হয়তোবা করতে পারেন কিন্তু যে হক বান্দাহের তা নষ্ট করলে স্রষ্টাও ক্ষমা করবেন না; যতক্ষণে ভুক্তভোগী ক্ষমা না করেন। নামাজ-রোজার মতই হালালের সাথে মিশে থাকা এবং হারাম থেকে দূরে থাকা জীবদ্দশায় খুব জরুরি। কষ্ট করে সকাল-সন্ধ্যা উপোস থাকলাম অথচ ঘুষ-দুর্নীতি ছাড়লাম না, তারাবিহে শামিল হলাম কিন্তু দায়িত্বে ফাঁকি দিলাম-এর পরিণতি ভালো না। সামর্থ্যবানের জন্য রোজা যেমন ফরজ তেমনি হালাল-হারাম মেনে চলাও ফরজ। দুনিয়ার অ-কাজ জারি রেখে রোজা রাখা কুকুরের না খেয়ে উপোস থাকার মতোই। এতে পুণ্য-সওয়াব কী হবে জানি না!
ঘুষের টাকায় যদি ইফতারির বাজার হয়, সুদের টাকায় যদি পরিধেয় বস্ত্র হয় কিংবা দুর্নীতি থেকে প্রাপ্ত টাকায় যদি শরীরের বৃদ্ধি হয়-তবে তওবা করুন। পাপাচার ছেড়ে দিন। অল্প আমল কাফি যদি ইমান শুদ্ধ হয়। দুনিয়ার পাপাচারে লিপ্ত থেকে খোদার ইবাদাতে মশগুল হলে তা কতটুকু তলায় পড়বে-খোদা জানেন। আমাদের না খাওয়া, কষ্ট করা, রাতে ইবাদত করা ফলপ্রসূ হবে যদি জীবিকায় অবৈধ সম্পদের দাগ না লাগে। এক ফোঁটা পানি পান না করার মধ্যে যে ভীতি তা যাতে আমাদের জীবনাচারেও ফুটে উঠে। আমরা খোদাকে ভয় পাই এবং খোদায়ী নীতি রীতি যাতে মেনে চলি। মিথ্যা না বলা, কারো হক না মারা কিংবা কাউকে ব্যথা না দেওয়াও ইবাদত। সদাচরণ ও সচ্চরিত্র মানুষের সবচেয়ে সুন্দর অলঙ্কার। অবৈধ সম্পদ যদি শরীরে প্রবেশ করে তবে মনের পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের জীবন ধর্ম প্রদর্শিত পথে পরিচালিত হোক। সততার জীবনের সাথে অন্য কিছুই তুল্য নয়। কোনো লোভ, কোনো মোহে যাতে অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিই। কারো হক নষ্ট না করি এবং অন্যায়ভাবে কাউকে আঘাত না করি। রমজানের বরকত তখনই অর্থবহ হবে যখন রোজাদার কারো অভিশাপ কিংবা দীর্ঘশ্বাসে না থাকবেন। আইল ঠেলে, পরের নামে বদনাম করে কিংবা মনে অহংকার পুষে কেউ খোদার রহমত প্রাপ্ত হবে না।
বরং যাদের নিন্দা করা হবে,যাদেরকে আঘাত করা হবে কিংবা যারা কষ্ট সহ্য করবেন-বেলা শেষে তারাই উপকৃত হবে। প্রভুর প্রভূত করুণা পাবেন। কাজেই জীবনাচার ধর্ম হয়ে উঠুক। যদি সত্যিই আমরা খোদার ভয় রাখি, তবে শুধু না খেয়ে থাকার মধ্যেই নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর আদেশ মানার মধ্যেই প্রকৃত রমজানের সৌন্দর্য নিহিত। সততা, ন্যায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা ও মানবতার প্রতি সম্মানই পারে আমাদের সত্যিকারের মুক্তির পথ দেখাতে।
রাজু আহমেদ
raju69alive@gmail.com