সোমেশ্বরী নদী থেকে নির্বিচারে বালু লুট, হুমকির মুখে পরিবেশের ভারসাম্য
ঝিনাইগাতি প্রতিনিধি: শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু লুটপাটের মহোৎসব চলছে। স্থানীয় বালুদস্যুরা শতাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ইজারা বহির্ভূত এলাকা, বনবিভাগের সামাজিক বনের ক্ষতি সাধন করে অবৈধভাবে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা মূল্যের বালু লুটপাট করা হচ্ছে। ইজারা বহির্ভূত এলাকা, নদীর পাড় ভেঙে ও নদীর তলদেশ থেকে ৮০/৯০ ফুট গর্ত করে, বনবিভাগের সামাজিক বনের ক্ষতি সাধন করে নির্বিচারে বালু লুটপাট করা হচ্ছে। ফলে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য হুমকি সম্মুখীন হয়ে পরছে।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকোচা বালুমহালের মৌজায় ৭.১৭ একর এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেয়া হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক বছর মেয়াদে বালু মহালটির ইজারা পান শ্রীবরদী উপজেলার সামীম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আক্তার হোসেন। বাংলা ১৪৩১ সালের ১ বৈশাখ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত বালু উত্তোলন মেয়াদ রয়েছে। তাওয়াকোচা গ্রামের ইউপি সদস্য মোঃ রহমত আলীসহ গ্রামবাসীরা জানান, ৭ একর এলাকার সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকোচা বালু মহালটিতে ১থেকে ২ মাস বালু উত্তোলনের পর সেখানে আর বালু নেই। পরে ভরবছর ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে নির্বিচারে বালু লুটপাট করা হচ্ছে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে প্রত্যক্ষ করা গেছে, শুধু তাওয়াকোচা মৌজায় ৭ একর এলাকা থেকে বালু উত্তোলন না করে বহির্ভূত এলাকা রাঙা যান, খারামুরা, হালুয়াহাটি,বালিজুরি, জোকাকুড়া, আয়নাপুর, বাগেরভিটা, কালঘোষা নদীর বাঁকাকুড়া, গান্দিগাঁও, মালিটিলা, হালচাটি গজনী, শীলঝুড়া, মঙ্গলঝুড়া ও কর্ণঝোড়া নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিট্রাক বালু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। বর্তমানে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক বালু লুটপাট করা হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন কোটি টাকা মূল্যের বালু লুটপাট করা হচ্ছে। গারো পাহাড়ের বালু লুটপাট বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে বালু শ্রমিকদের কারাদন্ড। করা হচ্ছে জরিমানা। ভাংচুর করা হচ্ছে বালু উত্তোলন যন্ত্র। কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না বালু লুটপাট। একদিকে চলছে অভিযান। অন্যদিকে চলছে বালু লুটপাট। নির্বিচারে বালু লুটপাটের কারনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পরেছে নদীর পাড়, আবাদি জমি, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সামাজিক বন। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মক ভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পরেছে। অন্যদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয় থেকে।
বন বিভাগের তাওয়াকোচা ফরেষ্ট বিট কর্মকর্তা ইফাদ মোর্শেদ বলেন, নদীর পাড় ভেঙে সামাজিক বনের ক্ষতি সাধন করে বালু লুটপাট বন্ধে বনবিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ইজারাদারকে কারন দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। অবৈধভাবে বালু লুটপাটের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করে পত্রও প্রেরন করা হয়েছে। কিন্তু বালু লুটপাট বন্ধ হয়নি।
বালু মহালের ইজারাদার সামীম আহমেদ বলেন বালু উত্তোলনকারিরা তাদের কথায় কোন কর্ণপাত করে না। তিনি বলেন আপনারা লেখালেখি করেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) অনিন্দা রানী ভৌমিক বলেন অবৈধ বালু লুটপাট বন্ধে শুধু ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে সম্ভব না।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুর রহমান তরফদার বলেন, অবৈধ বালু লুটপাট বন্ধে সেনাবাহীনি, সীমান্তের বিজিবি, পুলিশ ও বন বিভাগের লোকজনসহ সুধী সমাজকে এগিয়ে না এলে বালু লুটপাট বন্ধ করা সম্ভব না। তিনি বালু লুটপাট বন্ধে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।